×

শিক্ষা

তদন্তে নেমেছে ইইড : ভিকারুননিসায় এত অনিয়ম!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২১, ০৮:৫৪ এএম

রাজধানীর অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ ঘিরে বিতর্ক যেন থামছেই না। কোরবানির ঈদের আগে গরুর হাট বসানো এবং পরে উঠিয়ে নেওয়া, করোনায় দেড় বছর ধরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অভিভাবকদের চাপ দিয়ে বেতন আদায়, ভর্তি বাণিজ্য, উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি-অনিয়মসহ নানা অভিযোগে জেরবার হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব ঘিরে নানা বিতর্কের মধ্যেই অভিভাবকদের গালি দেওয়া এবং সেই গালি দেয়ার অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় চরম ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে ৭০ বছরের পুরনো এই বিদ্যাপীঠ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে টেলিফোনে এক অভিভাবককে গালি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি একজন অভিভাবক অধ্যক্ষের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তাকে গালি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ভিকারুননিসা অভিভাবক ফোরাম।

যদিও অধ্যক্ষ কামরুন নাহার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, অভিভাবক ফোরাম নামে অভিভাবকদের একটি সংগঠন নানাভাবে তাকে হেয় করার চেষ্টা করছে। আর গালি দেওয়ার ফোন কল রেকর্ডটি এডিট করা। অভিভাবকদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়নি বলেও দাবি করেন অধ্যক্ষ।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ সুজন বলেন, অধ্যক্ষের সঙ্গে মীর শাহবুদ্দিন টিপু নামের এক অভিভাবক টেলিফোনে কথা বলতে গেলে তিনি তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। অভিভাবক তার কাছে অফিস করা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি গালাগালি শুরু করেন। অধ্যক্ষ নিজের রাজনৈতিক প্রভাবের কথাও বলেছেন। আবদুল মজিদ আরও বলেন, কিছু দিন আগে অধ্যক্ষ গরুর হাট বসিয়েছেন। তার প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম আমরা। এরপর থেকে তিনি অভিভাবকদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ শুরু করেছেন।

ফোনকল রেকর্ডের বিষয়ে অধ্যক্ষ কামরুন নাহার বলেন, আমার সঙ্গে কোনো অভিভাবকের ফোনে কথা হয় না। তাই গালাগাল করার প্রশ্নই আসে না। অধ্যক্ষ আরও বলেন, অভিভাবক ফোরাম বিভিন্ন অজুহাতে ক্যাম্পাসে ব্যবসা করার ফন্দি করছে। সেই ব্যবসার অনুমতি না দেওয়ায় নানা অপপ্রচার শুরু করেছে তারা। কয়েক জন অভিভাবকের অন্যায় দাবি না মানায় আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিষয়টি ইতোমধ্যে শিক্ষা সচিবকে জানিয়েছি আমি। তিনি বলেন, আমি সরকারি চাকরি করি। সরকারের দেওয়া দায়িত্ব পালন করছি। কোনো অভিভাবকের যদি আমাকে নিয়ে সমস্যা থাকে, তদবির করে বদলি করে দিক। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার যেন না করে।

ভিকারুননিসার উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির সরেজমিন তদন্তে ইইডি : ভর্তি বাণিজ্য, শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ এবং ঠিকাদারি কাজের বিল পরিশোধ না করার অভিযোগের পর এবার উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্নীতির সরেজমিন তদন্ত করতে সম্প্রতি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি) একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা আগের অভিযোগগুলোর তদন্ত চলার পাশাপাশি এই অভিযোগেরও তদন্ত চলবে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির মাধ্যমিক শাখার সদস্য (অভিভাবক প্রতিনিধি) সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করলেও বিল কাজের বিল-ভাউচার জমা দিচ্ছেন না। গত ৮ এপ্রিল ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকার বিল-ভাউচার জমা দিতে সিদ্দিকী নাসির উদ্দিনকে চিঠি দেন অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষের চিঠিতে বলা হয়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আপনি প্রকল্প কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে বিভিন্ন কিস্তিতে ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা অগ্রিম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আজ অবধি ওই টাকার বিল-ভাউচার সমন্বয় করেননি। তারপরও বিল-ভাউচারের টাকা জমা পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

শেষ পর্যন্ত গত ১৭ মে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে (ইইডি) অভিযোগ করে অধ্যক্ষ। এরপর ৩০ জুন ইইডি তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ইইডির সহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে গঠন করা কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন- উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান এবং উপসহকারী প্রকৌশলী শামসুল আলম। সরেজমিন তদন্ত করে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়।

উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুন নাহার বলেন, বিল-ভাউচার এখনো সমন্বয় করেননি সংশ্লিষ্ট সদস্য। উল্টো আমাকে বলেছেন, আমি নাকি বিল-ভাউচার চাইতে পারি না।

এদিকে শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, ভর্তিসহ কলেজের যাবতীয় কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ, ভর্তি বাণিজ্য ও কলেজের উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কাজে আর্থিক অনিয়মের চেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বর্ডির সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। গত ১৮ জুলাই ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঞাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। সরেজমিন তদন্ত করে পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App