×

জাতীয়

বাংলাদেশের মেয়েরা একদিন ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেবে (ভিডিও)

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২১, ১০:৫১ পিএম

বাংলাদেশের মেয়েরা একদিন ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেবে (ভিডিও)

নিবেদিতা দাশ

ঝুলিভর্তি সোনালি কাব্য। ৪৮টি স্বর্ণপদকসহ ৫৮টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদক। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৭ সাল। মাত্র ১০ বছরে মোট পদকের সংখ্যা ৭৮টি। একাধিকবার অর্জন করেছেন দেশের শ্রেষ্ঠ সাঁতারুর খেতাব। জেলা শহর রাজবাড়ীর চৌকাঠ পেরিয়ে একসময় সাঁতারের জন্য ছুটে বেরিয়েছেন বিশ্বের নানা প্রান্তরে। এরপর মাঝখানে দীর্ঘ বিরতি। জল ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষই হয়ে ওঠে ঠিকানা। কিন্তু অস্তিমজ্জায় মিশে আছে যে সাঁতারের নেশা, তার সঙ্গে কি সম্পর্ক ছিন্ন হয় কভু? একসময় সাঁতারু হিসেবে যিনি কাঁপিয়ে বেরিয়েছেন খরস্রোতা পদ্মা, পদ্মা পাড়ের সেই মেয়েটি আজ শিক্ষার্থীদের নিয়ে পাড়ি দিতে যাচ্ছেন বিশ্ব অলিম্পিকের আসরে। কোচ হিসেবে আত্মবিশ্বাসী তিনি। আজ কিংবা আগামী দিন অলিম্পিকে স্বর্ণ ছিনিয়ে এনে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে বাংলাদেশের মেয়েরা, এমনকি পাড়ি দেবে ইংলিশ চ্যানেলও- এমন আত্মবিশ্বাস তার।

তিনি নিবেদিতা দাশ। আসন্ন অলিম্পিক সাঁতারে বাংলাদেশ দলের কোচ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক চর্চা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক। গত শুক্রবার ভোরের কাগজ কার্যালয়ে এক আলাপচারিতায় টোকিও অলিম্পিকে বাংলাদেশ দল, নিজের স্বর্ণালি অতীত ও ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা জানালেন নিবেদিতা। অলিম্পিকে সাঁতারে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে নিবেদিতা দাশ বলেন, এবার দুজন প্রতিযোগী আরিফুল ইসলাম ও জুনাইনা আহমেদ অংশ নিচ্ছেন। দুজনই দেশের বাইরে প্র্যাকটিস করছেন। আশা করছি তাদের টাইমিংটা আরো এগিয়ে আসবে। প্রত্যাশা, সাঁতারে একদিন অবশ্যই স্বর্ণপদক আসবে।

ক্লাস ফোরে পড়ার সময় সাঁতারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন রাজবাড়ীর মেয়ে নিবেদিতা। স্টেডিয়ামের পাশে বাসা হওয়ার কারণে খেলাধুলার আবহেই বেড়ে উঠেছেন। তাদের বাসার পাশের পুকুরে সাঁতার প্রশিক্ষণ হতো। ছোট্ট নিবেদিতা সকাল-বিকাল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতেন ওই সাঁতার প্রশিক্ষণ। একদিন প্রশিক্ষক কৃষ্ণা বসু বললেন, আসো তোমাকেও সাঁতার শেখাব। দ্বিধা থাকলেও রাজি হয়ে যান নিবেদিতা। পরদিনই প্রশিক্ষণ শুরু। কয়েক দিন পর তাকে ৫০ মিটার ব্যাক স্ট্র সাঁতারের প্রতিযোগী করা হয়। ছোট বলে কিছুতেই জাতীয় পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেয়া হচ্ছিল না। কিন্তু পরে দেখা গেল ওই প্রতিযোগিতার একটিতে প্রথম হয়ে জাতীয়ভাবে রানারআপ পুরস্কার পান তিনি। এরপর শুধুই সামনে এগিয়ে যাওয়া। প্রতি বছরই দুটি, তিনটি স্বর্ণপদক ঝুলিতে আসে। ১৯৯৫ সালে এক বছরে ৯টি স্বর্ণপদক অর্জন করেন তিনি। এর ৬টিতেই জাতীয় রেকর্ড গড়ে সেরা সাঁতারু হন। এটি তার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা।

তবে সাঁতারুই হবেন- এমন চিন্তাভাবনা ছিল না কখনোই। বরং পড়াশোনার পাশাপাশি সাঁতারের প্রতি ছিল অসম্ভব ভালো লাগা। আর এই ভালোবাসাই তাকে এনে দিয়েছে যশ, খ্যাতি। বললেন, শামসুননাহার হল রজতজয়ন্তীর স্বর্ণপদক পেয়েছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত সম্মানজনক ব্লু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে জাতীয়ভাবে ব্যক্তিগতভাবে চারটি স্বর্ণপদক ও দুটি রৌপ্যপদক পাই। ওই সময় দলগতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে একসঙ্গে কেউ জাতীয় পর্যায়ে এত পদক অর্জন করেনি।

দেশের বাইরে ইরানে ইসলামিক গেমসে দ্বিতীয় হই, রৌপ্যপদক পাই। কিন্তু এরপরই থেমে যায় আমার সাঁতারের পথচলা। বললেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হয়েছি। হলে থাকি। তখন ক্লাসের সময়ের সঙ্গে আমার সাঁতারের সময় মিলছিল না। সাঁতারে হঠাৎ প্র্যাকটিস হয় না। সব সময় লেগে থাকতে হয়। তখন মনে হলো- অনেক খেলেছি। এবার পড়াশোনায় মনোযোগ দেই।

সাঁতারে নারীদের পথচলা আগের থেকে বর্তমানে অনেকটাই মসৃণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ থেকে ৩২/৩৩ বছর আগে পথটা এত সহজ ছিল না। মেয়েরা খেলাধুলায় এখন অনেক এগিয়ে গেছে। সুইমিংয়ের মতো একটা বিষয়ে মেয়েরা পারবে কিনা- এই প্রশ্নটি আসতো। আমার ক্ষেত্রে পরিবারের সমর্থন ছিল। বিশেষ করে বাবা এবং মেজো ভাইয়ের সহযোগিতা সব সময় পেয়েছি।

বর্তমানে সাঁতারের সংগঠক হিসেবে কাজ করছেন নিবেদিতা। এখানেই আনন্দ পান তিনি। সুইমিং ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটিতে রয়েছেন। ভলিবল ফেডারেশনের মহিলা ভলিবল কমিটির সাধারণ সম্পাদক। সংগঠক হিসেবে নারীদের খেলাধুলাকে এগিয়ে নিতে চান। সেরা সাঁতারু ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সাঁতারু তৈরির কাজ চলছে। বর্তমানে কোভিডের কারণে প্রশিক্ষণ বন্ধ রয়েছে। বললেন, বর্তমান প্রজন্ম নিয়ে আমরা অনেক আশাবাদী। এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিকভাবে আশা করি না। তাদের তৈরি করছি ভবিষ্যতের জন্য। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মেয়েরা ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেবে এমন স্বপ্ন দেখেন সাঁতারু নিবেদিতা দাশ।

https://www.youtube.com/watch?v=7yZNdEkIzvI&list=RDCMUCRpXgF0n4HQVWcZpPN2QXMQ&start_radio=1

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App