×

অপরাধ

নতুন যে কৌশলে ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২১, ০৭:১১ পিএম

নতুন যে কৌশলে ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা

আটককৃত আবদুর রহমান ও মো. কবির হোসেন। ছবি: ভোরের কাগজ

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন সুভাষ কুমার সরকার ওরফে আবদুর রহমান। প্রতি মাসে যেকোনো সময় অজ্ঞাত লোক এসে বাসায় পৌঁছে দেয় ইয়াবা। এরপর টেকনাফ থেকে মূলহোতা কখনো বিভিন্ন অ্যাপস, আবার কখনো ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার থেকে কল দিয়ে ইয়াবা পৌছে দেয়ার ঠিকানা দেয়।

কিন্তু কার কাছে ইয়াবাগুলো দিবে সেই নাম বা ফোন নাম্বার দেয়া হয়না। ইয়াবা নিয়ে সঠিক ঠিকানায় সময় মতো পৌঁছালে অজ্ঞাত লোক এসে ইয়াবাগুলো নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে বুঝিয়ে দেয় ইয়াবার পরিবহন খরচ। এভাবে ইয়াবা পৌঁছে দিলে রাজধানীর মধ্যে প্রতি হাজার ইয়াবার জন্য মেলে ১ হাজার টাকা, আর ঢাকার বাইরে দূরত্ব বুঝে প্রতি হাজার ইয়াবার জন্য মেলে ২-৩ হাজার টাকা।

দীর্ঘদিন ধরে আবদুর রহমান এভাবে ইয়াবা ছড়িয়ে দিলেও জানেনা মূল ব্যবসায়ীর আসল নাম ঠিকানা। এমনকি কোন এলাকায় কার কাছে ইয়াবা পৌঁছে দিচ্ছে তাও জানেনা। শুধুমাত্র পরিবহন করে হাজার হাজার টাকা আয় হওয়ায় কাজটি করে যেতেন তিনি।

এই কৌশলটিই অবলম্বন করে রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ইয়াবা। ফলে মূলহোতা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। থামানো যাচ্ছে না ইয়াবার স্রোত। উল্টো মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এক সাথে বড় চালান বেড়ে যাওয়ার ঘটনায়।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনীর ১ নম্বর গেট এলাকা থেকে ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আবদুর রহমান ও মো. কবির হোসেন নামে দুই ইয়াবা সরবারহকারীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগ।

এ বিষয়ে মতিঝিল থানায় মামলা দায়েরের পর তাদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইয়াবা ব্যবসার এমন কৌশল সম্পর্কে জানতে পেরেছে ডিবি। আসামিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মূলহোতার নাম কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকার মফিজ নামে জানতে পারলেও বাস্তবে এ নামের কারো হদিস পাচ্ছে না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

ডিবির দাবি, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা যে কৌশলে সারাদেশে ইয়াবা ছড়িয়ে দিচ্ছে তাতে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা প্রায় অসম্ভব। ধরা পড়বে শুধু বহনকারী বা সরবারহকারীরা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টেকনাফ থেকে বিভিন্ন বহনকারীদের মাধ্যমে ইয়াবার চালান পৌঁছে দেয়া হতো আবদুর রহমানের কাছে। পরে সে ইয়াবাগুলো নিজ বাসায় রেখে দিতো। মূলহোতা বিভিন্ন মাধ্যমে ঠিকানা পাঠিয়ে ইয়াবা পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করতো। বেশিরভাগ চালান রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা এবং এর আশপাশ এলাকা যেমন গাজীপুর ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন ঠিকানায় পাঠানো হতো।

রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছে, রাজধানীর মধ্যে প্রতি হাজার ইয়াবা পৌঁছে দিতে তারা ১ হাজার টাকা করে নিতো। রাজধানীর বাইরে গাজীপুর ও মানিকগঞ্জে পৌঁছে দিতে প্রতি হাজারে নিতো ২-৩ হাজার টাকা। কার কাছ থেকে ইয়াবা আসছে আর কার কাছে দিয়ে আসতো এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারেনি তারা।

শুধুমাত্র যে ঠিকানাগুলোতে ইয়াবা পৌঁছে দিয়ে আসতো সেই ঠিকানাগুলোর নাম বলতে পেরেছে। তবে, এক ঠিকানায় কখনো দুবার ইয়াবা দিতে যায়নি তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া ডিবির মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ভোরের কাগজ লাইভকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মতিঝিলের টিএন্ডটি কলোনী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ওই দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করে শুক্রবার তাদেরকে আদালতে পাঠানো হলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। আমরা মূলহোতাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।

মামলার ১ নম্বর আসামি আবদুর রহমানের আরেক নাম সুভাষ কেন? জানতে চাইলে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, আগে হিন্দু ধর্মালম্বী থাকলেও সম্প্রতি সে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছে বলে জানিয়েছে। ধর্ম পরিবর্তনের কোনো প্রমান দিতে না পারলেও ইসলাম ধর্ম গ্রহন করার পর তার নাম আবদুর রহমান রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App