×

জাতীয়

দাম চড়া, বেচাকেনা জমেনি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২১, ০৮:৩৫ এএম

দাম চড়া, বেচাকেনা জমেনি

ফাইল ফটো

করোনা মহামারির মধ্যেই ঢাকায় বসেছে কুরবানির পশুর ১৯টি অস্থায়ী হাট। এছাড়া গাবতলী ও সারুলিয়ায় রয়েছে দুটি স্থায়ী হাট। এই ২১টি হাটে গতকাল থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে কুরবানির পশু কেনাবেচা। প্রথমদিন খুব বেশি ক্রেতার আনাগোনা না থাকলেও বেপারি ও ইজারাদাররা আশা করছেন আজ থেকেই জমে উঠবে বিক্রি। এদিকে সিটি করপোরেশন ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হলেও তা মানতে অনাগ্রহী বেপারিরা। তাছাড়া বিদেশি পশু না আসায় গরুর দাম বাড়তি হাঁকছেন তারা। ফলে ক্রেতারা অনেকটাই চিন্তিত। শুধু দরদাম করে হাট ছাড়ছেন অনেকেই। কেউ কেউ মাঝারি সাইজের গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে এ সংখ্যা খুবই কম।

বেপারিরা দাম হাঁকছেন বেশি : গাবতলী হাট ঘুরে দেখা গেছে, বেপারিরা গরুর দাম হাঁকছেন অনেক বেশি। গরু দেখতে আসা কয়েকজন ক্রেতার মুখেও এমন কথা শোনা গেছে। নরসিংদী থেকে নাজমুল হোসেন ৬টি বড় সাইজের দেশি গরু এনেছেন শুক্রবার রাতে। গতকাল পর্যন্ত বিক্রি হয়নি একটিও। ক্রেতা এসেছেন বেশ কয়েকজন। সবচেয়ে বড় গরুটির দাম তিনি হাঁকছেন ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। পর্যায়ক্রমে তার পরেরগুলোর দাম চাচ্ছেন ৪ লাখ, ৩ লাখ ৮০ হাজার ও ২ লাখ ৭০ হাজার। ক্রেতারা দাম শুনে কথা না বলেই চলে যাচ্ছেন। তেমনি এক ক্রেতা শাহ মো. জাফর বলেন, বেপারিরা দাম চাচ্ছেন অনেক বেশি। বাজারদর দেখে গরু কিনব। এত দামে তিনি কিছুটা আশ্চর্য বলেও জানান।

১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মধ্যে গরু কিনতে চান জহিরুল কবির। পছন্দের গরু দাম করেছেন। বেপারি চান ৩ লাখ ৭০ হাজার। তার মতে, গরুটির সর্বোচ্চ দাম হবে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বাজার ঘুরে তার পর্যবেক্ষণ, বিদেশি গরু না আসায় বেপারিরা দাম বেশি চাচ্ছেন। তার আশা শেষ পর্যন্ত দাম কমাতে বাধ্য হবেন বেপারিরা।

কুষ্টিয়া থেকে গাবতলী হাটে ১৫টি গরু নিয়ে এসেছেন মনসুর মিয়া। প্রতিটি গরুই বাড়তি দাম হাঁকছেন তিনি। সন্ধ্যা পর্যন্ত একটিও বিক্রি করতে পারেননি। তবে গাবতলী, আফতাবনগর, মেরাদিয়া ও শাহজাহানপুর হাটে কয়েকটি মাঝারি সাইজের গরু বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এদিকে গাবতলী হাটে একটা উট এনেছেন আমজাদ আলী। শুধু দামই করে যাচ্ছেন ক্রেতারা। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি মানুষ দাম করেছেন। আমজাদ ২৫ লাখ টাকা দাম হাঁকলেও ক্রেতারা সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন। তবে ২২ লাখ টাকার নিচে তিনি উট বিক্রি করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিছুটা ঢাকাইয়া উচ্চারণে আমজাদ আলী বলেন, ‘উটটার বয়স হইবো ৭ বছর। মাংস হইবো কম কইরা ১০ মণ। চার দিন হয় এই বাজারে উঠাইছি। দিনে অন্তত পাঁচশজন উটের দাম জিগায়। শোনার পরে মুচকি হাসি দিয়া যায়গা। আমি জানি হেরা উট কিনতে হাটে আহে নাই। কিন্তু তারা দাম জিগায় আমি উত্তর দেই। এইটা ভালা লাগে আমার।’

স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনাগ্রহ বেপারিদের:

