×

জাতীয়

টিকাপ্রাপ্তি বিলম্বিত হওয়ায় বিপাকে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২১, ০৯:০৬ এএম

টিকাপ্রাপ্তি বিলম্বিত হওয়ায় বিপাকে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা

রেমিট্যান্স। ফাইল ছবি

ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া-কাজ হারানোর শঙ্কা।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে রয়েছেন প্রবাসীরা। দেশে এসে আটকে পড়া প্রবাসীরা আছেন নানাবিধ সমস্যায়। আবার প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও ভাল নেই। অনেকে কাজ হারিয়ে অনিশ্চিত সময় পার করছেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও আটকা পড়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক। কাভিড -১৯ ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিয়েও দেখা দিয়েছে জটিলতা। রেমিট্যান্স বাড়ার খবর এলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় কড়া নাড়ছে বিপদ। স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমানো মানুষগুলো এখন দুঃস্বপ্নের চোরাবালি থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছেন।

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের টিকা দেয়ার বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। বিদেশগামীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তাদের গন্তব্য দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী টিকা দেয়ার সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী কর্মীদের জন্য ফাইজারের টিকা বরাদ্দ করেছেন। কারিগরি ত্রæটি এখন আর থাকবে না। বিএমইটিতে নিবন্ধিত হওয়ার পর সুরক্ষায় নিবন্ধিত হলে কর্মীরা টিকা পাচ্ছেন।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দিচ্ছি। দুই লাখ শ্রমিক নিবন্ধন করেছেন। তারা পর্যায়ক্রমে টিকা পাচ্ছেন। বিদেশগামী শ্রমিকদের জন্য ফাইজারের টিকা বরাদ্দ। তিনি বলেন, যেসব দেশে বিমান চলাচল স্বভাবিক রয়েছে এবং লকডাউন নেই সেসব দেশে নিয়মিত শ্রমিক যাচ্ছে। সৌদী আরব ও কুয়েতে লোক যাওয়া স্বাভাবিক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পুরান শ্রমিকের পাশাপাশি নতুন শ্রমিকও যাচ্ছে। লকডাউনের আগে শ্রমিক যাওয়ার হার স্বাভাবিক। তবে কতোজন শ্রমিক ফিরেছে সে ব্যাপারে তার জানা নেই বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, গত ৫ মাসে দুই লাখ শ্রমিক বিদেশে গেছেন। এরমধ্যে সৌদী আরবে এক লাখ ৪৪ হাজার ৩৮৪ জন, ইউএই ৪ হাজার ৬৩৩ জন, ওমান ১০ হাজার ৬৪২ জন, কাতার ২ হাজার ১৮ জন, জর্দান ৫ হাজার ৩৩২ জন, সিংগাপুর ১২ হাজার ১৩০ জন। মোট হিসাবে তা দাঁড়ায় এক লাখ ৯৬ হাজার ২৪০ জন। টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে দুই লাখ। ছুটিতে দেশে আসা শ্রমিকরা টিকা দিতে না পেরে কাজে ফিরতে পারছিলেন না। অনেককে টিকেট কাটার পরও তা বাতিল করতে হয়েছে। টিকার আশায় ছুটে লকডাউনে আটকে গেছেন অনেকে। এ অবস্থায় আটকে পড়া প্রবাসীরা ১ জুলাই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএমইটিরর তরফ থেকে জানানো হয়, ২ জুলাই থেকে সারা দেশে ৫৩ টি কেন্দ্রে প্রবাসী শ্রমিকদের নিবন্ধন শুরু হয়। তবে এতেও অভিযোগের অন্ত নেই।

এদিকে দুই ডোজ টিকা নিতে হলে একজনকে প্রথম দফায় নেয়ার পর আরো অন্তত ৪০ দিন অপেক্ষা করতে হয়। এই সময়ের মধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে যথাসময়ে কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন টিকা নিবন্ধন করা বিদেশগামী শ্রমিকরা।

একাধিক সৌদী প্রবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওইদেশে দুই তৃতীয়াংশ মানুষের টিকা প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। লকডাউন তুলে দেয়া হলেও কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানতে হচ্ছে সবাইকে। নিরাপত্তা বিবেচনায় সেখানে বৈধ অবৈধ সবাই টিকা পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। দেয়া হচ্ছে চার ধরনের টিকা। ইউরোপ আমেরিকার অনেক দেশ নাগরিককে টিকা দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার চেষ্টা করলেও ভাল নেই মালয়েশিয়া প্রবাসীরা।

