×

সারাদেশ

ধুনটে কোরবানির মাংস মিলেনি সমাজচ্যুত ৯ পরিবারের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২১, ১২:৫৮ পিএম

ধুনটে কোরবানির মাংস মিলেনি সমাজচ্যুত ৯ পরিবারের

বগুড়ার ধুন‌টে সমাজচ্যুত ৯টি প‌রিবার।

শুক্রবার ঈদের তৃতীয় দিন। অথচ ঈদের তিন দিনেও কোরবানির মাংস খাওয়া হয়নি বেহুলা বেওয়ার। গ্রাম্য মাতবরদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিনি সমাজচ্যুত। একই অবস্থা ফটিক সরকারের। তিনি পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দিতে বাজার থেকে কিনে এনেছিলেন মাংস। পবিত্র ঈদুল আজহার তিন দিনেও ভাগ্যে কোরবানির মাংস মেলেনি বগুড়ার ধুনট উপজেলার মরিচতলা গ্রামের সমাজচ্যুত ৯টি পরিবারের।

গ্রামবাসী জানান, মরিচতলা গ্রামে ১৬৫টি পরিবার নিয়ে একটি সমাজ রয়েছে। প্রতি বছর সমাজের বিত্তবানরা কোরবানি দেন। আর মাংস বণ্টন করা হয় সমাজের সব সদস্যদের মধ্যে। গ্রামের সামাজিক উন্নয়নে সমাজের সব সদস্যরা ভূমিকা রাখেন। কিন্তু সমাজের সদস্যদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয় মসজিদের উন্নয়ন কাজ নিয়ে।

তিন বছর আগে মরিচতলা পুরাতন জামে মসজিদের উন্নয়ন কাজের সিদ্ধান্ত নেন সমাজের মাতবরগণ। এজন্য সমাজের সব সদস্যদের মধ্যে সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা নির্ধারণ করেন। কিন্তু মাতবরদের সিদ্ধান্ত মতে চাঁদা দিতে আপত্তি তোলেন ৩২টি পরিবার। বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় ওই সমাজের। এক পর্যায়ে ওই ৩২টি পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়।

গত তিন বছরে ৩২টি পরিবারের মধ্যে কয়েকটি পরিবার পার্শ্ববর্তী গ্রাম বা মহল্লার সমাজগুলোতে অর্ন্তভূক্ত হোন। আর মরিচলতা গ্রামের সমাজে ৩ বছরে পর্যায়ক্রমে ১২/১৪টি পরিবারকে ফিরিয়ে নেন মাতবররা। বর্তমানে ওই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, ফটিক সরকার, বাবু মিয়া, সোহরাব আলী, বেহুলা বেওয়া, আবুল কালাম, শহিদুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন ও হেলাল উদ্দিনের পরিবার সমাজচ্যুত রয়েছে।

এবারের কোরবানির ঈদকে ঘিরে সমাজচ্যুত পরিবারগুলো গ্রামের মাতবরদের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করেন। তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে সমাজচ্যুত পরিবারগুলো মাফ চেয়ে সমাজে ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন করেন। অথচ গ্রাম্য মাতবরগণ তাদের আবেদন নাকচ করে সমাজচ্যুত করে দেন। যার কারণে কোরবানির গোশত থেকে বঞ্চিত হোন সমাজচ্যুত ৯টি পরিবারের সদস্যরা।

সমাজচ্যুত ফটিক সরকার জানান, মসজিদের চাঁদা নিয়ে বিবাদ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে সমাজের ৩২টি পরিবারকে সমাজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে অনেক পরিবারকে সমাজে ফিরিয়ে নেওয়া হলেও শুধু ৯টি পরিবারকে এখন সমাজচ্যুত করে রাখা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ফটিক সরকার বলেন, কোরবানির গোশত পাইনি। যার কারণে পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে বাজার থেকে মুরগী কিনে এনেছিলাম।

জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমি মসজিদের চাঁদা দিয়েছি। গরিববদের নিয়ে প্রতিবাদ করায় এ বছর তারা আমাকেও সমাজের কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত করেছে।

সমাজের মাতবর মাসুদ সরকার বলেন, মসজিদ উন্নয়নে অংশ না নিয়ে বিবাদ সৃষ্টি করে ৩২টি পরিবার সমাজ থেকে চলে গিয়ে পৃথক সমাজ তৈরি করে। সেখানে তাদের কোরবানির কার্যক্রম পৃথকভাবে হয়ে থাকে। এ কারণে তাদের বিষয়ে আমরা কোন খোঁজ খবর রাখি না।

ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুল করিম আপেল ভো‌রের কাগজ‌কে বলেন, ৯টি পরিবারের সমাজচ্যুত হওয়ার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তারা কোরবানির গোশত পাননি, এটি দুঃখজনক ঘটনা। আমি উভয় পক্ষে সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নিয়েছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App