×

জাতীয়

তবে কি ডেঙ্গু নিয়ে শঙ্কা সত্যি হচ্ছে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২১, ০৯:২৭ পিএম

জুন মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত এক গবেষণা জরিপে রোগীর সংখ্যা বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ তথ্য থেকে জুলাই ও আগস্টে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নিয়ে শঙ্কার কথা আগে ভাগেই জানিয়েছিলেন কীটতত্ত্ববিদরা। সেই শঙ্কাই যেনো সত্যি হতে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চলতি বছরের রেকর্ড সংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তির তথ্য দিয়ে শুরু হলো আগস্ট মাসে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ২৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। যা চলতি বছরে এ যাবত কালের সর্বোচ্চ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর-এই ৪ মাস মূল মৌসুম। কয়েক দিনের থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টি এডিস মশার বংশবিস্তারে প্রভাব ফেলছে। আর ঢাকায় মশা নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত কার্যক্রম না থাকায় এডিস মশা যেমন বাড়ছে সেই সাথে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও।

কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে মোট ২ হাজার ৮৯৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ২৯ জন। রোগীদের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ২১৮ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৯ জন। রাজধানীতে ভর্তি রোগীদের মধ্যে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ৫২ জন ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে ১৬৬ জন।

এখন সারাদেশের হাসপাতালে ভর্তি মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৮৬২ জন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ৮২৮ এবং ঢাকার বাইরে ৩২ জন ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু সন্দেহে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে তথ্য পর্যালোচনার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে ৩ জন, মে মাসে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন এবং জুলাইয়ে ২ হাজার ২৮৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ধানমণ্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। জ্বর, মাথা ব্যথা, চোখে ব্যথা, শরীরে ব্যথা, মুখ থেকে রক্তক্ষরণ, পেট ফুলে যাওয়া, শরীরে পানি আসা, গায়ে র‌্যাশ ওঠা- এসব লক্ষণ নিয়ে শিশুরা হাসপাতালে আসছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতি বছর ৫ থেকে ১০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে ৫ লাখ মানুষ হেমোরেজিক জ্বরে ভোগে আর কমপক্ষে ২২ হাজার মানুষ মারা যায়। যাদের মধ্যে একটি বড় অংশই শিশু। এদিকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৫ জন শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. প্রবীর কুমার সরকার বলেন, গত দুই মাস ধরে ব্যাপকভাবে শিশুরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। গত দুই মাসে আমাদের এখানে ৬৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। স্বাস্থ্যবান ও বেশি ওজনের শিশুদের বেশি গুরুতর অবস্থা তৈরি হচ্ছে।

সেন্ট্রাল হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের ইনচার্জ ও কনসালটেন্ট সুজিত কুমার রায় জানান, হাসপাতালে ৯০ জনের মতো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু। সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় আলাদা হাসপাতাল নির্ধারণ করার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেয়া হবে সেগুলো হলো; স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতালসহ আরো কয়েকটি হাসপাতাল।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা একদিকে নন কোভিড রোগীর চিকিৎসা, অপরদিকে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা, অন্যদিকে টেস্ট ও টিকা-এসব মিলিয়ে সব একসঙ্গে করতে হচ্ছে। তাই আমরা আজকে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল চিহ্নিত করেছি, যেখানে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ, যেখানে করোনা রোগীর চিকিৎসা হয়, সেখানে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App