×

পুরনো খবর

পরী মনির পার্টিতে আসা অতিথিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে: র‍্যাব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২১, ০৬:০১ পিএম

পরী মনির পার্টিতে আসা অতিথিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে: র‍্যাব

পরীমনি ও রাজসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। ছবি: ভোরের কাগজ

পরী মনিসহ অন্যান্যদের পার্টিগুলোতে যারা আসা-যাওয়া করতেন তাদের নামও আমাদের কাছে এসেছে। যাচাই-বাছাই চলছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রাজধানীর বনানী থেকে মাদকসহ শামসুর নাহার স্মৃতি ওরফে স্মৃতিমনি ওরফে পরী মনি ও নজরুল ইসলাম রাজসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) বিকালে র‍্যাব সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৩ আগস্ট রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শরিফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান ও তার সহযোগী মো. মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকার গুলশান, বারিধারা ও বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টি আয়োজনের বেশ কয়েকটি স্থানের তথ্য দেন। এমতাবস্থায় গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র‍্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১ এর অভিযানে গত ৪ আগস্ট রাজধানীর বনানী এলাকায় বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে শামসুর নাহার স্মৃতি ওরফে স্মৃতিমনি ওরফে পরী মনি (২৬) ও নজরুল ইসলাম ওরফে রাজসহ (৩৯) চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেফতার অপর সদস্যরা হলো পরী মনির ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম দীপু (২৯) ও সবুজ আলী (৩৫)। অভিযানে উদ্ধার করা হয় একটি মিনি বার পরিচালনার বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ ৩৩ বোতল বিভিন্ন প্রকার বিদেশী মদসহ দেড় শতাধিক ব্যবহৃত বিদেশী মদের বোতল, ইয়াবা ও শিশা সামগ্রী, এলএসডি; আইস ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস। তাদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হয়।

তিনি আরো বলেন, পরী মনিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, পিরোজপুরের কলেজে এইচএসসি অধ্যায়নরত অবস্থায় ২০১৪ সালে চিত্র জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এ পর্যন্ত তিনি ৩০টি সিনেমা ও ৫-৭টি টিভিসিতে অভিনয় করছেন। পিরোজপুর থেকে ঢাকায় এসে চিত্র জগতে একটি দৃঢ় অবস্থান তৈরিতে গ্রেপ্তার নজরুল ইসলাম রাজেরএকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে তিনি জানান।

গত ২০১৬ সাল থেকে অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়েন। তার ফ্ল্যাট থেকে বিভিন্ন ব্রান্ডের বিদেশী মদ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন করে থাকেন। মাত্রাতিরিক্ত সেবনের চাহিদা মেটানোর লক্ষে বাসায় একটি মিনি বার স্থাপন করেন তিনি। মিনি বার থাকায় তার ফ্ল্যাটে ঘরোয়া পার্টি অয়োজন পরিপূর্ণতা পেত বলে তিনি জানান। নজরুল ইসলামরাজসহ আরও অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক সরবরাহ করত এবং পার্টিতে অংশগ্রহণ করত বলে গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।

নজরুল ইসলাম রাজকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় সে ১৯৮৯ সালে খুলনার একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেন। পরে ঢাকায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন বলে দাবী করেন। অতঃপর সে বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য ও ঠিকাদারী কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি শোবিজ জগতেও তার অনুপ্রবেশ ঘটে। বিভিন্ন সিনেমা/নাটকে তিনি নানান চরিত্রে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে নামে বেনামে প্রযোজনায় যুক্ত হন। রাজ মাল্টি মিডিয়া তার একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসায়িক জগত ও চিত্র জগতের দুই ক্ষেত্রে তার সংযোগ থাকায় নামেও তিনি অতিরিক্ত অর্থ লাভের আশায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিজ অবস্থানের অপব্যবহার করেন।

নজরুল ইসলাম রাজ ইতোপূর্বে গ্রেফতার শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানের সহযোগীতায় ১০/১২ জনের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। এই সিন্ডিকেট রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যবস্থা করে থাকে। এসব পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে সিন্ডিকেট সদস্যরা বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত অভিজাত পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করত। এছাড়া সিন্ডিকেটটি বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করত। একইভাবে উচ্চবিত্ত প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরনের পার্টির আয়োজন করা হত। আগত ব্যক্তিদের চাহিদা/পছন্দের গুরুত্ব দিয়ে পার্টি আয়োজন করা হতো। নজরুল ইসলাম রাজের সিন্ডিকেট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপব্যবহার করতেন। সুদূর প্রসারী পরিকল্পনায় তারা অগ্রসর হতেন ও স্বার্থ চরিতার্থ করতেন। নজরুল ইসলাম রাজ তার “রাজ মাল্টিমিডিয়া” কার্যালয়টি অনৈতিক কাজেও ব্যবহৃত হতো।

নজরুল ইসলাম ওরফে রাজ জানায় এ জাতীয় অবৈধ আয় থেকে অর্থ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় আমদানি, ড্রেজার বালু ভরাট ও ঠিকাদারী ও শোবিজ জগতে বিনিয়োগ করেতেন। বর্ণিত ব্যবসায় বেশ কয়েকজন অবৈধ অর্থের যোগানদাতাদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের ব্যবসায়িক কাঠামোতে অস্বচ্ছতা রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App