×

জাতীয়

বৃষ্টিতে বর্জ্য-রক্ত মিলেমিশে একাকার, অপসারণ শুরু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২১, ০২:৫৮ পিএম

বৃষ্টিতে বর্জ্য-রক্ত মিলেমিশে একাকার, অপসারণ শুরু

ফাইল ছবি

বৃষ্টিতে বর্জ্য-রক্ত মিলেমিশে একাকার, অপসারণ শুরু

ফাইল ছবি

বৃষ্টিতে বর্জ্য-রক্ত মিলেমিশে একাকার, অপসারণ শুরু

কোরবানির পশুর বর্জ্য পরিস্কারের কাজ করছেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। ছবি: ভোরের কাগজ

বৃষ্টিতে বর্জ্য-রক্ত মিলেমিশে একাকার, অপসারণ শুরু

রাস্তার ওপর স্তুপ হয়ে আছে কোরবানির পশুর বর্জ্য। বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটায় খিলগাঁও থানার গোড়ান এলাকা থেকে তোলা। ছবি: ভোরের কাগজ

পবিত্র ঈদুল আজহার ঈদ জামাত শেষে হতেই পশু কোরবানি শুরু করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। দুই সিটি করপোরেশন এবার পশু জবাইয়ের জন্য সব মিলিয়ে ৩৬৫টি স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হলেও সকাল থেকে নগরীর প্রধানসড়ক, ফ্লাইওভারের নিচে রাস্তায় ও অলিগলিতে পশু জবাইয়ের দৃশ্য দেখা গেছে। নির্ধারিত স্থানগুলোতে তেমন ভিড় দেখা যায় নি। এমনকি সরুগলি থেকে শুরু করে বাসা বাড়ির আশপাশের রাস্তায় পাটি ও পলিথিন বিছিয়ে শুরু হয় পশু কোরবানী । এর মধ্যে কোথাও কোথাও দু এক পশলা বৃষ্টি কোরবানীতে কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটায়। যার ফলে পশুর রক্ত, বর্জ আর বৃষ্টির পানি মিশে একাকার। রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ছে সেসব বর্জ্য। রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে রাস্তাসহ অলি গলি। ড্রেনগুলোতে ফেলা হচ্ছে নাড়ি ভুড়ি থেকে বর্জ এমন দৃশ্য অহরত দেখা গেছে।

এদিকে সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানান হয়েছে, দুপুর দুটোর পর থেকে তারা বর্জ অপনারণের কাজে নেমে পড়েছেন। কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে এবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সাড়ে ২১ হাজার কর্মী কাজ শুরু করেছেন। ঈদের দিন দুপুর থেকে শুরু করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকার সব বর্জ্য সাফ করার লক্ষ্য ঠিক করেছেন তারা। এ কার্যক্রমের তদারক করতে দুই সিটি করপোরেশন একাধিক মনিটরিং টিম গঠন করেছে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষও খোলা হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস কোরবানির পশুর বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ বুধবার (২১ জুলাই) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের নামাজ আদায় শেষে তিনি এ ঘোষণা দেন। মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস নগরবাসীকে অনুরোধ করে বলেন, আপনারা কোরবানির বর্জ্য আমাদের নির্ধারিত স্থান ও সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের হাতে দিন। যাতে করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শহর থেকে সব বর্জ্য অপসারণ করতে পারি।

তিনি বলেন, আজ দুপুর থেকেই আমাদের পরিচ্ছন্নকর্মীরা বর্জ্য অপসারণের কাজ করবেন। আপনারা কোরবানির বর্জ্য তাদের হাতে দেবেন। তিনি বলেন, খোলা ট্রাক, পানির গাড়ি, ডাম্প ট্রাক, পে-লোডার, কন্টেইনার ক্যারিয়ার, টায়ার ডোজার, ট্রেইলার, স্কিড লোডারসহ প্রায় পৌনে ৪০০ যানবাহন ও যন্ত্রপাতি বর্জ্য অপসারণের কাজে থাকবে দক্ষিণ সিটির আওতাধীন এলাকায়। বর্জ্য যাতে যত্রতত্র ফেলা না হয়, সেজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে দেড়হাজার পরিবেশবান্ধব ব্যাগ বিতরণ করা হয়ছে বলে কাউন্সিলররা জানিয়েছেন। কোরবানি স্থানে ছিটানোর জন্য ৩০ টন ব্লিচিং পাউডার এবং ১৮০০ লিটার তরল জীবাণুনাশকও দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত পাঁচ হাজার কর্মীর পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও পাঁচ হাজার কর্মী কাজ করবেন দক্ষিণ সিটিতে।

