×

সারাদেশ

বড়পুকুরিয়ায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ, বন্ধ কয়লা উৎপাদন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২১, ০৮:১৮ পিএম

বড়পুকুরিয়ায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ, বন্ধ কয়লা উৎপাদন

বাংলাদেশী খনি শ্রমিকদের তুলনায় চীনা শ্রমিকদের মধ্যে সংক্রমণ বেশি।

পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া খনিতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কয়লা উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশী খনি শ্রমিকদের তুলনায় চীনা শ্রমিকদের মধ্যে সংক্রমণ বেশি। এছাড়া খনির বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী সংক্রমিত হয়ে পড়েছে। এদিকে, কয়লা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ ১১ মাস পর ৫১০ জন বাংলাদেশী শ্রমিক নিজ নিজ বাড়ী ফিরে গেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এসব শ্রমিক খনির ভিতরে অবস্থান করে কয়লা উত্তোলন কাজে নিয়োজিত ছিল।

জানা গেছে, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধিনে ১ হাজার ১৪২ জন বাংলাদেশী শ্রমিক নিবন্ধিত রয়েছে। এরমধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে কর্মরত ছিল প্রায় ৬ শত শ্রমিক।

বাংলাদেশী শ্রমিকদের পাশাপাশি তিন শতাধিক চীনা শ্রমিকও নিয়োজিত রয়েছে। গত ৭ দিনের ব্যবধানে কমপক্ষে ৩০ জন চীনা শ্রমিককের কোভিড-১৯ পরীক্ষায় পজেটিভ আসে। এতে করে এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম ও খনি কর্তৃপক্ষ চিন্তিত হয়ে পড়ে।

কারণ কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করা হয়। খনি কম্পাউন্ডের বাহিরে কাউকে যেতে দেওয়া হয় না এবং বাহির থেকেও কাউকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এ অবস্থায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও খনি কর্তৃপক্ষ গত রোববার থেকে কয়লা উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।

কয়লা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকরা খনির ভিতরে অবস্থান করতে অনিহা প্রকাশ করে আন্দোলন শুরু করে। পরে খনি কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গত রোববার শ্রমিকদের বাড়ী যাওয়ার অনুমতি দিলে শ্রমিকরা নিজ নিজ বাড়ী চলে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন খনি শ্রমিক জানান, এক্সএমসি-সিএমসি ও খনি কর্তৃপক্ষ সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও খনি কম্পাউন্ডের ভিতরে ভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর কারণ বেশিরভাগ খনির কর্মকর্তা এবং চীনা শ্রমিক সন্ধ্যার পরে খনি কম্পাউন্ডের বাহিরে যেতো বাজার করতে বা ঘোরাঘুরি করতে। এরফলে খনির ভিতরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পরে বলে তারা অভিযোগ করেন।

খনি শ্রমিক নেতা নুর ইসলাম বলেন, এতদিন আমরা কারাগারে ছিলাম। দীর্ঘ কারাবাস থেকে মুক্তি পাওয়ায় খনি শ্রমিকদের কেউ কেউ কিছুটা স্বস্তি বোধ করলেও অনেকেই দুশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়েছেন। কারণ ঠিকাদারের অধিনে তারা "কাজ আছে বেতন আছে, কাছ নেই বেতন নেই" শর্তে নিয়োজিত। এখন তারা পুরোপুরি বেকার হয়ে গেল।

খনি শ্রমিক মামুন জানান, তারা আমাদের সেখানে কোয়ারেন্টাইন থাকতে বলেছিল। কিন্তু সেখানে থাকার মত পরিস্থিতি ছিল না।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান জানান, আমরা খনি অভ্যন্তরে সংক্রমণ রোধ করার চেষ্টা করেছি। এরপরও খনিতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এক্সএমসির-সিএমসি কনসোর্টিয়ামের চুক্তির মেয়াদ এ বছরের ১১ আগস্ট শেষ হবে। ঠিকাদারের উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছিল ৩.২ মিলিয়ন টন। যা গত ২০ জুলাই তারা অর্জন করেছে।

তিনি আরও বলেন, খনি ইয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টন কয়লা মজুদ রয়েছে। মজুদ কয়লা দিয়ে পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আগামী নভেম্বর পর্যন্ত চালানো যাবে। তবে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ নতুন চুক্তির আওতায় এক্সএমসির-সিএমসি কনসোর্টিয়াম পুনরায় কয়লা উৎপাদন শুরু করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App