×

জাতীয়

হেলেনা জাহাঙ্গীরের দুই সহযোগী গ্রেপ্তার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২১, ১১:২২ এএম

হেলেনা জাহাঙ্গীরের দুই সহযোগী গ্রেপ্তার

ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গের সম্মানহানি করার অপচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত হেলেনা জাহাঙ্গীর এর অন্যতম সহযোগী হাজেরা খাতুন এবং সানাউল্ল্যাহ নূরীকে রাজধানীর গাবতলি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) ভোরে রাজধানীর গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হেলেনা জাহাঙ্গীর এর প্রতারণার কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। দেশের সকল গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে হেলেনা জাহাঙ্গীরের গ্রেপ্তারের সংবাদ প্রচারিত হয়। ফলশ্রুতিতে প্রতারিতরা আশান্বিত হয়। এ প্রেক্ষিতে ভিকটিমরা অভিযোগ দায়ের করতে উৎসাহী হয়। র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪ এর অভিযানে ৩ আগস্ট ভোর রাতে রাজধানীর গাবতলি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হেলেনা জাহাঙ্গীরের অন্যতম সহযোগী হাজেরা খাতুন (৪০), এবং সানাউল্ল্যাহ নূরী (৪৭)’কে গ্রেপ্তার করে। অভিযানে উদ্ধার করা হয় ২টি ল্যাপটপ এবং ২টি মোবাইল।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেছে। গ্রেপ্তারকৃত হাজেরা খাতুন ২০০৯ সালে কুমিল্লার একটি কলেজ হতে মাষ্টার্স সম্পন্ন করেন। অতঃপর তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন মিরপুরে একটি গার্মেন্টস এ্যাডমিন (এইচ আর) পদে চাকুরি শুরু করেন। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের নিকট আত্মীয় এবং একই সঙ্গে কর্মদক্ষতা গুনে হেলেনা জাহাঙ্গীরের অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে উঠেন। তাই ২০১৬ সালে তিনি “জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন” এর ডিজিএম হিসেবে নিয়োগ পান। অতঃপর তিনি “জয়যাত্রা টিভি” প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জিএম (এ্যাডমিন) এর পদে নিযুক্ত হন।

গ্রেপ্তারকৃত হাজেরা খাতুন মূলত দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ হেলেনা জাহাঙ্গীরের আর্থিক বিষয়াদি দেখভাল করতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। জয়যাত্রা টিভি সম্পর্কে হাজেরা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, জয়যাত্রা টিভি ২০১৮ সাল হতে হংকং এর একটি ডাউন লিংক চ্যানেল হিসেবে সম্প্রচার হয়ে আসছে। যার ফ্রিকুয়েন্সি হংকং হতে বরাদ্দ করা হয়েছে। উক্ত ফ্রিকুয়েন্সির জন্য হংকংকে প্রতি মাসে প্রায় ছয় লক্ষ টাকা পরিশোধ করতে হয়।

[caption id="attachment_300585" align="alignnone" width="1280"] র‍্যাব কার্যালয় হেলেনার অন্যতম সহযোগী হাজেরা খাতুন এবং সানাউল্ল্যাহ নূরী। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই টিভি বাংলাদেশের প্রায় ৫০টি জেলায় সম্প্রচারিত হয়ে থাকে। টিভি চ্যানেলটি রাজধানী ও জেলা পর্যায়ের পাশাপাশি মফস্বল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনপ্রিয় করার লক্ষে ব্যাপক উদ্দেশ্য প্রণোদিত পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে অধিকসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করা যায়। গুরুত্ব বিবেচনায় জেলা প্রতিনিধি ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা, উপজেলা প্রতিনিধি দশ থেকে বিশ হাজার টাকা এককালীন প্রদান করতে হয়।

