×

সারাদেশ

নাটোরে বর্ষায় ডিঙ্গি নৌকা বিক্রি নিয়ে দুঃচিন্তায় মালিকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২১, ০৩:০১ পিএম

নাটোরে বর্ষায় ডিঙ্গি নৌকা বিক্রি নিয়ে দুঃচিন্তায় মালিকরা

ডিঙি নৌকার ব্যবসায়ও করোনা মহামারির ছাপ। লোকসানে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।

বর্ষায় পানিতে ভরপুর। চলনবিল ফিরে পেয়েছে তার চিরচেনা রূপে। ঐতিহ্যবাহী বাহারি সব ডিঙ্গি নৌকার পশরা সাজিয়ে বসে রয়েছেন কারখানার মালিকরা। কিন্তু বৈশ্বয়িক সমস্যা করোনা আর সেই সঙ্গে তৃতীয় বারের মতো শুরু হয়েছে লকডাউন। হাট বাজার বন্ধ থাকায় আসতে পারছে না ক্রেতারা। ফলে ভরা মৌসুমেও বেচাবিক্রি না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ চলনবিলের নৌকা ব্যাবসায়ীরা পরেছেন দুঃশ্চিন্তায়।

বর্ষায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম, এক পাড়া থেকে অন্য পাড়া, স্কুল-কলেজ-হাটবাজারসহ যোগাযোগের সব জায়গায় ভাসমান মানুষের নিত্যসঙ্গী এসব ডিঙ্গি নৌকা। বর্ষা এলেই চারদিক জলে ডুবে যায় চলনবিলের মাঠঘাট-রাস্তাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। চলনবিল এলাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট (সাবমার্চেবল) বর্ষা এলেই পানির নিচে ডুবে যায়। তখন ডিঙ্গি নৌকাই হয় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। তাই বর্ষা এলেই বেড়ে যায় এসব ডিঙ্গি নৌকার ব্যাপক চাহিদা। স্থানীয় বাজারগুলোতে বেড়ে যায় কাঠমিস্ত্রিদের ব্যস্ততা। কিন্তু সম্প্রতি লকডাউনের কবলে পরে মৃত্যুপ্রায় কারখানাগুলো।

চাঁচকৈড় হাট ঘুরে দেখা গেছে, পূর্বে ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসত নৌকা বিক্রির হাট। ১৫ থেকে ২০টি কারখানায় তৈরি হতো অসংখ্য নৌকা। বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আসতো নৌকা কিনতে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতো নৌকা বেঁচাকেনা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যেতো বিভিন্ন জেলাতেও। কিন্তু বর্তমানে লকডাউনের ফলে ব্যাবসায় দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। ক্রেতা শুন্য কারখানাগুলোতেও দেখা দিয়েছে হাহাকার।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশের বিলকাঠোর গ্রাম থেকে আব্দুর রহমান ও নাদোসৈয়দপুরের জব্বার শেখের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষায় চারদিক ডুবে গেলে কোনো কাজকর্ম থাকেনা। তখন বিকল্প পেশা হিসেবে মানুষ পারাপারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি এসব ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে। এ কারণে তারা চাঁচকৈড় হাটে এসেছিলেন ডিঙ্গি নৌকা কিনতে। কিন্তু প্রশাসনের কঠোর নজরদারীতে নৌকা কেনা তো দুরের কথা,হাটেই প্রবেশ করতে পারছিনা। আমাদের তো পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। ফার্নিচার মালিক সমিতির সভাপতি ইয়ারুল এবং সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আন্টু জানান, নৌকার চাহিদা থাকা সত্বেও করোনা আর লকডাউনের কারনে বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। কাঠ মিস্ত্রীদের বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হচ্ছে। এদিকে কাঠ ও প্লেনসিটের দামও বেড়ে যাবার কারনে নৌকা প্রতি করচও বেড়েছে। ১০ হাত মাপের একটা কাঠের ডিঙ্গি নৌকায় আগে খরচ হতো ১ হাজার ৫শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। প্লেনশিটের তৈরি ডিঙ্গি নৌকা আকার ভেদে বিক্রি হতো ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে খরচ হচ্ছে কাঠের ডিঙ্গি ২ থেকে ৩ হাজার এবং প্লেনশিটের গুলো ৩ থেকে ৪হাজারের মতো। অথচ বেচাবিক্রি নেই।

স্থানীয় নৌকা ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক, আলাল উদ্দিন ও হারুন জানান, চলনবিল এবার পানিতে ভরপুর থাকা সত্বেও গত বছররে চেয়ে এবার করোনার সঙ্গে লকডাউন যোগ হবার কারণে নৌকা ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। নৌকার দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তারা জানান, কাঠমিস্ত্রিদের মজুরি,প্লেনসিট ও কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকার দাম একটু বাড়লেও বেচা কেনা কম। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে।

গুরুদাসপুর স-মিল মালিক সমিতির সভাপতি মাহাতাব সরকার ও সাধারণ সম্পাদক কামাল সরকার বলেন, গত কয়েক বছরে নৌকা ব্যবসা ভালো হলেও এ বছর বিক্রি নেই বললেই চলে। এতে করে আড়তদার ও কারখানা মালিদের যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে তেমনি মিল মালিকরা পরেছে মহা সংকটে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App