×

সারাদেশ

জ্বরের সিরাপ খেয়ে বড় ভাইয়ের মৃত্যু, আশংকাজনক ছোট ভাইও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২১, ০৮:৩৭ পিএম

জ্বরের সিরাপ খেয়ে বড় ভাইয়ের মৃত্যু, আশংকাজনক ছোট ভাইও

বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের “পল” সিরাপ নামক জ্বরের ঔষধ সেবন করে রশিদুল ইসলাম নামে ৫ বছর বয়সের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে শিশুটির পরিবার। গত শুক্রবার রাতে শিশুটি মারা যায়। একই পরিবারের বায়েজিদ নামের ১ বছর বয়সের অপর এক শিশু গুরুতর অসুস্থ হয়েছে। পরে তাকে শুক্রবার রাতে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে আইসিইউতে ৭২ ঘন্টার নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখে। এদিকে খবর পেয়ে বোদা থানা পুলিশ ঘটনাসস্থলে গিয়ে সিরাপ জব্দ করেছে এবং শিশুটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। নিহত ও অসুস্থ শিশু দুইটি জেলার বোদা উপজেলার ঝলইশালশিরি ইউনিয়নের চশ পাড়া গ্রামের শাহিরুল ইসলামের ছেলে।

শিশু দুইটির বাবা শাহিরুল ইসলাম জানান, তার দুই সন্তান রশিদুল ইসলাম (৫) ও বায়েজিদের (১) গায়ে জ¦র এলে শুক্রবার (২৩ জুলাই) বিকালে তার বাড়ির পাশে বোদা উপজেলার কালিয়াগঞ্জ বাজারের পল্লী চিকিৎসক মোতালেব এর কাছে সন্তানদের চিকিৎসার জন্য যায়। পল্লী চিকিৎসক মোতালেব তাকে গ্লোব ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানীর পল সিরাপ সেবন করার পরামর্শ প্রদান করে। ওই পল্লী চিকিৎসকের দেয়া ঔষধ শুক্রবার রাতে শিশু দুইটি খাওয়ানোর কিছুক্ষণ পরে নাক ও মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে শুরু হয়। পরে শিশু দুইটির শারিরিক অবস্থার অবনতি হলে বাবা শাহিরুল তাদের বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. মাহমুদ আলম শাহ সুজন তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। পরে তাদের ঠাকুরগাঁও নেয়ার পথে শিশু রশিদুল ইসলাম মৃত্যু বরণ করে। অপর শিশু বায়েজিদকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসক তাকে ৭২ ঘন্টা নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখে। তবে তার অবস্থাও আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন জরুরী বিভাগের চিকিৎসক।

বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার ডা.মাহমুদ আলম শাহ সুজন জানান, ঔষধের বিষক্রিয়ায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তিনি জানান যখন শিশু দুইটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তাদের মুখ থেকে লালা বের হচ্ছে। তাদের মুখ থেকে বিষক্রিয়ার মত দূর্গন্ধ বের হচ্ছিল। শিশু দুইটি শরীরে খিচুনি ছিল। যে ঔষুধ তাদেরকে সেবন করানো হয়েছিল সে ঔষধের বোতল থেকেও দূর্গন্ধ বের হচ্ছিল।

পল্লী চিকিৎসক মোতালেবের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি গ্লোব ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানীর পল সিরাপ সেবনের জন্য দেয়া হয়েছে বলে স্বীকার করে জানান, ওই পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে তার কাছে চিকিৎসা পরামর্শ ও ঔষধ ক্রয় করে আসছিল। তবে ঘটনার পর ওই পল্লী চিকিৎসক গাঁ ঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

ওই এলাকার আকবর আলী ও দরিরুল ইসলাম জানান, পল্লী চিকিৎসক মোতালেব লাইসেন্স বিহীন দোকানে ঔষধ বিক্রি করে আসছিল। তার দোকানে প্রায়ঃশ মেয়াদ উত্তীর্ণ পাওয়া যেত। চিকিৎসা বিদ্যায় তার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিলনা। সল্প প্রশিক্ষণ নিয়ে সে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছিল।ঝলইশালশিরি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, ঔষধ সেবন করে এক শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত করে দোষী ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, শনিবার সকালে মৃত শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে এবং ওই সিরাপের বোতল জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত সিরাপের বোতল পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্তের রির্পোট ও ঔষধ পরীক্ষার রির্পোট আসলে বোঝা যাবে আসলে বিষয়টি কি ঘটেছিল। তবে এ বিষয়ে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আমরা আইন অনুযায়ী পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App