×

আন্তর্জাতিক

খাসোগি হত্যাকাণ্ড: স্ত্রী ও বাগদত্তার ফোনেও চলে নজরদারি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২১, ০৪:৩৩ পিএম

খাসোগি হত্যাকাণ্ড: স্ত্রী ও বাগদত্তার ফোনেও চলে নজরদারি

সাংবাদিক জামাল খাসোগি। তাকে তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর হত্যা করা হয়। ফাইল ছবি

খাসোগি হত্যাকাণ্ড: স্ত্রী ও বাগদত্তার ফোনেও চলে নজরদারি

খাশোগীর বাগদত্তা হাতিস চেঙ্গিস। ফাইল ছবি

নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার আগে ও পরে তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের মুঠোফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল। এ কাজে ব্যবহার হয়েছিল ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপের পেগাসাস নামের সফটওয়্যার। ডিজিটাল ফরেনসিক বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, খাসোগির স্ত্রী হানান এলাতার ও তাঁর বাগদত্তা হেতিজে চেঙ্গিসের ফোনে আড়ি পাতা হয়। একইভাবে আড়ি পাতা হয় খাসোগি হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শীর্ষ দুই তুর্কি কর্মকর্তার ফোনেও। [caption id="attachment_297765" align="aligncenter" width="700"] খাশোগির বাগদত্তা হাতিস চেঙ্গিস। ফাইল ছবি[/caption] এসব তথ্য উদঘাটনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিভিন্ন দেশের ১৭টি গণমাধ্যম একযোগে কাজ করেছে। এ কাজের জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পরীক্ষাগারে। এ লক্ষ্যে ৬৭টি মুঠোফোনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনস্যুলেটের ভেতরে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয়। যুবরাজ সালমানসহ সৌদি আরবের শাসকগোষ্ঠীর কঠোর সমালোচক ছিলেন খাসোগি। তাই দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে এ ঘটনার জন্য দায়ী বলে সন্দেহ করা হয়ে থাকে। সৌদি আরব শুরু থেকেই এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল। পরে বিভিন্ন তদন্তে উঠে এসেছে, এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এ হত্যাকাণ্ডের পর জানা যায়, যুবরাজ সালমানের নির্দেশে ১৫ সদস্যের একটি দল তুরস্ককে গিয়ে খাসোগিকে হত্যা করে। কিন্তু ঠিক এটুকু নয় ঘটনা। এর পেছনে ঘটনা যে আরও বড়, তার একটি চিত্র উঠে এসেছে সাংবাদিকদের এ সম্মিলিত প্রয়াসে। সাংবাদিকদের নতুন এ অনুসন্ধানে জানা গেছে, খাসোগির আরেক স্ত্রী হানান এলাতারের ফোনও ছিল পেগাসাসের লক্ষ্যবস্তু। তাঁর ফোনটি ছিল অ্যান্ড্রয়েড ফোন। হানান ছিলেন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট। তিনি খাসোগির প্রেমে পড়েছিলেন এবং ২০১৮ সালের জুনে এলাতারকে বিয়ে করেন খাসোগি। খাসোগির বাগদত্তা হেতিজে চেঙ্গিসের ফোনও ছিল লক্ষ্যবস্ত। হেতিজের মুঠোফোনটি ছিল আইফোন। খাসোগিকে হত্যার পর দিনে পাঁচবার তাঁর ফোনে নজরদারি করা হতো। ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসওর ক্লায়েন্ট পেগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে বিভিন্ন দেশ। এসব দেশের ৫০ হাজারের বেশি নম্বরে আড়ি পাতা হয়। এই ৫০ হাজার ফোনের নম্বর তালিকায় হানান ও হেতিজের ফোন নম্বর ছিল। এ ছাড়া খাসোগির আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর ফোন হ্যাক করা হয়েছিল তাঁকে হত্যার পর। খাসোগিকে হত্যার পর যাঁরা এ তদন্তকাজে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে তুরস্কের দুজন এবং খাসোগির দুই সহযোগীর ফোন নম্বরেও আড়ি পাতা হয়। তবে এনসওর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খাসোগি বা তার পরিবারের সদস্যদের ওপর নজরদারির জন্য স্পাইওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করা হয়নি। [caption id="attachment_297767" align="aligncenter" width="640"] সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান[/caption] কিন্তু এনএসওর এ কথা ও কাজের মিল নেই। কারণ, খাসোগির স্ত্রী হানানের ফোনটি হ্যাক করা হয়েছিল পেগাসাস ব্যবহারকারী একজনের ফোন থেকেই। হানানের বোন পরিচয় দিয়ে তাঁর ফোনটিতে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছিল। এর একটি খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছিল ২০১৭ সালের নভেম্বরে। দ্বিতীয় খুদে বার্তাটি পাঠানো হয়েছিল ২০১৮ সালের এপ্রিলে। এর ছয় মাস পর খাসোগিকে হত্যা করা হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিকিউরিটি ল্যাবে ফরেনসিক বিশ্লেষণে এ চিত্র উঠে এসেছে। কিন্তু এটা ঠিক জানা যায়নি, তাঁর ফোনটি হ্যাক করা সম্ভব হয়েছিল কি না। কারণ তাঁর ফোনটি অ্যান্ড্রয়েড। তাই লগ থেকে এটা জানা সম্ভব হয়নি। নিশ্চিত হওয়া যায়নি, ওই ফোনে আসা লিংকটিতে তিনি ক্লিক করেছিলেন কি না। সম্প্রতি হানান সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ওই ঘটনা যখন ঘটেছিল, তিনি তখন খাসোগির সঙ্গে কথা বলতেন। এ সময় তাঁদের মধ্যে খুদে বার্তা বিনিময় হতো। খাসোগি তাঁকে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করতে বলতেন, যাতে তাঁরা নজরদারির বাইরে থাকতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খাসোগি আমাকে বলেছিলেন, ফোন হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটতে পারে।’ খাসোগির মৃত্যুর পর পেগাসাস ব্যবহার করেন এমন এক ব্যক্তির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় হেতিজের মুঠোফোন। হেতিজের ফোনটি ছিল আইফোন। খাসোগি হত্যার চার দিনের মাথায় হেতিজের ফোন হ্যাক করা হয়। কিন্তু তাঁর মুঠোফোন থেকে কোন ধরনের তথ্য চুরি করা হয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হেতিজে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি ধারণা করছিলাম এমন ঘটতে পারে। তবে আমি এই ঘটনায় হতাশ হয়েছি। এসব ঘটনা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে।' জাতিসংঘের পক্ষ থেকে খাসোগির হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করেছেন অ্যাগনেস ক্যালামার্ড। তিনি বলেন, খাসোগির কাছের মানুষদের এবং যাঁরা এই তদন্ত করছেন, তাঁদের নজরদারিতে পেগাসাস ব্যবহার করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App