×

সারাদেশ

চিকিৎসক সংকটে জর্জরিত সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২১, ০৫:৫৩ পিএম

চিকিৎসক সংকটে জর্জরিত সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল জেলার মানুষের একমাত্র আশা-ভরসার জায়গা। ভরসার জায়গাটি এখন হতাশায় রুপান্তরিত হয়েছে। চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার ২৩ লাখ মানুষ। এই হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবত সার্জারি, চক্ষু, গাইনি ও এ্যানেসথেসিয়ারসহ গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি চিকিৎসক পদ শূন্য অবস্থায় চলছে বছরের বছর।

সদর হাসপাতাল ১০০ শয্যা বিশিষ্ট। ভারী যন্ত্রাংশ থাকলেও চিকিৎসকের অভাবে মারাত্মক হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগীরা। রোগীরা এক রোগের চিকিৎসা নিতে এসে অন্য রোগের চিকিৎসককে দেখাতে বাধ্য হচ্ছে। হাসাপাতালে জনবল সংকটে অবস্থা এমন নাজুক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শিশু ওয়ার্ড সামলাচ্ছেন একজন মেডিকেল অফিসার। এ্যানেসথেসিয়া দিচ্ছেন যে কোন মেডিকেল অফিসার। চোখের চিকিৎসা করছেন যখন যে চিকিৎসক (সাধারণ মেডিকেল অফিসার) দায়িত্বে থাকছেন তিনি। গাইনি রোগীরা হতাশ। কখনো কখনো উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারদেরও রোগী দেখতে দেখা যায়। এদিকে চিকিৎসকের অভাবে স্বাস্থ্যসেবায় মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রান ভোমরা খ্যাত সরকারি সদর হাসপাতালটি। জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালের করুন চিত্র দেখে মনে হয় দেখার মতো কেউ নেই। এরই পরিস্কার চিত্র হাসপাতালটি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের ২৭টি পদের মধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থ সার্জারি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেসিয়া) জুনিয়ার কনসালটেন্ট (পেডিয়েট্রিক্স), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) রেডিওলজিস্ট,মেডিকেল অফিসার (জরুরী বিভাগ) মেডিকেল অফিসার (আয়ুঃ উন্নয়ন) সহ উল্লেখিত ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই কোন চিকিৎসক।

এছাড়াও ২য় শ্রেনীর সিনিয়র স্টাফ নার্স, স্টাফ নার্স, সহকারী নার্স সহ বিভিন্ন পদে ২৪টি ও ৩য় শ্রেনীর সহকারি নার্স,মেডিকেল টেকঃ (ল্যাব), মেডিকেল টেকঃ (ডেন্টাল) সহ বিভিন্ন পদে ৭টি এবং চতুর্থ শ্রেনীর ৩টি পদ দীর্ঘদিন যাবত শূন্য আছে। হাসপাতালে হৃদরোগ রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট (সিসিইউ) থাকলেও নেই কোন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।

সূত্র আরো জানায়, সামেক হাসপাতাল করোনা ডেডিকেটেড করার পর সদর হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন দুই থেকে তিনশশ রোগী আসেন চিকিৎসা সেবা নিতে। সুচিকিৎসা তো দূরে থাক, চিকিৎসক সংকটের তীব্রতায় এতো রোগী সামলাতে প্রতিদিন হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরজমিনে দেখা গেছে, রোগীদের দীর্ঘ লাইন। সেবা নিতে আসা সবার মুখেই হতাশার ছাপ। যারা ডাক্তার দেখাতে পারছেন তারাও খুশি নন। কারণ যে রোগের চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন, সেই ডাক্তার নেই। অর্থাৎ পদটি শূন্য রয়েছে।

এমনই একজন আশাশুনি উপজেলার শোতকনা গ্রামের আলম। দীর্ঘদিন চোখের সমস্যা নিয়ে ভুগছেন তিনি। এসেছিলাম চোখের ডাক্তার দেখাতে। জানতে পারলাম চোখের কোন ডাক্তার এই হাসপাতালে নেই। কোন উপায় না থাকায় সাধারণ মেডিকেল অফিসারকে দেখালাম। গাইনি বিশেষজ্ঞের পদ দুটি শুন্য থাকায় মা বোনেরা যেমনি স্বাস্থ্যসেবা থেকে চরমভাবে বঞ্জিত হচ্ছেন তেমনি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে। সদরের মাধবকাটি থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা, সদর হাসপাতালে নিয়ে এসেছি ডাক্তার দেখানোর জন্য। আসার পরে জানলাম হাসপাতালে কোন গাইনি ডাক্তার নেই। সিজার করানোর জন্য এখন আমাকে বাধ্য হয়ে করোনা সংক্রামনের ঝুকি নিয়ে, করোনা ডেডিকেটেড সামেক হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।

এদিকে, সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শিশু বিশেষজ্ঞের পদ দুটি শূন্য থাকায় মারাত্নক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিশু স্বাস্থ্য সেবায়। জোড়াতালি দিয়ে শিশু ওয়ার্ড চালাচ্ছেন একজন মেডিকেল অফিসার। জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শেখ ফয়সাল আহমেদ বলেন, বর্হিবিভাগের রোগী সামলাতেই রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমাদের নেই সার্জারি, অর্থ সার্জারি, চোখের সিনিয়র কোন কনসালটেন্ট এমনকি গাইনি বিভাগেও সিনিয়র, জুনিয়র কোন কনসালটেন্ট নেই। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞের পদটি শূন্য। তাই যখন যাকে পাই (মেডিকেল অফিসার) তাকে দিয়েই কাজ চালানো হয়। জনবল সংকটে কখনো কখনো উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়েও রোগী দেখাতে হচ্ছে। কোন উপায় নেই। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে সদর হাসপাতালে ৬ হাজার ঘন লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন সেন্ট্রাল লিকুইড অক্সিজেন সরবরাহের কাজ শেষ হয়েছে। হাই ফ্লো অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে। অনায়াসে ১শ রোগীর অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। প্রয়োজনে করোনা রোগীদেরও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন কাম তত্বাবধায়ক ডা: হুসাইন সাফায়েত ১৬ টি পদে ডাক্তার না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সদর হাসপাতালে জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চত করার লক্ষে শুন্য পদের সবগুলো চিকিৎসকের প্রয়োজন। তিনি বলেন, এই মুহুত্বে সার্জারী, গাইনি ও চক্ষু সিনিয়র কনসালটেন্ট ভীষন প্রয়োজন জানিয়ে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবেও ফোনে কথা বলেছি। বিষয়টি দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবার দূর্দশা থেকে মুক্তি চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তোভোগী সাতক্ষীরাবাসী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App