×

জাতীয়

ঈদের পর লকডাউন নিয়ে নতুন করে ভাবছে সরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২১, ০৮:৪৯ এএম

ঈদের তৃতীয় দিন সকাল ৬টা থেকে যে লকডাউন শুরু হচ্ছে- পোশাক কারখানা তার আওতামুক্ত রাখার আর্জি জানিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্যবসায়ী নেতারা।

সূত্রমতে, সেই বৈঠকে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি কোনো বার্তা দেন, তাহলে আমি আপনাদের সেই বার্তা পৌঁছে দেব। কিন্তু বৈঠকের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সেই বার্তা পর্যন্ত আসেনি।

এছাড়াও সরকারি কর্মজীবীদের বলা হয়েছে ঈদের ছুটিতে কর্মস্থলে থাকতে। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে বহু সরকারি কর্মজীবী কর্মস্থলে না থেকে গ্রামের বাড়িতে যান। ধারণা করা হচ্ছে, এবারো তার ব্যতিক্রম হবে না। কিন্তু ঈদের তৃতীয় দিন থেকে পরবর্তী ১৫ দিনের জন্য লকডাউন শুরু হওয়ায় গ্রামের বাড়িতে যাওয়া কর্মজীবীরা ঈদের দ্বিতীয় দিনেই ঢাকায় ফিরবেন। নির্দেশনা না মেনে যারা কর্মস্থল ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাবেন তাদের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কী করবে- এটা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে উঠছে। একইসঙ্গে ঈদের তৃতীয় দিন থেকে লকডাউন শুরু হওয়ায় কুরবানি দেয়া পশুর চামড়া পরিবহনে কী হবে তা নিয়েও ধোঁয়াশা কাটছে না। পাশাপাশি ঈদের পর ১৫ দিনের লকডাউনে ব্যাংক, বিমা কীভাবে চলবে তারও কোনো নির্দেশনা আসেনি এখনো। সুপ্রিম কোর্টও নির্দেশনা দিয়ে জানায়নি দেশের বিচারালয় কীভাবে চলবে?

এছাড়া কঠোর লকডাউনের সময় চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য খালাস ও পরিবহন অব্যাহত থাকবে কিনা- সে প্রশ্নও সামনে চলে এসেছে। শিল্প কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণার কারণে রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানার উৎপাদিত পণ্য কীভাবে রপ্তানি হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় মালিকরা। শুধু তাই-ই নয়, কারখানা বন্ধ থাকলে দেশের সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি পণ্য ছাড় হবে কিনা, আর ছাড় হলেও সেগুলো কারখানায় রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিদেশ

থেকে জাহাজে কাঁচামাল এনে কারখানায় উৎপাদন, একইসঙ্গে পণ্য তৈরি করে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ এবং দেশের মধ্যে বিপণন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কল কারখানা খোলা রাখার সঙ্গে দেশের আমদানি-রপ্তানি নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। ১৪ দিন কারখানা বন্ধ রাখলে সমুদ্র বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের কী হবে? বন্দরে কন্টেইনার জট বেড়ে গিয়ে নতুন করে অচলাবস্থা তৈরি হয় কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

সবমিলিয়ে ঈদের পর শুরু হওয়া লকডাউন কেমন হবে- এই নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সত্যি সত্যি কড়া লকডাউন হবে, নাকি সীমিত পরিসরে হবে- এই নিয়ে বিভিন্নজন নিজেদের মতো করে ব্যাখা দাঁড় করাচ্ছেন। আর পোশাক কারখানার মালিকরা বলেছেন, অন্যান্যবারের মতো এবারো যদি লকডাউন থেকে তাদের বাইরে রাখা না হয় তাহলে অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতির শিকার হবে পোশাক খাত। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে লকডাউন নিয়ে নতুন করে ভাবছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত। সে অপেক্ষায়ই আছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলি খোকন গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা গত বৃহস্পতিবার বিকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে গিয়ে বলে এসেছি, অন্যান্যবারের মতো এবারো যাতে লকডাউনের সময় পোশাক কারখানা চালু রাখার অনুমতি দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমাদের জানানোর কথা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের। কিন্তু যতটুকু জানি মন্ত্রিপরিষদ সচিব গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের বার্তাটি পৌঁছাতেই পারেননি। ওখান থেকে কোনো বার্তা না পেয়ে আমরা কিছু বলব না। আশা করছি আজ রবিবার বা কাল সোমবারের মধ্যে মেসেজটি পেয়ে যাব।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বস্ত্র ও পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বিটিটিএলএমইএ ও বিজিএপিএমইএ- এই পাঁচ সংগঠনের সভাপতিরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে আগের লকডাউনের মতো আগামী লকডাউনে কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। যৌথভাবে এক চিঠিতে সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, টানা ১৪ দিন কারখানা বন্ধ থাকলে রপ্তানি আদেশ হারাতে হবে।

গতকাল জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন চুয়াডাঙ্গায় একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, শিল্পকারখানাসহ সবকিছু বন্ধ রেখে সবচেয়ে কঠোর একটা লকডাউন হতে যাচ্ছে ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। জাতীয় করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ পরামর্শ কমিটির আশঙ্কা, লকডাউন শিথিলের কারণে দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে- এর জবাবে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কথা চিন্তা করে সরকার লকডাউন শিথিল করেছে। তারমতে, কোভিড মোকাবিলার ক্ষেত্রে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি এবং তাদের পরামর্শগুলো খুবই উপযোগী। খুবই ভালো সিদ্ধান্ত তারা দেয়। কিন্তু একটি জিনিস পরিষ্কার। আমরা যত দিন পরিপূর্ণভাবে ভ্যাকসিন নিতে না পারছি, তত দিন মাস্ক পরতে হবে।

ঈদের আগে আট দিন বিধিনিষেধ শিথিলের ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই সময়ে চলাফেরার ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করলেও আমরা স্বাস্থ্যবিধি কিন্তু শিথিল করিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, কঠোর লকডাউন চলাকালে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। সীমান্তবর্তী এলাকার গ্রামগুলোতে যারা মাচায় বসে গল্প করবেন, বিজিবি তাদের বাড়িতে যেতে বলবে। অন্তত মাস্কটা পরতে বলবে। মাস্ক পরলে পরিস্থিতি যতটা নিয়ন্ত্রণ হবে, ততটাই দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো। যখনই একটি মানুষ আক্রান্ত হবে, তার পরিবার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকার যে টাকা স্কুল-রাস্তা বা অন্য উন্নয়নকাজে খরচ করতে পারত, সেই টাকা খরচ হচ্ছে কেবল মাস্ক না পরার কারণে। সে জন্য সবাইকে করোনার ঊর্ধ্বগতি টেনে ধরতে চেষ্টা করতে হবে।

গত ১৩ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে বলা হয়েছে, আগামী ২৩ জুলাই সকাল থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আবারো কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। ঈদপরবর্তী এই ১৫ দিনের কঠোর বিধিনিষেধে যেসব শর্ত আরোপ করা হয়েছে- সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। অভ্যন্তরীণ বিমানসহ সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন ও সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ থাকবে। শপিংমল/মার্কেটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে। সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। সব শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। ব্যাংকিং/বিমা/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কাজ ভার্চুয়ালি (ই-নথি, ই-মেইল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করবেন। আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন/বিক্রয়, ত্রাপ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ভিসাসংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App