করোনা সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপও। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত মোট এক হাজার ৬৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে গতকাল রবিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০৫ জন ডেঙ্গু রোগী। আগের দিন শনিবারও ১০৪ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এদিকে করোনার চিকিৎসা আর ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা এক হাসপাতালে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় আলাদা হাসপাতাল নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরমধ্যে রয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতালসহ আরও কয়েকটি হাসপাতাল। গতকাল রবিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টারে নির্মাণাধীন ফিল্ড হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এই তথ্য জানান।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। প্রায় ১২শ’ রোগী ইতোমধ্যে ভর্তি হয়েছে। আমাদের নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা, করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা, টেস্ট ও টিকা এসব মিলিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তাই আমরা আজকে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল চিহ্নিত করেছি, যেখানে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ যেখানে করোনা রোগীর চিকিৎসা হয়, সেখানে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়।

অন্যদিকে গতকাল করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে জনগণকে অবহেলা না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার এন্টিজেন কিটের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে এ পরীক্ষাটি বিনামূল্যে করার সুযোগ রয়েছে। উপসর্গ দেখা দিলে বিলম্ব না করে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার অনুরোধ জানান তিনি।

কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ১০২ জন ও বাইরের হাসপাতালে তিনজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে এখনো ভর্তি আছেন মোট ৪৬০ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪৫৪ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ছয়জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। ডেঙ্গু সন্দেহে মৃত তিনজনের তথ্য পর্যালোচনা করার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। মাস অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে নয়জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মে মাসে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন এবং চলতি জুলাই মাসে (২৫ জুলাই পর্যন্ত) এক হাজার ৩০৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।