প্রতিটি হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। হাটের মাইকে ঘোষণা দিচ্ছে মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব মানার। তবে মাইকের এই ঘোষণাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না বেপারিরা। সিটি করপোরেশনের ৭ জন করে স্বেচ্ছাসেবী থাকলেও মানুষের ভিড়ে তারা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। সামাজিক দূরত্বেরও কোনো বালাই নেই। ক্রেতাদের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও বেপারিদের ৮০ ভাগই তা মানছেন না। যারা মানছেন, তারাও নামমাত্র। কেউ পকেটে রেখেছেন। কেউ থুতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছেন। হাটের প্রবেশপথে হাত ধোঁয়ার বেসিন ও সাবান রাখা হলেও প্রথম দিনেই তা গুরুত্ব হারিয়েছে। বালতি থেকে মগ দিয়ে পানি তোলার অনীহায় সেটা ব্যবহার করছেন না কেউই।

চুয়াডাঙ্গা থেকে শুক্রবার রাতে কয়েকজন মিলে শাহজাহানপুর হাটে মাঝারি সাইজের ৩৫টি দেশি গরু এনেছেন জাহিদুল ইসলাম। গরু বেঁধে রেখে ৫ জন গাদাগাদি বসে আড্ডা দিচ্ছেন তারা। কারো মুখেই মাস্ক নেই। জিজ্ঞেস করতেই তাদের উত্তর, মাস্ক মুখে লাগিয়ে বেশিক্ষণ থাকতে পারি না। ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে রেখেছি। দরকার হলে মুখে দেব।

এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জনসচেতনতায় এলইডি বোর্ড স্থাপন করেছে সিটি করপোরেশন। তাতে প্রচার করা হচ্ছে জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন। মানুষের ভিড়ের ঠেলায় সেদিকে নজর নেই কারো। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বেচ্ছাসেবীরা শুরুতেই হিমশিম খাচ্ছেন। তাদের বিতরণ করা লিফলেট হাতে নিয়েই ফেলে দিচ্ছেন হাটে আগতরা। শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিসংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা দক্ষিণের স্বেচ্ছাসেবী আল আমিন ফয়সাল। তিনি জানান, করোনা থেকে রক্ষায় আমরা ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে সচেতন করছি। মাস্ক ব্যবহারের অনুরোধ জানাচ্ছি। যাদের মুখে মাস্ক নেই, তাদের মাস্ক দিচ্ছি। যারা মাস্ক একেবারেই পরছেন না, তাদের হাটে ঢুকতে দিচ্ছি না। কিন্তু ভিড় বেড়ে গেলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কিছুটা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা এই স্বেচ্ছাসেবীর।

হাটে পর্যাপ্ত গরু:

শাহজাহানপুর, গাবতলী, আফতাবনগর ও মেরাদিয়া হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে গরু এসেছে। সবই দেশীয় প্রজাতির। বিভিন্ন রংয়ের। বেশির ভাগ মাঝারি সাইজের। ছোট গরুও আছে। কিছু কিছু বড় গরুরও দেখা মিলেছে। সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞায় এবার ভারত কিংবা নেপাল থেকে গরু আসেনি। তাছাড়া কাক্সিক্ষত দর না পাওয়া ও করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার উত্তরে একটি ও দক্ষিণ সিটিতে ৩টি হাটের ইজারা বাতিল হয়েছে। ফলে ওই সব হাটের নিয়মিত বেপারিদের চাপ এবার অন্য হাটগুলোতে পড়েছে। তাই তুলনামূলক গরুর সংখ্যা অনেক বেশি।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রত্যাশা:

বেপারিদের প্রত্যাশা এবার বিদেশি গরু না আসায় তারা কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পাবেন। কারণ অন্যান্য বছরে লাভ হলেও মাঝে মাঝে লোকসানের মুখও দেখতে হয়েছে তাদের। তাই এবারের সুযোগে অতীতের ক্ষতি তারা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে চান। ফলে ক্রেতাদের প্রত্যাশিত দামের দ্বিগুণের বেশি দাম হাঁকছেন তারা। তাদের প্রত্যাশা, প্রথমদিন খুব একটা বিক্রি না হলেও আজ ও আগামীকাল তারা কাক্সিক্ষত দরে গরু বিক্রি করতে পারবেন। এমনটাই জানালেন চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা বেপারি নজরুল ইসলাম। ৪টা গরু এনেছেন তিনি। মাঝারি সাইজের প্রতিটি গরুর দাম চাচ্ছেন দেড় লাখ টাকা। সেই গরু দরদাম করা ক্রেতা নুরুজ্জামান বলেন, ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা হলে ঠিক আছে। কিন্তু দেড় লাখ টাকা অনেক বেশি। তার ধারণা, প্রথম দিন হওয়ায় গরুর চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন বেপারিরা। আজকালের মধ্যে হাটে আরো অনেক গরু এসে পড়লে দাম অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App