×

সারাদেশ

গৃহবধূকে হাত পা-বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে হত্যা চেষ্টা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২১, ০৯:১৬ এএম

গৃহবধূকে হাত পা-বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে হত্যা চেষ্টা

প্রতীকী ছবি

বিয়ের আট মাস যেতে না যেতেই স্বামীর নির্যাতনের শিকার হতে হলো মাইফুল নেছা (২৩) নামের এক গৃহবধূকে।

অভিযোগ উঠেছে, যৌতুকের দাবি না মেটানোর কারণে হাত পা বেধে মুখে কসটেপ লাগিয়ে নদীর পানিতে ভাসিয়ে দিয়ে ওই গৃহবধূকে হত্যা চেষ্টা করে স্বামী, শ্বশুর ও দুই দেবর। প্রতিবেশীরা এ ঘটনা দেখে ফেলায় প্রাণে বেঁচে যায় গৃহবধূ। তারা নদীর পাড় থেকে হাত-পা বাঁধা ও মুখে কসটেপ লাগানো অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন।

বর্বর এ ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের বাদালার পাড় গ্রামে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আট মাস আগে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার চৌধুরীপাড়া গ্রামের সাজিদুলের ছেলে আবু তাহের জান্নাতের (২৮) সঙ্গে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের বাদলার পাড় গ্রামের কারী নিজাম উদ্দিনের মেয়ে মাইফুল নেছার।

বিয়ের পর স্বামী আবু তাহের জান্নাত পার্শ্ববর্তী ভোলাখালি গ্রামের এক ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সংসার করছিল এবং একই গ্রামে আবু তাহের জান্নাতের দুই সহোদর জাকির হোসেন (২৫) ও বাবুল হোসেন (২২) এবং তার বাবা মিলে পোল্ট্রি মোরগের ব্যবসা শুরু করেন।

বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামী আবু তাহের জান্নাত যৌতুক দাবি করলে কয়েক ধাপে যৌতুকের ৫০ হাজার টাকা পূরণ করেন হতদরিদ্র মেয়ের পরিবারের লোকজন।

তারপরেও মাস খানেক ধরে স্ত্রীকে আবারো যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিল জান্নাত কিন্তু টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে স্ত্রীর উপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে সে।

নির্যাতনের ঘটনা যেনো নিত্য সঙ্গী হয়ে যায় মাইফুল নেছার। নির্যাতন সইতে না পেরে অবশেষে গৃহবধূ তার বাবার বাড়িতে চলে আসে।

এদিকে শুক্রবার রাতে মাইফুল নেছা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে গেলে আগে থেকে উৎ পেতে থাকা আবু তাহের জান্নাত, তার দুই সহোদর ও বাবা মিলে মাইফুল নেছাকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেধে এবং মুখে কসটেপ লাগিয়ে বাড়ির পাশে ভাঙ্গার খাল নদীতে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে প্রতিবেশীরা ঘটনাটি টের পেয়ে নদীর পাড়ে এগিয়ে গেলে তারা মাইদুল নেছাকে ফেলে রেখে দৌড়ে পালিয়ে যায়।

এ সময় প্রতিবেশী কয়েকজন যুবক মাইফুল নেছাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় গৃহবধূ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে স্বজনরা তাকে চিকিৎসার জন্য তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন।

এদিকে গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনা জানতে পেরে পেয়ে প্রতিবেশী মো. সুমন আহমেদ ৯৯৯ কল করে বিষয়টি পুলিশকে অবগত করেন। খবর পেয়ে তাহিরপুর থানার বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্প এ এস আই মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

মাইফুল নেছার ছোট ভাই মো. এবায়দুল্লাহ (২০) বলেন, বিয়ের পর থেকেই তারা আমার বোনকে নির্যাতন করছিল। যৌতুকের ৫০ হাজার টাকার দাবি মেটানোর পরও নির্যাতন বন্ধ করেনি। আজ তারা হাত-পা বেঁধে মুখে কসটেপ লাগিয়ে আমার বোনকে হত্যার উদ্দেশ্যে নদীতে ফেলে দিতে চেয়েছিল।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবু তাহের জান্নাতের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং গৃহবধূকে চিকিৎসা করানোর জন্য পরিবারের সদস্যদের বলা হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App