×

জাতীয়

নাশকতা নয়, লক্কড়মার্কা ফেরি আর চালকের অসর্তকতা দায়ি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২১, ০৮:২১ পিএম

পদ্মা সেতুর পিলারে শাহজালালের ধাক্কা দেয়ার ঘটনায় নাশকতার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে পাওয়া গেছে ফেরির যান্ত্রিক ত্রুটি ও চালকের অবহেলার তথ্য। দুর্ঘটনার আগ মুহুর্তে লক্কড় মার্কা ফেরিটির নিয়ন্ত্রণ হারান চালক। তীব্র স্রোতের টানে সেটি ধাক্কা দেয় সেতুর পিলারে। ফেরি পরিচালনায় আগে থাকতে সতর্ক হলে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত শুক্রবার সকালে বিআইডব্লিউটিসির ফেরি শাহজালাল পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় এর ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরির ২০ যাত্রী আহত হন এবং কয়েকটি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই সাময়িক বরখাস্ত করা হয় ফেরির ইনচার্জ ইনল্যান্ড মাস্টার আব্দুর রহমানকে। দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে বিআইডব্লিউটিসির বাণিজ্যিক বিভাগের পরিচালক এস এম আশিকুজ্জামানকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রাত ১০টার দিকে শিবচর থানায় জিডি করেন পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের।

এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক এস এম আশিকুজ্জামান জানান, দুর্ঘটনার দিন বিকালে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মাস্টারের বক্তব্য শোনেন এবং বিভিন্ন লোকজনের স্বাক্ষ্য নেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কমিটি লিখিত প্রতিবেদন জমা দিবে। দুর্ঘটনার পেছনে নাশকতার উদ্দেশ্য থাকতে পারে কি না এমন প্রসঙ্গে তিনি সরাসরি উত্তর দিতে অস্বীকার করেন। তবে বলেন, পদ্মা সেতুর পিলার এর চেয়ে অনেক বেশি ধাক্কা সহ্য করতে পারবে। পিলারগুলোর সুরক্ষায় কংক্রিটের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। তাই ফেরির ধাক্কায় এ পিলার ভাঙ্গার চিন্তা কারো করার কথা না। বরং আরো জোরে আঘাত লাগলে ফেরিটিই ডুবে যেতে পারত বা ক্ষয়ক্ষতি হতে বেশি হতে পারত। যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়েও কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

অন্যদিকে, বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাইদুর রহমান জানান, বর্তমানে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে হাজরা চ্যানেল দিয়ে ফেরিগুলো চলাচল করে। সেখানে নাব্য সংকট নেই। প্রায় ২০-২৫ ফুট পানি রয়েছে। একই সঙ্গে নদীতে রয়েছে প্রচণ্ড স্রোত। স্রোতের কারণে এখানে নৌযানের নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন। আর যেহেতু ফেরিগুলোকে দুই পিলারের মাখখান দিয়ে নদী পার হতে হয়, সে কারণে আরো বেশি সতর্কতা দরকার। একটু বেখেয়াল হলেই ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

এদিকে, ফেরিটিতে আগে থাকতেই যান্ত্রিক নানা ত্রুটি ছিল বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেরির এক কর্মচারী। তিনি জানান, এর কিছুদিন আগে ফেরির জেনারেটর ও ইলেক্ট্রিক্যাল লাইনে ত্রুটি দেখা দেয়। ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় ফেরির অন্যন্য যন্ত্রপাতির অবস্থাও ভাল না। আবার তেলের টাকা পকেটে ভড়ার জন্য অনেক সময় চালক স্রোতের মধ্যে ফেরি ভাসিয়ে দিয়ে বসে থাকেন। অনেক সময় স্টিয়ারিংও থাকে সহকারির হাতে। দুর্ঘটনার পেছনে এসবও দায়ি থাকতে পারে বলে জানান তিনি। দুর্ঘটনার পর গতকাল পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ পিলারগুলোকে ঘিরে মার্কিং বা সতর্কতামূলক চিহ্ন বসিয়েছে। এতে নৌযানগুলোর জন্য রাতে চলতে সুবিধা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই রুটে চলাচলকারী নৌযানের চালকরা।

এদিকে, ফেরি শাহজালালের মাস্টার আব্দুর রহমানকে শনিবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে শিবচর থানা পুলিশ। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন জানান, পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের করা জিডির (সাধারণ ডায়েরি) তদন্ত করতে গিয়ে মাস্টারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাকে পুলিশি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তবে তাকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনি জানান, পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের দুর্ঘটনার রাতে জিডিটি করেন, যার নম্বর ৮৯১। জিডিতে ফেরি শাহজালালের ফিটনেস ছিল কি-না, চালকের যথাযথ যোগ্যতা, শারীরিক সুস্থতা ও কোনো অবহেলা ছিল কি-না, এসব বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App