×

জাতীয়

করোনা ভাইরাসে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা কত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২১, ০৮:৩০ এএম

দেশে করোনার সংক্রমণের সূচনা থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে সবশেষ তথ্য তুলে ধরা শুরু হয়। শুরুর দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করে পরিস্থিতি তুলে ধরত। পরবর্তীতে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন বা ভার্চুয়ালি বুলেটিনে করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য জানানো হচ্ছে। তথ্য মতে, দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী প্রথম শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। আর ১৮ মার্চ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যু হয়। এরপর থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ১২ লাখ ৮০ হাজার ৩১৭ জন রোগী শনাক্ত হয়। আর মৃত্যু হয়েছে ২১ হাজার ১৬২ জনের।

সরকারের দেয়া এই তথ্য নিয়ে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাদের ধারণা, দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী বা মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। সরকার প্রকৃত তথ্য আড়াল করছে। গতকাল সোমবার বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয় দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ‘লাখের নিচে নয়’। এর আগে দেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর পরপরই সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সরকারের দেয়া তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে। সারা পৃথিবীর তুলনায় আমরা ভালো আছি- এটি প্রমাণ করতেই সংখ্যা কমিয়ে বলা হচ্ছে বলে সুজনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর আগে নিপাহ ভাইরাস, ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিয়েও মানুষের মধ্যে এমন সন্দেহের জন্ম হয়েছিল। এই মহামারিকালে কিছু সময় হাসপাতালের দেয়া তথ্যের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যের মধ্যে গড়মিল হতেও দেখা গেছে। সরকার করোনার উপসর্গ নিয়ে কতজন মারা যাচ্ছে সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরছে না। ইতোমধ্যে চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের তথ্য লুকানোর অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। এসব কারণেই সন্দেহ আরো তীব্র হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের দেয়া তথ্যের চেয়ে মৃতের সংখ্যার হেরফের হতে পারে বড়জোর ১০ শতাংশ।

সরকারের দেয়া তথ্য পুরো দেশের প্রকৃত চিত্র নয় বলে মনে করেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, সরকার প্রতিদিন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের যে তথ্য দিচ্ছে তা যে প্রকৃত চিত্র নয়; তা আমি স্বীকার করি। তবে সারাদেশের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতাও আছে। কিছু ক্ষেত্রে ‘মিস ম্যানেজম্যান্ট’ হয়। করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার ক্ষেত্রে বলব নমুনা যত বেশি পরীক্ষা হবে রোগীর সংখ্যা তত বাড়বে। রোগীর প্রকৃত সংখ্যা পেতে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। তবে মৃত্যুর সংখ্যার ক্ষেত্রে বলব, যারা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে সেই তথ্যটাই সরকারের কাছে থাকছে। অনেকের মধ্যে সব ধরনের উপসর্গ থাকলেও তারা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। ফলে ওই ব্যক্তি যখন মারা যাচ্ছেন তখন সেই সংখ্যাটি সরকার জানতে পারছে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, মহামারির সময়ে কোনো মানুষ যদি ওই রোগের উপসর্গ নিয়ে মারা যান, যদি তা পরীক্ষা নাও করানো হয় তবে সেই মৃত্যুটি ওই রোগেই হয়েছে বলে আমি ধরব।

উপসর্গ নিয়ে যারা বাড়িতে মারা যাচ্ছেন তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই। ফলে একটা ব্যবধান তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, এ কথা সত্যি যে, সরকার যে তথ্য দিচ্ছে তা প্রকৃত চিত্র নয়। তবে আমাদের দেশের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য হলো; সরকার যে তথ্য দেয় সেটি প্রকৃত চিত্র। তিনি বলেন, প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে ধারণা পেতে কিছু ‘ফর্মূলা’ আছে। যা দিয়ে প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। নিপাহ ভাইরাস যখন আমাদের দেশে হলো তখন কিছু এলাকায় আমরা এই ‘ফর্মূলা’ কাজে লাগিয়ে একটা চিত্র পেয়েছিলাম। এই বিষয়ে সরকার গুরুত্ব দিতে পারে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেনও মনে করেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে সরকারের দেয়া মৃতের সংখ্যার সঙ্গে বাস্তব সংখ্যার কিছুটা হেরফের আছে। তবে তা ১০ শতাংশের বেশি নয়। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতিদিন সরকার করোনায় মৃতের যে তথ্য দিচ্ছে তার সঙ্গে বাস্তব সংখ্যার হেরফের অবশ্যই আছে। তবে তা খুব একটা নয়। মৃতের সংখ্যা আসলে লুকানোর সুযোগ খুব একটা নেই। তবে অনেকে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন। যারা করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন না। এই সংখ্যাটা বাইরে থেকে যাচ্ছে। তবে আইইডিসিআরে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে উপসর্গ নিয়ে কতজনের মৃত্যু হয়েছে সেই তথ্য আসে। আইইডিসিআর সেই বিষয়টি পর্যালোচনা করে। যদিও সেই সংখ্যাটি প্রকাশ হচ্ছে না। উপসর্গ থাকলেই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় তিনি করোনায় মারা গেছেন। এর জন্য ল্যাবরেটরি পরীক্ষা প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App