×

খেলা

ফাইনালে ব্রাজিল-স্পেন মুখোমুখি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২১, ১১:০০ এএম

ফাইনালে ব্রাজিল-স্পেন মুখোমুখি

ফাইল ছবি

টোকিও অলিম্পিকের ছেলেদের ফুটবলের প্রথম সেমিফাইনালে মেক্সিকোকে পেনাল্টিতে ৪-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ব্রাজিল। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ফাইনালে যাওয়ার মাধ্যমে অলিম্পিকে টানা দুবার স্বর্ণপদক জয়ের সুযোগ তৈরি করেছে। ফাইনালে তারা পেয়েছে স্পেনকে। আর স্পেন স্বাগতিক জাপানকে ১-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে ফাইনালের টিকেট পেয়েছে। ৭ আগস্ট হবে ফাইনাল ম্যাচ।

গতকাল মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) ফাইনালে জায়গা করে নিয়ে ব্রাজিল টানা তৃতীয়বার অলিম্পিকের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। অলিম্পিকের ইতিহাসে প্রায় পাঁচ দশক পর প্রথম কোনো দল হিসেবে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ফাইনালে যাওয়ার ব্রাজিল হ্যাটট্রিক করেছে। ব্রাজিল ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিক, ২০১৬ সালে নিজ দেশে হওয়া রিও অলিম্পিক এবং গতকাল সর্বশেষ টোকিও অলিম্পিকের ফাইনালে গেল। ২০১২ সালের ফাইনালে তারা মেক্সিকোর বিপক্ষে হেরেছিল।

ফলে সেলেসাওদের সে বছর রৌপ্যপদক নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। কিন্তু রিওতে পরেরবার স্বর্ণ জিতে তবেই ক্ষান্ত হয় তারা।

প্রায় ৫০ বছর আগে একমাত্র দল হিসেবে টানা তিনটি অলিম্পিকের ফাইনালে যাওয়ার কীর্তি দেখিয়েছিল হাঙ্গেরি। ১৯৭২ সালে জার্মানির মিউনিখে হওয়া অলিম্পিকে তারা ফাইনালে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনাল খেলে। যদিও সেবার তারা রানার্সআপ হয়। এর আগে ১৯৬৪ সালে টোকিও ও ১৯৬৮ সালে মেক্সিকো সিটিতে হওয়া অলিম্পিকে হাঙ্গেরি স্বর্ণপদক জয় করেছিল।

গতকাল ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে দুই দলের কেউ গোল করতে পারেনি। ফলে অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় খেলা। সেখানেও গোল করতে ব্যর্থ হয় দুই দল। আর তাই পেনাল্টিতে ম্যাচের ফয়সালা হয়। পেনাল্টিতে ব্রাজিলের হয়ে শট নেন দানি আলভেস, মার্টিনেল্লি, ব্রুনো ও রেইনার।

তারা সবাই বল জালে জড়াতে সমর্থ হন। অন্যদিকে মেক্সিকোর হয়ে শুধু রদ্রিগেজ বল জালে জড়াতে সমর্থ হন। মেক্সিকো তাদের নেয়া প্রথম দুটি শট মিস করে। ফলে সব মিলিয়ে তারা তিনটি শট নেয়ারই সুযোগ পায়।

মেক্সিকোর হয়ে প্রথম শট নেন এদোয়ার্দো আগুয়েরো। কিন্তু তার দুর্বল শট সহজেই ঠেকিয়ে দেন ব্রাজিলের গোলরক্ষক সান্তোস। দেশটির হয়ে দ্বিতীয় শট নেন জোহান ভাসকুয়েজ। তিনি বল মাপ অনুযায়ী শট করতে পারেননি। ফলে তার শট গিয়ে লাগে গোলবারে। তবে ব্রাজিলের গোলরক্ষক সান্তোসই ম্যাচের বড় নায়ক। কারণ তিনি মেক্সিকোর প্রথম শটটি ঠেকিয়ে দিয়ে প্রথমেই তাদের মনোবল ভেঙে দিতে সমর্থ হন।

২০১২ লন্ডন অলিম্পিকের ফাইনালে মেক্সিকোকে পেয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু সেবার মেক্সিকোর বিপক্ষে ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরেছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল।

এবার ব্রাজিল মেক্সিকোকে পেয়েছে সেমিফাইনালে। আর সেমিতে হারিয়ে দেয়ার মাধ্যমে ২০১২ সালের প্রতিশোধ নিয়ে নিল তারা। অবশ্য এজন্য ব্রাজিলকে যেতে হয়েছে পেনাল্টি পর্যন্ত।

তবে নির্ধারিত সময়েই জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল ব্রাজিল। ম্যাচের ৮২ মিনিটের সময় রিচার্লিসন দুর্দান্ত এক হেড করে বল প্রায় জালে জড়িয়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু তার কপাল খারাপ। কারণ তার করা হেড গোলবারে লেগে ফিরে আসে।

