×

জাতীয়

বিপাকে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক মালিকরা : মরিচা ধরেছে রাইডে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২১, ০৯:০১ এএম

বিপাকে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক মালিকরা : মরিচা ধরেছে রাইডে

করোনা মহামারিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে অ্যামিউজমেন্ট পার্কগুলো। ছবি: ভোরের কাগজ

এক সময় সব বয়সের মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকত যে এলাকা, এখন সেখানে সুনসান নীরবতা। সন্ধ্যা হলেই যেখানে ঝলমলিয়ে উঠত নানা রঙের আলো, এখন সেখানে অন্ধকার নিয়ে রাত নামে। এক বছরের বেশি সময় ধরে করোনার বিধিনিষেধে মুখথুবড়ে পড়েছে দেশের অ্যামিউজমেন্ট বা থিম পার্কগুলো। মরিচা ধরেছে নান্দনিক সব রাইডে। মাসের পর মাস বেতন না পাওয়া কর্মীদের ঘরে এখন চাপা কান্না। ভালো নেই উদ্যোক্তারাও।

রাজধানীর শ্যামপুরে বিআইডব্লিউটিএর ইকোপার্কের কর্মী সবুজ ইসলাম জানান, পার্কটি বন্ধ থাকায় নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া প্রায় সবাইকেই ছুটি দেয়া হয়েছে। এখানে ৪৫ থেকে ৫০ জন কর্মী কাজ করতেন। তাদের অনেকে বেতন পাননি ৭-৮ মাস। অনেকে গ্রামে চলে গেছেন। কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলছে তাদের। তিনি বলেন, মালিকদের ওপর চাপ দেয়ারও কোনো উপায় নেই। কারণ গত এক বছরে ঈদ, পূজা-পার্বণ, বিজয় দিবসসহ আকর্ষণীয় দিনগুলোয় পার্ক খোলা রাখা যায়নি। মালিকদের আয় নেই। আয় না থাকলে তারা বেতন দেবেন কীভাবে। একই অবস্থা দেশের সব থিম পার্কেরই। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে সরকার লকডাউন, বিধিনিষেধ ও পরবর্তী সময়ে কঠোর লকডাউনের নামে কয়েক দফা প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে পার্কগুলোকে বন্ধ, আবার কখনো পরিহার করার কথা বলা হয়।

কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, যখন পার্কগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশনা ছিল না, তখনও স্থানীয় জেলা প্রশাসন পার্কগুলো খুলতে দেয়নি। যদিও স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন, নৌ, বিমান, দোকানপাট, কলকারখানা- সবই একপর্যায়ে খুলে দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যামিউজমেন্ট পার্কস অ্যান্ড অ্যাট্রাকশনসের (বাপা) সমন্বয়ক ও কনকর্ড গ্রুপের বিপণন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক অনুপ কুমার সরকার বলেন, করোনার বিধিনিষেধের কারণে এ খাতটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই লাখের বেশি কর্মী এবং প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে এখানে। দুই দফা মিলিয়ে প্রায় এক বছর ধরে পার্কগুলো বন্ধ। অনেক মালিকই কর্মীদের বেতন দিতে পারছেন না। কারণ আয় নেই। উল্টো জরুরি অনেক খরচ চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের। রাইড ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ না করলে সব নষ্ট হয়ে যাবে। বিদ্যুতের ন্যূনতম বিল দিতে হয়। রয়েছে ব্যাংক ঋণের বোঝা। সব মিলিয়ে একটা চরম দুঃসময় পার করছি আমরা।

অনুপ কুমার আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। গাদাগাদি করে ফেরি ও লঞ্চে যাত্রী পারাপার হতে আমরা দেখেছি। এমনকি কক্সবাজার বা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতেও মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। কিন্তু পার্কগুলোর ক্ষেত্রে এ সমস্যা এড়ানো সম্ভব। তিনি বলেন, আমরা মূল ফটক বা টিকেট বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করেই ধারণক্ষমতার চেয়ে কম লোকজন ভেতরে প্রবেশ করাতে পারব। ভেতরেও আমাদের নিরাপত্তাকর্মীরা বিষয়টি নজরদারি করতে পারবেন। তাই আগামী ১১ আগস্ট থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পার্কগুলো খুলে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

নরসিংদীর ড্রিম হলিডে পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা বলেন, আমরা কঠোর লকডাউনে পার্ক খুলে দেয়ার কথা বলছি না। কিন্তু যখন অন্য খাতগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়া হয়, তখন পার্কও খোলা উচিত। নইলে এত বিনিয়োগ ও লোকজন বাঁচবে কীভাবে। তিনি বলেন, সরকার ৪ শতাংশ সুদে যে প্রণোদনার ঋণ দিয়েছে, সেটাও তো পরিশোধ করতে হবে। পার্ক না খুললে টাকা আসবে কোথা থেকে।

বিষয়গুলো নজরে আনতে গত ১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেয় পার্ক মালিকদের সংগঠন। বাপা সভাপতি শাহরিয়ার কামাল স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে দুই দফা বন্ধের কারণে বিশাল অঙ্কের ক্ষতির কথা তুলে ধরা হয়। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে আগামী তিন বছরের জন্য পার্কগুলোর করপোরেট ট্যাক্স, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, যন্ত্রপাতি সংযোজন ও আমদানিতে কর মওকুফসহ বিভিন্ন সহায়তার আবেদন জানায় সংগঠনটি। পর্যটন বোর্ড ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে পার্ক খুলে দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, ৫০ শতাংশের কম দর্শনার্থী প্রবেশ, টিকেট সংগ্রহের আগেই জীবাণুমুক্ত করা, শরীরের তাপমাত্রা মাপাসহ অন্যান্য বিষয় মালিকপক্ষ নিশ্চিত করবে।

এর আগে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবকেও চিঠি দেয় বাপা। এ প্রসঙ্গে বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় আমরা পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি। এখানকার বিনিয়োগ ও কর্মীদের জীবন-জীবিকা সুরক্ষিত করতে যা করা দরকার, আমরা তা-ই করছি। তিনি বলেন, পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দিতে এরই মধ্যে সুপারিশসহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই শর্ত সাপেক্ষে পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো খুলে দেয়া যাবে। তবে সবার আগে দেশের মানুষের সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য দিতে হবে বলে জানান তিনি।

বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অণুজীব বিজ্ঞানী ড. সরোয়ার হোসেনের মতে, বিশ্ব থেকে করোনা সহজে দূর হবে না। তাই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে আমাদের। তিনি বলেন, লকডাউন দিয়ে বা সব কিছু বন্ধ করে সমাধান খুঁজলে আমাদের মতো দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়বে। যদি মানুষের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক ব্যবহার ও হাত জীবাণুমুক্ত করা নিশ্চিত করা যায়, তবে করোনার চেইন বা বিস্তার প্রক্রিয়া এমনিতেই ভেঙে যাবে। পাশাপাশি টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যদি অফিস, দোকানপাট খুলতে পারে, তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পার্ক খুললে সমস্যা হবে কেন- এটা বুঝতে পারছি না। অনেক কর্মকাণ্ডই স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, নেদারল্যান্ডস, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অনেক দেশই এখন তাদের বিনোদনকেন্দ্র খুলে দিয়েছে। বিদেশি পর্যটকরাও সেখানে যাচ্ছেন। দেশে এমনটি করা গেলে, বিশেষ করে ঘরবন্দি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App