×

জাতীয়

কাজ হারিয়েছেন ৬০ শতাংশ মানুষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২১, ০৮:৫৪ এএম

কাজ হারিয়েছেন ৬০ শতাংশ মানুষ

ফাইল ছবি

করোনা মহামারির কারণে মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়েছে দেশের শ্রমবাজার।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে ২০১৮ সালে স্নাতকোত্তর করেছেন রাজীব পাল। এরপর থেকেই তিনি একাধিকবার সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে দুই বছর ধরে চাকরি করতেন তিনি। আশা করছিলেন, এই বছর একটা ভালো চাকরি হয়ে যাবে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে তার সেই স্বপ্ন থমকে গেছে। উপরন্তু বৈশ্বিক এই বিপর্যয়ে কোম্পানি বন্ধ হওয়ায় বেকারত্বের খাতায় নাম উঠেছে তার। বললেন, এখন তো মহামারির কারণে সবকিছুই আটকে আছে। কোনো সার্কুলার নেই, কোনো চাকরির পরীক্ষা নেই। এই মহামারি কবে শেষ হবে, কবে আবার চাকরির প্রক্রিয়া শুরু হবে, জানি না।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের চাকরির বাজারে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী যোগদান করে। এদের বড় একটি সংখ্যক স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা চলাকালে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ হলেও যুব বেকারত্বের হার ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। করোনা ভাইরাসের কারণে জুন ২০২০ সাল নাগাদ সেটি কয়েকগুণে বেড়ে গেছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ ২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ছয় কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে কাজ করেন ছয় কোটি আট লাখ নারী-পুরুষ; আর ২৭ লাখ বেকার। সেইসঙ্গে কোভিড শুরু পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত শ্রম বাজারে কাজ হারিয়েছেন ৬০ শতাংশ জনগোষ্ঠী। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবেষকরা জানাচ্ছেন, কোভিডের কারণে গত বছর বেকার হয়ে পড়েছে এ শ্রমশক্তির ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। সে হিসাবে দেশে গত বছর কর্মচ্যুত হয়েছে ২৬ লাখ ১৪ হাজার ৪০০ মানুষ।

বিশ্বব্যাংক মনে করে, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। এর ওপর প্রতিবছর নতুন করে ১৩ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে যোগ হচ্ছে। গত বছরের আগস্টে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনায় বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার দ্বিগুণ হয়েছে। আগে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি তরুণদের মধ্যে প্রতি ১০০ জনে গড়ে ১২ জন বেকার ছিলেন। এখন তা বেড়ে প্রায় ২৫ জন হয়েছে। এর সঙ্গে আছে পুরনো ২৭ লাখ বেকার।

করোনা চলাকালে শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশা এখন চরমে। বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশাচালক, হকারসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কয়েক কোটি শ্রমজীবীর ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে। লকডাউনের ফলে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে চাকরিজীবীদেরও বড় একটি অংশ এখন বিপাকে আছেন। তাদের আয় কমে গেছে অথবা একটি অংশের আয় নেই। দরিদ্রদের জন্য সরকার কিছুটা হলেও খাদ্য বা অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু এই জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের কোনো কর্মসূচি নেই। দ্রুত স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে এসব জনগোষ্ঠীকে অর্থনীতির মূল¯্রােতে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে সিপিডির ফেলো অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলা করে এদের অর্থনীতির মূলধারায় আনতে হবে। শ্রমবাজার থেকে যে ৬০ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন, তাদের সবাই কাজে ফিরতে পারেননি।

এখন দ্বিতীয় ঢেউয়ে নতুন করে আরো বেকার হয়েছেন। দিন মজুরদের কাজ নেই। দিন আনি দিন খাই মানুষের দুর্দশার অন্ত নেই। বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে ভ্যাকসিনকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর বিকল্প নেই। তখন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব। নতুবা দারিদ্র্যের কঠিন দুষ্টচক্রে পড়ে যাব আমরা।

এদিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকনোমিক মডেলিং (সানেম) জরিপ অনুযায়ী, মহামারির প্রভাবে দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য বেড়েছে রংপুর আর রাজশাহী বিভাগে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী রাজশাহীতে দারিদ্র্যের হার ৫৫ দশমিক ৫ শতাংশ; আর রংপুরে ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ময়মনসিংহে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

সানেম ও বিআইজিডি-পিপিআরসির জরিপে দেখা গেছে, গত ১৫ মাসে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে আড়াই থেকে সাড়ে তিন কোটি মানুষ। সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের বড় ভ‚মিকা থাকলেও করোনা ভাইরাসের আঘাত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের ওপরই প্রথমে পড়েছে। কাজ হারানো এই মানুষগুলো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App