এদিকে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা ‘বড় চ্যালেঞ্জ’। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নগরবাসীর সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য সরিয়ে নেওয়া। এ কাজে আমরা জনগণের সহযোগিতা চাচ্ছি। কারণ বর্তমানে কোভিড মহামারী চলছে, পাশাপাশি এইডিস মশার উপদ্রবও বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ঢাকাবাসীকে আরও অনেক বেশি সক্রিয় হতে হবে। তিনি সকলকে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানী দেয়া এবং বর্জ পলিথিন ব্যাগে ভরে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের হাতে তুলে দেয়ার আহ্বান জানান।

মেয়র আতিক বলেছেন, নগরবাসীকে বর্জ্য ফেলার জন্য ব্যাগসহ অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করবে সিটি করপোরেশন। এরপরও কোনো বাসার সামনে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে রাখা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে আজ সকাল থেকে রাজধানীতে কোরবানি শুরুর পর কোথাও কোথাও হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হয়। এতে পশুর বর্জ্য ও রক্ত একত্রিত হয়ে নোংরা পরিবেশ দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ মানুষ রাস্তায় কোরবানি দেওয়ায় পুরো সড়ক বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে। দুপুর পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের জিবাণুনাশক বা ব্লিসিং পাউডারযুক্ত কোনও গাড়ি দেখা যায়নি। উত্তর সিটি জানিয়েছে, তাদের নিজস্ব ২ হাজার ৬৬৭ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যবস্থাপনা মিলিয়ে মোট ১১ হাজার ৫০৮ জন কর্মী কোরবানির পশু বর্জ্য অপসারণের কাজে নিয়োজিত থাকবে।

বর্জ্য অপসারণ এবং কোরবানির পশুর হাটগুলো দ্রুত পরিষ্কার করার লক্ষে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব বর্জ্যবাহী ট্রাক, ভারী যন্ত্রপাতি, ওয়াটার বাউজারের পাশাপাশি আউটসোর্সিং করে অতিরিক্ত গাড়ি নিয়োজিত করা হবে। দৈনিক ১০ হাজার টন বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্য ধরে এসব যানবাহন ও যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকির জন্য ২২ সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে খোদ রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সামনে মগবাজার মৌচাক ফ্লাইওভার এক্সিট পয়েন্টে বিপুল সংখ্যক পশু রাস্তায় কোরবানি দিতে দেখা গেছে। এতে পুরো সড়কটি রক্তবর্ণ ধারণ করে। সাধারণত সামান্য বৃষ্টিপাত হলে ওই এলাকায় পানি জমে যায়। বুধবারের বৃষ্টি আর কোরবানি পশুর বর্জ্য ও রক্ত একত্রিত হয়ে পুরো সড়কটি রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। একই চিত্র দেখা গেছে সেগুনবাগিচা এলাকায়, খিলগাঁওসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। পুরান ঢাকার চিত্রও একই। বৃষ্টির কারণে পুরো নগরীর বিভিন্ন সড়কে পশুর রক্ত-বর্জ মিলে শিষে এক নোংরা ও চলাচল অযোগ্য অবস্থা দেখা গেছে।

এদিকে দুপুর দুইটা থেকে এসব বর্জ্য অপসারণে মাঠে নেমেছে দুই সিটি করপোরেশনের প্রায় সাড়ে ২১ হাজার কর্মী বলে সিটি কর্পোশেন সূত্রে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বর্জ্য ধুয়ে পরিষ্কার করার জন্য বেশ কিছু জিবাণুনাশক যুক্ত গাড়ি দিয়ে ধোয়া হচ্ছে বেশ কিছু এলাকায় বলে দু সিটি কর্পোরেশনের বর্জ অপসারণ বিভাগ সূত্রে জানান হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App