×

পুরনো খবর

বঙ্গবন্ধুর কৌশল : সশস্ত্রকরণ পরিকল্পনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২১, ০৮:৪৩ এএম

পরাধীন ব্রিটিশ-ভারত থেকে পাকিস্তানের কালো অধ্যায় পেরিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। এই মহান অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো নানা ঘটনা, যার কারিগর হিসেবে কেউ আখ্যায়িত হয়েছেন নায়কের অভিধায়; কেউবা আবিভূর্ত হয়েছেন খলনায়কের চরিত্রে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সেসব ঘটনা ও তার নায়ক-খলনায়কদের কার কি ভূমিকা, তাই নিয়েই অধ্যাপক আবু সাইয়িদের গ্রন্থ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’। সম্প্রতি ভোরের কাগজ প্রকাশন থেকে বের হয়েছে বইটি। এ বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে ভোরের কাগজের পাঠকদের জন্য।

নাটকীয়ভাবে ৩ মার্চের অধিবেশন স্থগিত হলো। সারা বাংলা জেগে উঠল। গর্জে উঠল। ৭ মার্চ ঘোষিত হলো অসহযোগ ও স্বাধীনতার বজ্রবাণী। চলল অসহযোগ। অভূতপূর্ব। ৩ মার্চেও স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন ও স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা হলো। ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুকে সর্বাধিনায়ক ও জাতির পিতা অভিহিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ কায়েমের লক্ষ্যে পল্টনের জনসভায় স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়, যা আগেই বলেছি। পুরো বাংলায় আওয়াজ উঠল ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো- বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’ স্লোগান দেয়া হচ্ছিল, স্বাধীনতার ও সশস্ত্র সংগ্রামের। কিন্তু প্রস্তুতি নেই। ৭ মার্চের আগে কয়েকটি ক‚টনৈতিক ও সামরিক নাটকীয়তা ঘটে। ১. এর মধ্যে সাহেবজাদা ইয়াকুব পরিষদ স্থগিত ঘোষণা ও তাদের অনুরোধে আবার সংসদ অধিবেশনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করায় তিনি পদত্যাগপত্র পেশ করেন। ২. জেনারেল টিক্কা খান ৬ মার্চ গভর্নর হন। ৩. ইয়াহিয়া খান ৭ তারিখের গুরুত্ব অনুধাবন করে ১০ মার্চ রাজনৈতিক নেতাদের গোলটেবিল আহ্বান করেন। ৪. ২৫ মার্চ নতুন করে সংসদ আহ্বান করেন। ৫. ৬ তারিখ রাতটি ছিল উত্তপ্ত। নানা ঘটনায় আকীর্ণ। ৬. আওয়ামী লীগ নেতারা ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে বৈঠকে বসেন। গভীর রাতে বৈঠক মুলতবি হয়। ৭. ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে টেলিফোনে অনুরোধ করেন ‘আমার অনুরোধ তাড়াতাড়ি করে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। শীঘ্রই আমি ঢাকায় এসে আপনার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমি আশ্বাস দিতে পারি যে, জনগণের

কাছে আপনার প্রদত্ত ওয়াদা পালিত হতে পারে।’ সকালে টেলেক্স বার্তাটি একজন বিগ্রেডিয়ার বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছে দেন। ৮. রাতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং নিউক্লিয়াসের নেতারা স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য বঙ্গবন্ধুকে জোরেশোরে অনুরোধ করেন। ৯. ৭ মার্চ পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড সকালে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িতে একান্ত বৈঠকে বলেন, ‘পূর্ব বাংলায় স্বঘোষিত স্বাধীনতা হলে যুক্তরাষ্ট্র তা সমর্থন করবে না।’ সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে সাহেবজাদা ইয়াকুব বলে পাঠান একতরফা স্বাধীনতা ঘোষিত হলে শাসন করার জন্য এবং শাসিত হওয়ার জন্য কেউ থাকবে না। রাইফেল, কামান, ট্যাংক, ভারী অস্ত্র নিয়ে রমনা পার্কে আগে থেকেই বেলুচ রেজিমেন্ট অবস্থান নিয়েছিল। বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীকে রণসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। পদাতিক বাহিনীর ওপর যুদ্ধে যাওয়ার রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। একদিকে জনগণের দাবি স্বাধীনতা, অন্যদিকে সামরিক বাহিনীর উদ্যত আক্রমণ পরিকল্পনা। এই অবস্থায় বঙ্গবন্ধু কী করবেন? ৩ মার্চ বিদেশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘তাকে স্বাধীনতা ঘোষণার দিকে পরিস্থিতি তাড়িত করছে।’ অব দ্য রেকর্ডে তিনি আরো বলেন, ‘তিনি যা বলবেন, তা হবে স্বাধীনতার সমার্থক; যা স্বাধীনতার বৃত্তে চলে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নথিতে বলা হয়েছে, সম্ভবত মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন। হেনরি কিসিঞ্জার এক বৈঠকে এভাবে মূল্যায়ন করেন যে, তার মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা, যা তিনি প্রকারান্তরে ঘোষণা করেছেন।’ বঙ্গবন্ধু মার্ক টালিকে বলেন, আমি চাই স্বাধীনতা। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার সেই কাক্সিক্ষত-কাব্যিক বাণী উচ্চারণ করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

আগামীকাল প্রকাশিত হবে ‘৭ মার্চ যার যা আছে তাই নিয়ে ’ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’ বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এছাড়া bhorerkagojprokashan.com থেকেও সংগ্রহ করা যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App