×

অর্থনীতি

মেশিনগানের মুখেও নীতির বিচ্যুতি ঘটবে না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২১, ০৯:০২ এএম

পরাধীন ব্রিটিশ-ভারত থেকে পাকিস্তানের কালো অধ্যায় পেরিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। এই মহান অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো নানা ঘটনা, যার কারিগর হিসেবে কেউ আখ্যায়িত হয়েছেন নায়কের অভিধায়; কেউবা আবির্ভূত হয়েছেন খলনায়কের চরিত্রে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সেসব ঘটনা ও তার নায়ক-খলনায়কদের কার কি ভূমিকা, তাই নিয়েই অধ্যাপক আবু সাইয়িদের গ্রন্থ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’। সম্প্রতি ভোরের কাগজ প্রকাশন থেকে বের হয়েছে বইটি। এ বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে ভোরের কাগজের পাঠকদের জন্য।

১৯৭০ সনের ডিসেম্বরের পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরপরই ক্ষমতা হস্তাস্তরের প্রশ্নে কেন্দ্রের সামরিক চক্রের মনোভাব ও ষড়যন্ত্রের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু পরিজ্ঞাত হন। ১৮ জানুয়ারি বিএলএফ নেতাদের সশস্ত্রভাবে প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেন, আমরা প্রাথমিক বিজয় অর্জন করেছি। চ‚ড়ান্ত বিজয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

১৯৭১ সনের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন, পাকিস্তান সামরিক চক্র ও কায়েমি স্বার্থবাদী গ্রুপ নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় বালুচ নেতা নওয়াব আকবর খান বুগতি পাঞ্জাবি কায়েমি স্বার্থবাদী মহলের চক্রান্তের বিষয় বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেন।

ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যে কোনো কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রশ্নে ‘কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক’ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুকে সর্বময় ক্ষমতা প্রদান করে। পরদিন জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা উপরোক্ত সিদ্ধান্তের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জানায়। ওই দিনই বঙ্গবন্ধু জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের যুক্ত অধিবেশনে দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেন, ‘মেশিনগানের মুখেও নীতি বিচ্যুতি ঘটবে না।’

পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ শেখ মুজিবুর রহমানের মতলব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। তারা বিশ্বাস করেন, যদি মুজিব ক্ষমতায় বসে যান, তাহলে তিনি পাকিস্তানের স্বার্থের বিরুদ্ধে ভারতের পক্ষে অবস্থান নেবেন। তারা এটাও আশঙ্কা করেন, সব অর্থ-সম্পদ পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ব্যবহার করা হবে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হবে। ইয়াহিয়া সচেতন ছিলেন, সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র, শিল্পপতি এবং সামন্তবাদীরা বেশির ভাগ পশ্চিম পাকিস্তানি ছিল। বাঙালি সংসদ সদস্যদের কাছে তারা মাথা নত করবে না।

সরকার এবং শেখ মুজিবকে বিচলিত করার জন্য ভুট্টো ২০ ফেব্রুয়ারি করাচিতে একটি কনভেনশন আহ্বান করেন। এ কনভেনশনে পিপিপি’র ৬০০ সদস্য অংশ নেন, এদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যারা আসন্ন জাতীয় অ্যাসেম্বলিতে যাবেন। কনভেনশনে এই প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের ৬ দফা নিয়ে আলোচনা করা হয়। ভুট্টোর মূল উদ্বেগ ছিল, পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর পূর্ব পাকিস্তান খবরদারি করবে। দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার ব্যাপারে সদস্যরা শপথ নিলেন। কনভেনশনে ভুট্টো বলেন, ‘সরকারকে হয় অ্যাসেম্বলি বিলম্ব করতে হবে অথবা ১২০ দিনের সময়সীমাকে বাতিল করতে হবে।’

২০ ফেব্রুয়ারিতে যখন মেজর জেনারেল রাও ফরমান ঢাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সিএমএলএকে অবহিত করার জন্য রাওয়ালপিন্ডিতে আসেন, ইয়াহিয়া তাকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘তোমরা সবাই অক্ষম! মুজিব কেন আসেনি? তোমরা কি শাসন করছো নাকি মুজিবের আদেশ পালন করছো?’

আগামীকাল প্রকাশিত হবে মেশিনগানের মুখেও নীতির বিচ্যুতি ঘটবে না (২য় পর্ব) ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এছাড়া সংগ্রহ করা যাবে bhorerkagojprokashan.com থেকেও।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App