×

জাতীয়

ফুঁসছে নদনদী, আগামী সপ্তাহে বন্যার আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২১, ০৮:২৫ এএম

ফুঁসছে নদনদী, আগামী সপ্তাহে বন্যার আশঙ্কা

আগাম সপ্তাহ থেকেই বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভারতের বন্যার পানিতে ফুঁসে উঠেছে ব্রক্ষ্মপুত্র ও যমুনা। ছবি: ভোরের কাগজ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ক্রমাগত বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশেও বৃষ্টি হচ্ছে। গোটা এলাকাজুড়ে বৃষ্টি এবং উজান থেকে ভাটিতে নেমে আসা পানির কারণে বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনাসহ দেশের প্রধান প্রধান নদনদীর পানি বাড়ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকার ফলে আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বন্যাকবলিত হতে পারে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, কয়েকটি নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কোনো কোনো নদীর পানি স্থিতিশীল থেকে আবার বাড়তে পারে। আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি অথবা শেষ দিকে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোন কোন এলাকা বন্যাকবলিত হতে পারে, তা আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে পরিষ্কার জানা যাবে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি বাড়ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় বাড়তে পারে। এছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার মনু ছাড়া সব প্রধান নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী এবং ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে এখনো কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নওগাঁ এই ১৭ জেলার ২৭টি পয়েন্টে নদনদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহে উজানের অববাহিকার অনেক স্থানেই মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপর সক্রিয় এবং বাংলাদেশের অন্যত্র তা মোটামুটি সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে।

আগস্টে বাংলাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি বর্ষাকালীন নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উন্নতি হয়ে মধ্যভাগ নাগাদ স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। আবারো বন্যা আসছে, সরকারের প্রস্তুতি কী, জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, দুর্যোগে কারো হাত নাই। যে কোনো দুর্যোগে সব ধরনের সহায়তা নিয়ে জনগণের পাশে থাকা সরকারের দায়িত্ব। সরকার সেই দায়িত্ব পালনে পিছপা হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের সক্ষমতা রয়েছে। যতদিন প্রয়োজন হবে ততদিন দুর্গত মানুষের পাশে সব ধরনের সহায়তা নিয়ে সরকার থাকবে। ঘরবাড়ির ক্ষতি হলে সেগুলো মেরামতও করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, তাদের পর্যবেক্ষণাধীন বিভিন্ন নদনদীর ১০৯টি স্টেশনের মধ্যে পানির সমতল বেড়েছে ৬৭টিতে। কমেছে ৩৮ স্টেশনে পানির সমতল। অপরিবর্তিত আছে তিনটি স্টেশনের পানির সমতল। আর একটির তথ্য এখনো সংগ্রহ শুরু হয়নি।

এদিকে বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সিলেটে- যা ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে যশোরে, ৭০ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটিতে ৫৫, চুয়াডাঙ্গায় ৩৮, বদলগাছীতে ২৭, বগুড়ায় ২৬, রাজশাহীতে ৩৪, শ্রীমঙ্গলে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App