জলবসন্তের মতোই করোনার ডেল্টা ধরনটি সহজে ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। করোনার আগের ধরনগুলোর চেয়েও গুরুতর অসুস্থতার কারণ ঘটাচ্ছে। অতিসংক্রামক ডেল্টা ধরন টিকাপ্রাপ্ত এবং টিকাহীন সবার মাধ্যমেই প্রায় সমানভাবে ছড়াতে পারে। এসব তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দপ্তর সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) একটি অভ্যন্তরীণ নথি নথিতে। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও সিএনএনের।

সিডিসির অভ্যন্তরীণ একটি বৈঠকে পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইডে এই নতুন তথ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, কর্মকর্তাদের এটা স্বীকার করে নিতে হবে যে ‘লড়াইটা বদলে গেছে’। নতুন গবেষণার ফলের বরাত দিয়ে সেখানে আরও বলা হয়, করোনার টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়াতে পারে। জনগণকে টিকা নিতে ও মাস্ক পরাতে, সামাজিক দূরত্বের নিয়ম এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করাতে যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক শীর্ষ সংস্থা সিডিসি-কে কতটা বেগ পেতে হচ্ছে, সে তথ্যও উঠে এসেছে ওই প্রেজেন্টেশনে।

[caption id="attachment_284272" align="aligncenter" width="795"] ভারতে নদীর তীর জুড়ে পুতে ফেলা হয় করোনায় মারা যাওয়া অসংখ্য মৃতদেহ। ফাইল ছবি[/caption]

সিডিসির ওই নথিতে একটি জরুরি বার্তাও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, টিকা গ্রহণে উৎসাহিত করতে জনগণকে বার্তা পৌঁছানোর পদ্ধতি ঢেলে সাজাতে হবে। অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনটি প্রায় নতুন একটি করোনাভাইরাসের মতো আচরণ করছে, এটি এমনকি ইবোলা বা সাধারণ সর্দি-জ্বরের ভাইরাসের চেয়েও দ্রুত একজন থেকে আরেকজনে ছড়াচ্ছে। আর এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে টিকা নেওয়ার কোনো বিকল্প আপাতত নেই।

টিকা পাওয়া এবং না পাওয়া- সবার জন্য চারদেওয়ালের ভেতরে লোক সমাগমস্থলে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা দিয়ে গত মঙ্গলবার যে নতুন নির্দেশনা সিডিসি জারি করেছে, তার মূল কারণ ওই নতুন গবেষণার তথ্য।

সিডিসির ওই প্রেজেন্টেশনের তথ্য-উপাত্ত বলছে, ডেল্টা ধরনটি জলবসন্তের মতোই সংক্রামক, যেখানে সংক্রমিত একজন মানুষ গড়ে আরও আট থেকে নয়জনকে সংক্রমিত করতে পারে। করোনার মূল ধরনটি এতটা সংক্রামক ছিল না, সেটা ছিল অনেকটা সাধারণ সর্দি-জ্বরের ভাইরাসের মত। এ ধরনটিওত সংক্রমিত একজন ব্যক্তি গড়ে আরও দুইজনকে সংক্রমিত করতে পারে।

সিডিসির পরিচালক ড. রোচেলি ভেলেনস্কি ওই নথির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি ব্যক্তিগতভাবে নতুন এই গবেষণার ফল যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের জানিয়েছেন।

সিডিসির গবেষণায় দেখা যায়, টিকা পাওয়া কোনো ব্যক্তি যদি ডেল্টা ধরনে সংক্রমিত হন, তিনিও টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের সমপরিমাণ ভাইরাস দেহে বহন করেন।

সান ফ্র্যানসিসকোর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব মেডিসিনের চেয়ারম্যান রবার্ট ওয়াচার বলেন, এই গবেষণাপত্রটি পড়ে তিনি অনেক বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

এই তথ্য এখন সিডিসির কাজকে আরও বেশি কঠিন করে তুলেছে। টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমেও এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। ফলে বিধিনিষেধ সবার ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য বলে মনে করছে সিডিসি।

ওই বৈঠকের একটি স্লাইডে দেখানো হয়েছে, তরুণদের তুলনায় বৃদ্ধদের হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি, টিকা নেওয়া থাক বা না থাক। আরেকটি হিসাবে দেখানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ কোটি ২০ লাখ টিকাপ্রাপ্ত নাগরিকের মধ্যে প্রতি সপ্তাহে ৩৫ হাজারের মধ্যে উপসর্গযুক্ত সংক্রমণ ধরা পড়ছে।

সিডিসির নথিতে এও জানানো হয়েছে, যেসব রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জন্য এবং নার্সিং হোমের বাসিন্দাদের জন্য টিকা খুব বেশি কার্যকর হচ্ছে না। তাই ঝুঁকিতে থাকা এই শ্রেণির জন্য অতিরিক্ত আরেক ডোজ টিকা দরকার হতে পারে।

[caption id="attachment_289183" align="aligncenter" width="600"] ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।[/caption]

জনগণ টিকা নেওয়ার পরেও সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনার খবর জানলে টিকার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যেতে পারে। তাই রোগ প্রতিরোধের বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন কৌশল নির্ধারণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে সিডিসির নথিতে।

এমোরি ভ্যাকসিন সেন্টারের প্রধান ড. ওয়াল্টার ওরেনস্টাইন বলেন, ‘টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা করোনার ডেল্টা ধরনে সংক্রমিত হলে তাদের দেহে ভাইরাসের পরিমাণ টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের সমানই হয়। তবে নথি বলছে, টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা অনেক বেশি নিরাপদ থাকেন। টিকা ৯০ শতাংশের বেশি গুরুতর অসুস্থতা থেকে সুরক্ষা দেয়। তবে হয়ত সংক্রমণ রোধে তা কম কার্যকর। তাই টিকা দেওয়া হলেও নাগরিকদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

সিডিসির নথি বলছে, টিকা নিলে গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যুর ঝুঁকি ১০ গুণ এবং সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি তিন গুণ কমে যায়।

সিডিসি বলছে, লড়াই যদি বদলে যায়, সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসাবও বদলে যাবে।