×

জাতীয়

দোজখের দরজা খুলে দেয়া হলো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২১, ০৮:২০ এএম

পরাধীন ব্রিটিশ-ভারত থেকে পাকিস্তানের কালো অধ্যায় পেরিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। এই মহান অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো নানা ঘটনা, যার কারিগর হিসেবে কেউ আখ্যায়িত হয়েছেন নায়কের অভিধায়; কেউবা আবিভর্‚ত হয়েছেন খলনায়কের চরিত্রে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সেসব ঘটনা ও তার নায়ক-খলনায়কদের কার কি ভূমিকা, তাই নিয়েই অধ্যাপক আবু সাইয়িদের গ্রন্থ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’। সম্প্রতি ভোরের কাগজ প্রকাশন থেকে বের হয়েছে বইটি। এ বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে ভোরের কাগজের পাঠকদের জন্য।

রাজারবাগ, পিলখানার প্রতিরোধ স্তব্ধ করে দেয়া হলো। অন্যত্র গোলাগুলি ও আগুন সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হলো। রাত ২টায় জগন্নাথ ও ইকবাল হল থেকে আসা প্রতিরোধ ৪টার মধ্যে প্রতিহত করা হলো। রক্ত, লাশ আর ধর্ষিতাদের আর্তনাদে ঢাকা নীরব।

নির্ধারিত সময়ের আগেই আক্রমণ শুরু হয়ে গেল। নির্ধারিত সময় রক্ষার আর কোনো বাধ্যবাধকতা থাকল না। দোজখের দরজা খুলে দেয়া হলো। প্রথম গোলাগুলি চালানোর পরপরই পাকিস্তান রেডিওর পাশাপাশি ওয়ারলেস থেকে শেখ মুজিবের স্বাধীন বাংলাদেশ ঘোষণা শোনা গেল। স্টপ ফায়ারিং : স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের এক প্ল্যাটুন কমান্ড দিয়ে ৩২ নং বাড়ি থেকে শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করা হলো। গ্রেপ্তারকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে বললেন, স্টপ ফায়ারিং। তাকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হলো। চারদিকে তখন গৃহযুদ্ধ চলছে। আগুন। বিকট আওয়াজ। আর্তনাদ। স্লোগান, প্রতিরোধ। রকেট লাঞ্চার, রাইফেল, মর্টার ও আগুনে বোমার আঘাতে ঢাকায় মার্চের চাঁদের ও নক্ষত্রের স্নিগ্ধ আলো কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেল।

রাজারবাগ পুলিশ, পিলখানার ইপিআর প্রতিরোধ স্তব্ধ করে দেয়া হলো। অন্যত্র গোলাগুলির প্রচণ্ড আওয়াজ ও আগুন লাগিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হলো। রাত ২টার সময় সংবাদ এলো- জগন্নাথ হল ও ইকবাল হল থেকে শক্ত প্রতিরোধ আসছে। রকেট লাঞ্চার, রিকোয়েললেস রাইফেল, মর্টার দিয়ে আক্রমণ করে দুই ঘণ্টার মধ্যে এলাকা সম্পূর্ণভাবে দখল করার জন্য কড়াভাবে আদেশ দেয়া হলো। রাত ৪টার মধ্যে ঢাকার প্রতিরোধ প্রতিহত করা হলো। রক্ত। লাশ। আর ধর্ষিতাদের আর্তনাদ। নৃশংসতা। ঢাকা নীরব। নিথর। ২৪ মার্চ হতে পিআইর বিমানে পশ্চিম পাকিস্তানি নেতারা ঢাকা ত্যাগ করতে থাকেন। জেনারেল ফরমান আলী ও জেনারেল খাদিম রাজা দুটি হেলিকাপ্টারে করে ঢাকার বাইরে ব্রিগেড কমান্ডারদের অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে ব্রিফ করার জন্য বেরিয়ে পড়েন।

সামরিক বাহিনীর বটল গ্রিন কালারের একটি হেলিকপ্টার নিয়ে জেনারেল খাদিম রাজা চট্টগ্রাম নামলেন। বললেন, জয়দেবপুর সেকেন্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে এক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তার জন্য পাপা টাইগার হিসেবে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে জয়দেবপুর যাওয়া বিশেষ প্রয়োজন। ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে ঢাকায় নিয়ে আসা হলো। তাকে নজরবন্দি রাখা হলো। চট্টগ্রামের দায়িত্ব দেয়া হলো লে. কর্নেল ফাতমীর ওপর এবং ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফীকে দায়িত্ব নেয়ার জন্য অর্ডার দেয়া হলো। তার আসতে কয়েক দিন সময় লাগবে। কেননা তিনি তখন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে। কিন্তু তার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বেই ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের গ্রিন সিগন্যাল চলে এল। তখন চট্টগ্রামে ইবিআর, ইপিআর, নতুন ইবিআর সিও পুলিশ মিলিয়ে বাঙালির সশস্ত্র শক্তি প্রায় ২০ হাজার। অন্যদিকে, চট্টগ্রামে বিশ বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্য সংখ্যা মাত্র ৬০০ জন।

এতো বড় সৈন্য শক্তি হাতে থাকা সত্তে¡ও স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদানের পূর্ব ইচ্ছা, পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত এবং সমন্বয়ের অভাবে চট্টগ্রাম দখলে রাখা সম্ভব হয়নি। এমনকি এই বিরাট শক্তি সমন্বয়ে যেভাবে প্রতিরোধ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিল তা হয়নি। ক্যাপ্টেন রফিক ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে জঙ্গি জনশক্তি তৈরি হয়েছিল সুষ্ঠু সামরিক নেতৃত্বের অভাবে তাদের দ্বারা কার্যকর ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। তবুও চট্টগ্রামের যুদ্ধ পাকিস্তানি সামরিক জেনারেলদের বিব্রত ও ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল। রিজার্ভ পুলিশ লাইনে ২০ হাজার রাইফেল রক্ষিত ছিল, জনগণ তার কিছু অংশ নিজের হাতে তুলে নেয়।

আগামীকাল প্রকাশিত হবে ‘প্রতিরোধ ও জনযুদ্ধ’ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App