×

জাতীয়

ভোক্তা অধিকারে অভিযোগের পাহাড় : ইভ্যালি নিয়ে পদক্ষেপ শিগগির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২১, ০৮:৫০ এএম

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি নিয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। ইভ্যালির গ্রাহক প্রতারণার কর্মকাণ্ড নিয়ে এসব সংস্থার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে যে কোনো সময় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে ইভ্যালির বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। এসব অভিযোগের শুনানি শেষে নিয়ম অনুযায়ী মামলা করবে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। আর ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব) আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব দিতে বলেছে। সেই সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও আগামী ১ আগস্টের মধ্যে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা জমা দিতে বলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন দেশের ই-কমার্স নিয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় যে যার মতো ওয়েবসাইট খুলে ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছে। সেক্ষেত্রে আইন-কানুন মানার কোনো বালাই ছিল না। গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহের নাম করে নিজের আখের গুছিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এমনি এক প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি গত তিন বছরে গ্রাহক ও সরবরাহকারীর কাছ থেকে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। যার তদন্ত চলমান রয়েছে। ইভ্যালির বিভিন্ন অফার নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। গত ১০ মাস ধরে ইভ্যালির আইনবহির্ভূত অফারের বিষয়ে তদন্ত করেছে। সর্বশেষ ইভ্যালির ঈদ অফার নিয়ে তদন্তে আইন ভঙ্গের প্রমাণ পেয়েছে প্রতিযোগিতা কমিশন। অফারসহ আরো বেশকিছু বিষয়ে তদন্ত করছে বাজার মনিটরিংকারী সরকারি এই প্রতিষ্ঠান।

এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা ইভ্যালির নানা অফার নিয়ে গত ১০ মাস ধরে তদন্ত করছি। ইতোমধ্যে আমরা প্রাথমিক একটি প্রতিবেদনও দিয়েছি। সর্বশেষ ইভ্যালির ঈদ অফার নিয়ে তদন্ত করেছি। ইভ্যালির দেয়া ঈদ অফারে আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। আরো কিছু বিষয়ে তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুব শিগগিরই ইভ্যালি নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ই-কমার্স খাতকে নিয়মের মধ্যে আনতে ই-কমার্স নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করা ইভ্যালি নিয়ে শিগগিরই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। আর ইভ্যালির ভবিষ্যৎ প্রতারণা ঠেকাতে তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা আগামী ১ আগস্টের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ই-কমার্স খাতে ব্যবসায়িক বিষয়গুলো নজরদারিতে রাখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিকার ও মন্ত্রণালয়ের তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও নিশ্চিত করেছে মন্ত্রণালয় সূত্র। এছাড়া ইভ্যালিসহ ১০ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ডব্লিউটিও সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আগামী ১ আগস্টের মধ্যে ইভ্যালিকে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা জমা দিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ভোক্তা অধিকার ও প্রতিযোগিতা কমিশন তদন্ত করছে বিষয়টি নিয়ে। এছাড়া আরো কিছু বিষয় রয়েছে, যা মন্ত্রণালয় দেখছে বলে জানান সরকারের এই উচ্চপদের কর্মকর্তা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারের এমন পদক্ষেপের পরও থেমে নেই ইভ্যালি। এখনো গ্রাহকের কাছ থেকে অর্ডার নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ টি-টেন অফার এখনো ঝুলছে ইভ্যালির ওয়েবসাইটে। আর ইভ্যালির ফেসবুক পেজে শত শত গ্রাহকের আকুতি পণ্য বা টাকা ফেরত পাওয়ার। কিন্তু সবাইকে একই ম্যাসেজ দেয়া হচ্ছে, ‘ধৈর্য ধরুন’। অনেকে বলছেন, টি-টেন অফারে ১০ দিনে পণ্য ডেলিভারির কথা বলা হলেও মাস পেরিয়ে গেলেও যোগাযোগ করতে পারছেন না ইভ্যালির সঙ্গে। চলতি মাসের শুরুতে লকডাউনের অজুহাতে অফিস বন্ধ করে দেয় ইভ্যালি। তখন থেকে অদ্যাবদি বন্ধ রয়েছে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইভ্যালির প্রধান কার্যালয়। প্রতিদিনই দেশের নানা প্রান্ত থেকে গ্রাহকরা অফিসে আসছেন। আর ইভ্যালির হটলাইনে ফোন করেও কোনো সাড়া মিলছে না। ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেলের ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ধানমন্ডির অফিসের সামনে কর্মরত নিরাপত্তাকর্মীরা বলছেন ইভ্যালি এখান থেকে সরিয়ে এমডির বাড়ি সাভারের বালিয়াপুরে নেয়া হচ্ছে। সেখানে গিয়েও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। গত শনিবার রাতে ফোন বন্ধ করে ফেসবুক লাইভে এসে ইভ্যালিতে অর্ডার করা পণ্য ডেলিভারির জন্য ৬ মাসের সময় চান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল।

ভোক্তা অধিকার ও ইক্যাব সূত্রে জানা গেছে, ইভ্যালি নিয়ে গ্রাহকের শত শত অভিযোগ পড়েছে ভোক্তা অধিকারে। এসব অভিযোগের শুনানি শেষে নিয়ম অনুযায়ী মামলা করবে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। দিনে দিনে অভিযোগের পাহাড় জমেছে ই-কমার্স নিয়ে। ইতোমধ্যে বেশকিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নামে মামলাও করেছে ভোক্তা অধিকার। এদিকে চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে ইভ্যালিকে কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব দিতে বলা হয়েছে ইক্যাবের পক্ষ থেকে। এ সময়ের মধ্যে চিঠির যৌক্তিক জবাব না পেলে ব্যবস্থা নেবে ইক্যাব।

এ বিষয়ে ইক্যাবের সহসভাপতি ও মুখপাত্র মো. শাহাব উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে ইভ্যালিকে কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে চিঠির জবাব না দিলে ব্যবস্থা নেবে ইক্যাব, জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App