নিজের সন্তানদের দেখার দাবিতে টোকিওতে অনশনে রয়েছেন এক ফরাসি নাগরিক। তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দশ ইইউ কূটনীতিক। ১০ জুলাই থেকে ৩৯ বছর বয়সি ভিনসেন্ট ফিশো জাপানের রাজধানী টোকিওর অলিম্পিক স্টেডিয়ামের পাশে অনশনে রয়েছেন। ভিনসেন্টের বক্তব্য, তার জাপানি স্ত্রী তাদের দুই সন্তানকে ‘আইনত অপহরণ’ করে রেখেছে। এই অভিনব প্রতিবাদের মাধ্যমে ভিনসেন্ট দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান জাপানের বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের জটিলতার দিকে। খবর ডয়েচে ভেলের। জাপানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিচ্ছেদের পর সন্তানদের সাথে দেখা করার বা তাদের সাথে সময় কাটানোর অধিকার পায় না বাবা-মায়ের মধ্যে একজন। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের বিপরীতে জাপানে জয়েন্ট কাস্টডি বা সন্তানের অধিকার ভাগাভাগি করে নেয়ার সুবিধা নেই বিচ্ছেদ হওয়া বাবা-মায়ের। ফলে, যে অভিভাবকের সাথে দেখা করতে পারে না সন্তানরা, তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে। টোকিওর প্রবল গরমের মধ্যেও অনশন-প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন ভিনসেন্ট। স্টেডিয়াম সংলগ্ন রেল স্টেশন চত্বরেই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। এ বিষয়ে ইইউ অ্যাম্বাসাডর পাট্রিসিয়া ফ্লোর বলেন, ‘‘সকল শিশুর অধিকার রয়েছে তাদের বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ রাখার। আমরা এক্ষেত্রে অভিভাবকদের পাশে দাঁড়াচ্ছি কারণ এটা তাদের অধিকারের বিষয়। “ফরাসি অ্যাম্বাসাডরেরও পাশে দাঁড়াচ্ছি। এখানে সময়েরও বিষয় জড়িত কারণ শিশুরা বড় হচ্ছে। আমরা চাই জাপানি কর্তৃপক্ষ দ্রুত এ বিষয়ে কিছু জানাক।” জাপানের আইন মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনো মন্তব্য বা জবাব পাওয়া যায়নি। এক কর্মকর্তা বলেন যে বিশেষজ্ঞরা বর্তমানে জাপানের বিবাহ বিচ্ছেদ ব্যবস্থার পুনর্বিবেচনা করছেন। তিনি বলেন যে, ‘‘আমরা জানি এখানে অনেক কিছু জড়িত। কেউ কেউ বলছেন যে তারা শিশুদের ভরণপোষণ করতে পারছেন না, কেউ বলছেন যে তারা সন্তানের সাথে দেখা করতে পারছেন না।” ২০১৯ সালে আইনমন্ত্রী ইয়োকো কামিকাওয়া বলেন যে জাপানে সাধারণত ‘বিচ্ছেদের পরেও সন্তানদের ভরণপোষণ করার ক্ষেত্রে বাবা-মা উভয়ের ভূমিকাকে’ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ভিনসেন্টের স্ত্রী, মাইকো ফিশো’র আইনজীবী তার মক্কেলের পক্ষে বলেন, ‘‘যেহেতু এটি চলমান ব্যক্তিগত বিচ্ছেদের মামলা, তাই আমি (মাইকো ফিশো) চাই আমার তথ্য গোপন থাকুক। আদালতের বাইরে ঝামেলায় জড়ানো বা কোনো মন্তব্য করতে আমি চাই না।” মাইকোর আইনজীবীও সংবাদমাধ্যমকে আর কিছু বলতে চাননি। প্রসঙ্গত, তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অনশনে থাকা ভিনসেন্ট ইতোমধ্যে ১৪ কেজি ওজন কমিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান তিনি। তাতে তার হাতের দুটি আঙুলে চিড় ধরে। এরপরে ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ইটালি ও অন্যান্য রাষ্ট্র প্রতিনিধিদের সাথে টানা ৪৫ মিনিট ধরে আলোচনা করেন ভিনসেন্ট। তিনি তার সন্তানদের জন্য ক্ষতিপূরণ চান, কারণ তাদের অধিকার এখানে খর্ব করা হচ্ছে। পাশাপাশি, জাপানের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের কড়া অবস্থানের দাবি করেন তিনি। এক বছর আগে, জাপানকে আন্তর্জাতিক শিশু সুরক্ষা নীতিমালা মানতে বলে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট। পাশাপাশি, ইইউ নাগরিক ও জাপানি নাগরিকদের সন্তানদের জন্য জয়েন্ট কাস্টডির বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে বলে তারা। ভিনসেন্টের বিষয়টি টোকিও অলিম্পিক উপলক্ষে জাপানে আসা ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁও জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সাথে উত্থাপন করেন বলে জানান ফরাসি অ্যাম্বাসাডর। ফরাসি অ্যাম্বাসাডর ফিলিপ সেটন বলেন, ‘‘এই বিষয়টি জাপানী সমাজের সাথে জড়িত। যদিও এই পরিস্থিতি খুবই নাটকীয় ও কষ্টকর, তবুও আমরা জাপানি সমাজের মধ্যে কোনো বিতর্কে জড়াতে চাই না।’’ ভিনসেন্ট বলেন যে তিনি এ বিষয়ে ফ্রান্সের অপারগতা বুঝতে পারছেন। ‘‘আমি চেয়েছিলা, ফ্রান্স কড়া অবস্থান অন্তত নিক, কিন্তু আমি আমার উদ্দেশ্যে স্থির থাকব,’’ বলেন তিনি।