×

অর্থনীতি

এলডিসি-উত্তর সহায়ক ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২১, ০৬:৩৮ পিএম

এলডিসি-উত্তর সহায়ক ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি

ভাচর্য়াল আলোচনা সভা

দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাতা চলামান রাখার লক্ষ্যে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষন ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ, শুল্ক ও ভ্যাট আহরণ ব্যবস্থার সংষ্কার ও যুগোপযোগীকরণ, স্থানীয় বেকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নতি, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে এডিআর ব্যবস্থার ব্যবহার বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ সুযোগ তৈরি, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা সহায়তা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বোপরি কোভিড মহামারী ও এলডিসি উত্তর সময়ে জন্য সহায়ক ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন খুবই জরুরি বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।

শনিবার (৭ আগস্ট) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারি দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব মন্তব্য করেন দেশের বিশিষ্টজনরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ওয়েবিনারে যুক্ত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, এবং ইস্ট ওয়েস্ট বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশ নেন।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। এছাড়াও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)’র মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন, পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট (পিআরআই)’র চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)’র পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ প্রমুখ ওয়েবিনারের নির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন।

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন এবং প্রবৃদ্ধি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার ও বেসরকারীখাত একযোগে নিরলসভাবে কাজ করছে এবং অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ একান্ত অপরিহার্য বলে, মত প্রকাশ করেন। তিনি জানান, বর্তমান সরকার অর্থনীতির পাশাপাশি সমাজের সব স্তরের জনগনের সার্বিক উন্নয়নের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, কর ও শুল্কসহ অন্যান্য নীতিতে সংষ্কার ও যুগোপযোগীকরণে ক্ষেত্রে দেশের বেসরকারীখাতের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিবে। তিনি আরো বলেন, দেশের জনগনকে করোনা মহামারীর থেকে সুরক্ষা দিতে টিকা দেয়া কার্যক্রম গ্রামীণ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করেছে।

সম্মানিত অতিথি’র বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বিবিএস’র তথ্য মতে, করোনা মহামারীর কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩ দমমিক ৫১ শতাংশ, তবে ২০২১ সালে যা ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি জিডিপিতে করের অবদান বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন এবং বিশেষকরে জিডিপে করের অবদান বৃদ্ধি এবং পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণে বাংলাদেশ যথাক্রমে নেপাল ও ভিয়েতনাম কে অনুসরণ করে, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংষ্কার দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার আহ্বান জানান।

রিজওয়ান রাহমান তার প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর নানাবিধ চ্যালেঞ্জ থাকা সত্বেও দেশের অর্থনীতি গত ৬ মাসে মোটামুটি সঠিক পথেই পরিচালিত হচ্ছে এবং ২০২৬ ও ২০৪১ সালের প্রাক্কলিত লক্ষমাত্রা অর্জনে আমাদের সরকারি ও বেসারকারিখাতকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, মহামারীর কারণে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার ৩৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ৩৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে, দারিদ্রের হার ৯ শতাংশ বেড়ে ২৯ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে এবং ইতোমধ্যে প্রায় ২ দশমিক ২৬ মিলিয়ন জনগন কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছেন। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ২০২৬ সালে স্বল্পন্নোত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের আমাদের রপ্তানি প্রায় ৪-৬ বিলিয়ন কমে হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এমতাবস্থায় অর্থনৈতিক পুনঃরুদ্ধারই বিষয়টিকে আমাদের সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। রিজওয়ান রাহমান জানান, জিডিপিতে করের অবদান বাড়ানোর পাশাপাশি করের হার বাড়াতে হলে, দেশের শুল্ক ও ভ্যাট আহরণ ব্যবস্থার সম্পূর্ণ অটোমেশন খুবই জরুরি। তিনি আরো বলেন, করোনা মহামারীর কারণে আমাদের সিএমএসএমই খাত মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং এখাতের উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা সহায়তা পাওয়া নিশ্চিতকরণ, সহায়ক নীতি সহায়তা প্রদান, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন এবং ঋণ প্রদানের সময়সীমা অন্তত ৩ বছর নির্ধারনের প্রস্তাব করেন, একই সাথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এখাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্নের আহ্বান জানান। দেশের মানুষকে আরো উন্নত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে সরকারকে আরো বেশি হারে বিনিয়োগ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাত সম্পর্কিত গবেষণা ও উন্নয়ন, বায়োটেকনোলজি ও মহামারী নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি খাতে আরো বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।

পিআরআই’র চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, সরকার ও বেসরকারীখাতের সমন্বয়ের ফলেই আমাদের অর্থনীতি আজকে এ পর্যায়ে এসেছে পৌঁছেছে, তবে বিনিয়োগকারী ও উৎপাদনকারীদের স্বার্থ বিবেচনার পাশাপাশি ভোক্তাদের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান, যা অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হয়ে থাকে। বিআইডিএস’র মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, কৃষিখাত, উৎপাদনখাত এবং সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে উন্নীত করেছে, তবে এলডিসি পরবর্তী সময়ের জন্য দেশের কর ও শুল্ক ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন, সংষ্কার, জিডিপিতে করের আনুপাতিক অবদান বৃদ্ধি এবং ব্যাংক খাতের খেলাপী ঋণ হ্রাসকরণ প্রভৃতি বিষয়সমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তোরণ আমাদের রপ্তানির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তবে অতীতে অন্যান্য দেশগুলো বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো, রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং এফটিএ ও অন্যান্য বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে তা মোকাবেলা করেছে, তবে এজন্য সরকারকে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, এলডিসি উত্তর সময়ের জন্য নেগোশিয়েশন সক্ষমতা বাড়ানো খুবই জরুরী, সেই সাথে গ্রীণ ইনভেস্টমেন্ট এবং গ্রীণ ইনিশিয়েটিভের উপর প্রধান্য দেওয়ার জন্য সরকারি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান। ডিসিসিআই উর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এন কে এ মবিন, এফসিএস, এফসিএ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এ সময় ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ এবং প্রাক্তন সভাপতি রাশেদ মাকসুদ খান উক্ত ওয়েবিনারে যোগদান করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App