×

জাতীয়

করোনার থাবা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে, কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২১, ১০:১৪ পিএম

করোনার থাবা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে, কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ

ফাইল ছবি

সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের নয় মাসের অর্থাৎ ২০২০ সালের ১ জুলাই-২০২১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিএস। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.৪৭ শতাংশ। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরের জিডিপি অর্জিত হয়েছে ৩.৫১ শতাংশ। করোনার থাবায় এক বছরের ব্যবধানে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করবে বিবিএস।

বিবিএস প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও গত অর্থবছরে (২০২০-২১) বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। স্থিরমূল্যে এই জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ ১১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর মাথাপিছু আয় ২০২৪ ডলার থেকে বেড়ে ২২২৭ ডলারে পৌঁছেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের নয় মাসের হিসেবে এই তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিএস। করোনার থাবায় এর আগের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ইতোমধ্যেই প্রবৃদ্ধির প্রতিবেদন আমরা প্রকাশ করেছি। একসঙ্গে ২০১৯-২০২০ এর চূড়ান্ত এবং চলতি অর্থবছরের প্রাথমিক প্রবৃদ্ধি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে। আমার মনে হয়, এটা লুকানোর কিছু নয়। পরিসংখ্যানে সঠিক তথ্যে উঠে এলে দেশের উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনা নেয়া সহজ হয়।

বিবিএস এর প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জুন-জুলাই মাসে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। অথচ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। ফলে করোনা সংকটে এক বছরেই প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। চূড়ান্তভাবে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে কৃষিখাতে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা গত বছরে ছিল ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ফলে করোনা সংকটেও অর্থনীতির চাকা সচল ছিল কৃষিখাতে। করোনা সংকটের মধ্যে দেশকে মূলত বাঁচিয়ে রেখেছিল কৃষিখাত। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক ০২ শতাংশ। খাদ্য শষ্য, প্রাণিজ ও বনজ সম্পদ আহরণ ঠিক ছিল করোনা সংকটেও। কৃষির উপখাতে মৎসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধির ধস নেমেছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। যা গত অর্থবছরে ছিল ১৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ফলে বিবিএস প্রতিবেদনে উঠে এসেছে করোনার বড় ধাক্কা লেগেছে শিল্পখাতে। সেবাখাতেও বড় ধাক্কা লেগেছে প্রবৃদ্ধিতে। এই খাতে প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এবারের প্রবৃদ্ধির হিসাবটা আমার কাছে বাস্তব মনে হয়েছে। করোনা মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত ছিল। যার প্রভাব প্রবৃদ্ধির ওপর পড়বে এটা স্বাভাবিক। আমার কাছে এ হিসাবটা সঠিক মনে হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির হিসাব প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। যেটা বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিলছিল না। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রাথমিক হিসাবটাও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। কিন্তু যেহেতু চূড়ান্ত হিসাবে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে, সেহেতু এটা বাস্তবতার সঙ্গে মিলে যায়। কারণ ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমরা বেশ কয়েকটা লকডাউনের মধ্যে পড়েছিলাম। সেসময় দেশের অর্থনীতি স্থবির অবস্থায় ছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছর কিন্তু শুরু থেকেই কোনো লকডাউনে পড়তে হয়নি। যার ফলে এ অর্থবছর প্রবৃদ্ধি বাড়বে। যদিও চলতি বছরের প্রথম নয়মাসে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে, সেক্ষেত্রে বলা যায় বছর শেষে গত অর্থবছরের তুলনায় এ অর্থবছর প্রবৃদ্ধি বাড়বে। বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতির মধ্যেও বাংলাদেশের এই অর্জন সত্যিই প্রসংশনীয় বলেও জানান এই অর্থনীতিবিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App