এদিকে ব্রাজিল যদি এবার টোকিও অলিম্পিকের স্বর্ণপদক নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারে, তাহলে তারা তাদের চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী আর্জেন্টিনার মতো টানা দুবার স্বর্ণপদক জিততে পারবে। আর্জেন্টিনা ২০০৪ ও ২০০৮ সালে যথাক্রমে টানা দুবার অলিম্পিকের সেরা হয়।

তাছাড়া ব্রাজিল এবার স্বর্ণ জয় করলে ষষ্ঠ দেশ হিসেবে অলিম্পিকে দুবার স্বর্ণপদক জয় করতে পারবে। এখন পর্যন্ত তিনবার স্বর্ণ জয় করে যৌথভাবে প্রথম স্থানে আছে হাঙ্গেরি ও গ্রেট ব্রিটেন। আর দুটি করে স্বর্ণপদক জয় করেছে আর্জেন্টিনা, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও উরুগুয়ে। তবে অলিম্পিকে ফুটবলে সবচেয়ে বেশি পদক কিন্তু জয় করেছে ব্রাজিলই।

সব মিলিয়ে ব্রাজিল অলিম্পিকে ছয়টি পদক পেয়েছে। এর মধ্যে একটি স্বর্ণ। তিনবার রৌপ্য ও দুবার ব্রোঞ্জপদক। সেলেসাওরা রৌপ্যপদক জয় করে যথাক্রমে ১৯৮৪, ১৯৮৮ ও ২০১২ সালে। আর ব্রোঞ্জপদক পায় ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে।

ব্রাজিল মেক্সিকোকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করার পর দ্বিতীয় সেমিফাইনাল খেলতে নামে স্বাগতিক জাপান ও স্পেন। তবে ব্রাজিল ও মেক্সিকোর ম্যাচের মতো জাপান ও স্পেনের মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচেও নির্ধারিত সময়ে দেখা যায়নি কোনো গোলের দেখা।

নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোলশূন্য ড্র হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এমনকি অতিরিক্ত সময়ের প্রথম ১৫ মিনিটেও দুই দলের কেউ তুলে নিতে পারেনি কোনো গোল। যদিও এ সময় একটি পেনাল্টি পেয়েছিল স্পেন। কিন্তু রেফরি ভিডিও অ্যাসিসটেন্ট রেফারি (ভিএআরে) পরীক্ষা করে পেনাল্টি বাতিল করে দেন। আর রেফারির এমন সিদ্ধান্তে বেশ ক্ষুব্ধ হন। অতিরিক্ত সময়ের পরের ১৫ মিনিট দুই দল গোল তুলে নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। বিশেষ করে জাপান অনেক চাপ তৈরি করে। কিন্তু ম্যাচের ১১৫ মিনিটের সময় গোল তুলে নেয় স্পেন। মার্কো আসেনসিও দুর্দান্ত এক শটে জাপানের গোলরক্ষককে পরাস্ত করে বল জালে ঢুকিয়ে দেন।

অন্যদিকে পরশুদিন চূড়ান্ত হয় মেয়েদের দুই ফাইনালিস্ট। এবারের টোকিও অলিম্পিকের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে কানাডা ও সুইডেন। আর সেমিফাইনালে হারে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া। আগামীকাল তারা ব্রোঞ্জপদকের ম্যাচে খেলতে নামবে। বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় শুরু হবে ম্যাচটি। আর পরশুদিন স্বর্ণপদকের ম্যাচে খেলতে নামবে কানাডা ও সুইডেন। এ ম্যাচটি হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায়। কানাডা ও সুইডেন একবারও অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জেতেনি। ফলে এবার যে দলই জয় পাবে, তাতেই নতুন অলিম্পিকের নতুন চ্যাম্পিয়নকে দেখা যাবে।

কানাডার মেয়েরা লন্ডন অলিম্পিক ২০১২ ও ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকের সেমিফাইনালে খেলেছিল। কিন্তু দুবারই তাদের সেমিতে হতাশ হতে হয়েছে। তবে একবারে যে খালি হাতে ফিরেছিল তারা, সেটি নয়।

কারণ শেষ দুটি অলিম্পিকেই ব্রোঞ্জপদক জয় করেছিল। তবে তাদের আক্ষেপ ছিল যে পর পর দুটি অলিম্পিকের সেমিতে জায়গা করে নেয়ার পরও ফাইনাল খেলতে না পারা। অবশেষে তাদের সেই আক্ষেপ শেষ হয়।

২০১৯ সালে ফ্রান্সে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েরা। যাদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব জয় করেছিল, তাদের নিয়েই অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয়ের মিশনে এসেছিল তারা। কিন্তু বিশ্ব জয় করলেও অলিম্পিকে আর সেরা হতে পারল না তারা। সেমিফাইনালে হারার মাধ্যমে কানাডার বিপক্ষে ২০০১ সালের পর প্রথম হারের স্বাদ পেয়েছে তারা। মেয়েদের অন্য সেমিফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১-০ ব্যবধানে হারায় সুইডেন। এদিকে কানাডা যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করেই ইতিহাস গড়ে ফেলে। তারা অলিম্পিকের ইতিহাসে একমাত্র দল হিসেবে টানা তিনটি অলিম্পিকে পদক জেতার অনন্য রেকর্ড গড়ে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App