×

জাতীয়

কারখানা খুলে শ্রমিকদের হয়রানির প্রতিবাদ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২১, ০৮:২১ পিএম

কারখানা খুলে শ্রমিকদের হয়রানির প্রতিবাদ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির

গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি কেন্দ্রীয় উদ্যোগে শ্রমিক হয়রানির প্রতিবাদ করেন। ছবি: ভোরের কাগজ

১ দিনের নোটিশে গণপরিবহন ও নিরাপত্তা ছাড়া কারখানা খুলে শ্রমিক হয়রানীর প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি।

শনিবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি কেন্দ্রীয় উদ্যোগে সব শ্রমিক এলাকায় যার যার জায়গায় দাঁড়িয়ে শ্রমিক হয়রানীর প্রতিবাদ করেন।

শাহাবাগে জাতীয় যাদুঘরের সামনে বেলা সাড়ে ১২ টায় কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান তাসলিমা আখ্তার, সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু, অর্থ সম্পাদক প্রবীর সাহা এবং দপ্তর সম্পাদক মুসা কলিমুল্লাহ প্রতিবাদ জানান।

একই সময়ে আশুলিয়া, সাভার, মিরপুর, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে শ্রমিকাঞ্চলে ও গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি শ্রমিকদের সাথে নিয়ে প্রতিবাদ জানায়।

সারা দেশে শ্রমিকসহ সকল শ্রেণী-পেশার নাগরিকদের এই ঘটনার প্রতিবাদে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ ও প্রচারণার আহবানও জানান তারা।

আশুলিয়ায় কার্যালয়ের সামনে আশুলিয়া শাখার সভাপ্রধান বাবুল হোসেন, শামীম হোসেন, আশরাফ, শাহিদা বেগম, ফারিয়া রহমান, বিল্লাল হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ জানান।

সাভারে রানা প্লাজা শাখার উদ্যোগে রানা প্লাজা কার্যালয়ের সামনে সংগঠক সেলিনা আক্তারসহ নেতৃবৃন্দ যার যার জায়গায় প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাড়িয়ে প্রতিবাদ জানান।

মিরপুরে মজনু মিয়া, নুরুল ইসলাম, জেসমিন সহ অন্যান্য নেতৃত্ব রুপনগরের দুয়ারীপাড়ায় প্রতিবাদ জানায়। নারায়নগঞ্জে বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে নারায়নগঞ্জের সভাপ্রধান অঞ্জন দাস, সাধারণ সম্পাদক কাওসার হামিদসহ অন্যান্য নেতৃত্ব ও শ্রমিকরা প্রতিবাদে অংশ নেন।

চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয় সহসভাপ্রধান এবং চট্টগ্রামের নেতা হাসান মারুফ রুমি, নুরুল ইসলাম, শহীদ শিমুলসহ অন্যান্যরা প্রতিবাদ জানান। এছাড়া শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার ব্যক্তিবর্গ সংহতি জানিয়ে যার যার অবস্থানে প্রতিবাদ জানায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদী প্রচার চালায়।

প্রতিবাদগুলোতে নেতারা বলেন, আজ থেকে লাখো শ্রমিকের পরিবহন ছাড়া আবারো কারখানার দিকে ঢল নামছে। গতকাল সন্ধায় কোন রকম গণপরিবহন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে আকস্মাত কারখানা খোলার সিদ্ধান্তে শ্রমিকরা চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছেন যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।

তারা বলেন, যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সারা দেশে আরো ১০ দিন লক ডাউনের প্রস্তাব দিয়েছে সেসময় কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত মোটেই বিবেচনা সম্মত নয়।

লাখো শ্রমিক গতবছরের মতো আবারো কারখানার অঞ্চলগুলোতে পায়ে হেঁটে, রিকশা, ভ্যানে, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ নানাভাবে দুর্ভোগ করে আসছে। বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহনের অভাবে শ্রমিকরা যার পর নাই দুর্ভোগে বিক্ষুব্ধ।

অথচ মালিক সরকাররা পরিবহনের দায় না নিয়ে শ্রমিকদের হয়রানি করছে। করোনাকালে কোন রকম স্বাস্থ্যসম্মত পরিবহন ছাড়া জীবনের নিরাপত্তা ছাড়া এভাবে শ্রমিকদের হয়রানি করার তীব্র নিন্দা জানান নেতৃবৃন্দ।

নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে শ্রমিকদের জন্য পরিবহন, টেস্ট ও টিকার নিশ্চিয়তা বিধানের আহবান জানান। তারা আরো বলেন, মানসম্মত পরিবহন ছাড়া শ্রমিকদের বিপদে ফেলে করোনা সংক্রমবৃদ্ধিতে এবং শ্রমিক হয়রানি করে যে আসন্ন বিপদ ত্বরান্বিত করা হয়েছে তার দায় ভার মালিক এবং সরকারকেই নিতে হবে।

তারা বলেন, ঈদের আগে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা দিয়ে এখন পরিবহন ছাড়া আবার খোলার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। অথচ মালিক এবং সরকার সকালে এক কথা বিকালে আরেক কথা বলে শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করে করোনাকালে বিপদের মধ্যে ফেলছে।

মালিকপক্ষ পরোক্ষভাবে বেতন কাটার হুমকিও দিচ্ছে। বিজিএমইএর সভাপতি ও মালিকদের কেউ কেউ বলছেন, যারা ১ তারিখে গ্রাম থেকে আসবেনা তাদের চাপ দেয়া হবে না, তারা কাজ হারাবে এমনি নানা মিষ্টি কথা।

কিন্তু শ্রমিকরা না আসলে তাদের বেতন কাটা হবে না, এটা তারা একবারও একজনও বলেননি। দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ এসেছে একজন মালিক ভ্যারিফাইড একাউন্ট থেকে ফেসবুকে বলেছেন, “১আগস্ট থেকে কারখানা সম্পূর্ণ খোলা থাকবে, কেউ যেন অনুপস্থিত না থাকে।”

নেতৃবৃন্দ বলেন, এ অবস্থায় এটা স্পষ্ট যারা আসবে না তাদের বেতন কাটা হবে। শ্রমিকরা কিভাবে আসবে তার দায় না নিয়ে মালিকপক্ষ আবারো শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা নিয়ে তামাশা করছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, বেতন কাটার পরোক্ষ হুমকীতে শ্রমিকরা নিরুপায় ও মরিয়া হয়ে গ্রাম থেকে যে কোন উপায়ে কারখানার দিকে ছুটছে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, গত ১ বছরে ১৫% রপ্তানি আয় বেড়েছে। ইউরোপ আমেরিকা থেকে অর্ডারও বেড়েছে অথচ লক ডাউনের ৫ দিনের দায়িত্বও না নিয়ে বেতন কাটার পরোক্ষ হুমকি দিয়ে শ্রমিকদের জীবন ও জীবকাকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে।

নেতৃবৃন্দ, করোনার এই বিপদকালে কোনভাবেই শ্রমিকদের কোন মজুরি না কাটার আহবান জানান মালিকদের। মালিকরা যাতে গ্রামে থেকে আসতে না পারা শ্রমিকদের বেতন কোনভাবেই না কাটে সে বিষয়ে সরকারের বিশেষ নজরদারি আহবান জানান।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, যারা অর্থনীতি টিকিয়ে রেখেছে সেই শ্রমিকদের এখনো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার সুব্যবস্থা নাই, টেস্টেরও ব্যবস্থা নাই। গ্রাম থেকে আক্রান্ত শ্রমিকরা বিভিন্ন শ্রমিক এলাকায় এসে বাকীদের মধ্যে সংক্রমন ছড়াতে পারে।

তাই নেতৃবৃন্দ সকল শ্রমিকের করোনা টেস্ট এবং টিকার সহজ বন্দোবস্তোর দাবি জানান। শ্রমিকদের করোনার এই বিপদকালে মাস্ক পরা, সতর্ক থাকা এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান নেতৃবৃন্দ।

নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে শ্রমিকদের জন্য গণপরিবহন, টেস্ট, টিকার ব্যবস্থা নিয়ে শ্রমিকদের জীবন জীবিকার নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করার আহবান জানান। তারা বলেন, কোনভাবেই করোনাকালে লে অফ বা বেতন কাটা যাবে না।

এই অন্যায়ের বিরূদ্ধে শ্রমিক ভাই বোনসহ সকলকে যে যার জায়গায় আওয়াজ তোলার আহবান জানান তারা। তারা বলেন, পরিবহন ছাড়া কারখানা খুলে শ্রমিকদের হয়রানি অন্যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App