এছাড়া প্রতিনিধিদের নিকট হতে প্রতি মাসে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। বর্ণিত টিভিটি বিশ্বের প্রায় ৩৪টি দেশে সম্প্রচারিত হয়। যেখানে দেশের গুরুত্ব বিবেচনায় এক থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রতিনিধিরা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। যারা প্রতি মাসে বিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রদান করে থাকেন। নিয়োগ বাণিজ্য, অর্থ সংগ্রহ ও যাবতীয় হিসাবপত্র হাজেরা খাতুন এর উপর ন্যাস্ত বলে তিনি জানান। হাজেরা খাতুন এর প্রদত্ত তথ্যে জানা যায়, অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনেক বিতর্কিত ব্যক্তিরা নিয়োগ পেয়েছেন। হেলেনা জাহাঙ্গীরের পরিকল্পনা, উৎসাহে বা চাপে, নির্দেশনায় জয়যাত্রা টিভির কোন কোন প্রতিনিধি নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যক্তি প্রচার, প্রার্থিতা প্রচার, সাক্ষাতকার ইত্যাদির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের একটি অংশ গ্রেফতারকৃতদের মাধ্যমে হেলেনা জাহাঙ্গীর গ্রহণ করে থাকতেন বলে গ্রেফতারকৃতরা জানান। যে সমস্ত বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমে প্রচারিত হত না সেগুলো জয়যাত্রা টিভিতে প্রচার করা হতো। যেমন-তাবিজ- কোবজ, টুটকা- ফাটকা, ভাগ্য বলে দিতে পারে, জ্বীনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ, ফারা কেটে যাওয়া এবং গোপন সমস্যার সমাধান ইত্যাদি।

হাজেরা খাতুন জানান, হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা টিভিকে তিনি নিজ প্রচার ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ব্যবহার করতেন। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জয়যাত্রা টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণা চালাতেন। তিনি তার প্রতিষ্ঠান হতে চাকুরিচ্যুতদের একইভাবে হেনস্থা করতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানান, জয়যাত্রা টিভি এর বিশাল নেটওয়ার্ক নিয়ে তিনি নেতিবাচক উদ্দেশ্য চরিতার্থে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন। মূল মিডিয়া জগতের বিপরীতে তিনি একটি সংগঠন তৈরির পরিকল্পনা করেন যেখানে ৫ হাজার সংবাদকর্মীর একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। তিনি দেশব্যাপী এই নেটওয়ার্ক ব্যক্তি হীন স্বার্থে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেন। মাঝে মধ্যে তিনি ঢাকায় কর্মী সমাবেশ করতেন এবং ক্ষেত্র বিশেষে নিজের শোডাউনে তাদেরকে ব্যবহার করতেন।

জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন সম্পর্কে হাজেরা খাতুন জানান উক্ত ফাউন্ডেশনে ডোনার, জেনারেল মেম্বার, লাইফ টাইম মেম্বার ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এই সংগঠনের প্রায় ২০০জন সদস্য রয়েছে। যাদের নিকট হতে সদস্য পদ বাবদ বিশ হাজার থেকে দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। যার যৎ সামান্যই মানবিক কাজে ব্যবহার করে জয়যাত্রা টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হত। অবশিষ্ট অর্থ তার সন্তানদের নামে সঞ্চয় করা হত বলে জানান তিনি।

গ্রেপ্তারকৃত সানাউল্ল্যা নুরী (৪৮) জয়যাত্রা টিভি এর প্রতিনিধি সমন্বয়ক ছিলেন। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের নির্দেশনায় প্রতিনিধিদের সমন্বয় সাধন করতেন। প্রতিনিধিদের কেউ মাসিক টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বা গড়িমসি করলে তিনি ভয় ভীতি প্রদর্শন করতেন। এলাকাতে তার নামে চাঁদাবাজি অভিযোগ রয়েছে। তিনি গাজীপুর গার্মেন্টস সেক্টরে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে তার একটি অংশও জয়যাত্রা টিভিতে প্রদান করতেন বলে জানান। এছাড়াও তিনি গাজীপুর ও তদসংলগ্ন এলাকার অনুমোদনহীন জয়যাত্রা টিভির সম্প্রচার নিশ্চিত করতেন। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ববস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App