একাধিক সূত্র মতে, একদিকে মালেশিয়া থেকে দেশে এসে কয়েক হাজার কর্মী আটকে আছেন, কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না। অন্যদিকে দেশটিতে কঠোর লকডাউনে ঘরে বসে থাকা অনেকে বেকার সময় পার করছেন। চলমান সময়ে বহুমাত্রিক সংকটে তাদের সবারই এখন আয়ের পথ বন্ধ। করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রবাহ শুরু হয়েছে এতে মালয়েশিয়ায় কর্মরতদের চাকরি সংকুচিত হয়েছে। সে দেশের সরকার আগে নিজ দেশের নাগরিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে। আবার কঠোর লকডাউনেও চলমান রয়েছে ধরপাকড় অভিযান। ‘আটক কেন্দ্র’ সংখ্যা বাড়িয়ে অবৈধ প্রবাসীদের ধরপাকড়ে নেমেছে মালয়েশিয়া পুলিশ। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জয়নুদিনের বরাত দিয়ে মালয়েশীয় গণমাধ্যম বলছে, চলমান লকডাউনের মধ্যেও অবৈধ বিদেশি অভিবাসীদের ধরপাকড় অব্যাহত থাকবে। জাতীয় নিবন্ধকরণ বিভাগ (এনআরডি) ও পুলিশদের সঙ্গে যৌথভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে অভিবাসন বিভাগ। ৬ জুন ও ২১ জুন অভিবাসন বিভাগের বড় দুটি অভিযানে ৪৭৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এর মধ্যে ১৬৪ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। একে তো কাজ নেই, তার ওপর ধরপাকড় অব্যাহত থাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের মধ্যে। ধরপাকড় অভিযানের বিষয়ে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন বলছে, এখানে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ লাখ অবৈধ বিদেশি শ্রমিক রয়েছেন। তার মধ্যে বেশির ভাগই ইন্দোনেশিয়ার। অবৈধদের মধ্যে বাংলাদেশিদের অবস্থান দ্বিতীয়। মিশন বলছে, পৃথিবীর সব দেশই অন্য দেশের অবৈধ নাগরিক থাকলে তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়। মালয়েশিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে। কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিনিয়তই যোগাযোগের মাধ্যমে এ ধরনের ব্যক্তিদের পরিচয় যাচাইপূর্বক তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে আসছে। এতে বিদেশে বৈধভাবে বসবাসরত লাখ লাখ বাংলাদেশির ভাবমূর্তির ক্ষতিসাধন হতে পারে।

জানা গেছে, গত বছরের ১৬ নভেম্বর অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধতা দিতে রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম নামে একটি প্রোগ্রাম চালু করে সরকার। রিক্যালিব্রেসি প্রক্রিয়ায় প্রথমে শুধু নির্মাণ, উৎপাদন, চাষ ও কৃষি খাতে সোর্সকান্ট্রি বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের অবৈধ বিদেশি কর্মীদের বৈধতার জন্য অনলাইনে আবেদন করার কথা ছিল। গত মাসের প্রথম দিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সংক্রমণরোধে কঠোর লকডাউনে চলে যায় সরকার। বন্ধ হয়ে যায় অফিশিয়াল কার্যক্রম। এ পর্যন্ত রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের আওতায় প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার বিদেশি অস্থায়ী জব ভিজিট পাসের (পিএলকেএস) জন্য আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজাহ জয়নুদিন। এ প্রক্রিয়া গত মাসে শেষ হয়েছে। তবে বৈধতার সময় বাড়ানো হবে কিনা, এখনো জানা যায়নি। তবে রিক্যালিব্রেশন কর্মসূচি বাড়ানোর জন্য ১৫টি দেশের ক‚টনৈতিকরা মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

অপরদিকে দুবাই থেকে দেশে ফিরে বিপাকে পড়েছেন অনেক বাংলাদেশী। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার উপক্রম হলেও টিকার জন্য এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরছেন তারা। তাদের একজন সাভার পৌর এলাকার গেন্ডা মহল্লার নূরুল ইসলাম। চার মাস ধরে বাড়িতে আছেন। টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত না হওয়ায় আটকে আছে বিদেশ যাত্রা। বিপাকে পড়ে অনেকে করছেন দালালের খোঁজ। নির্ধারিত হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভের খবরও মিলছে। গতকাল বুধবার টিকা না পেয়ে সোহরাওয়াদী হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় কমপক্ষে এক হাজারের বেশি বিদেশগামী উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের কেউ কেউ তিন/চার দিন অপেক্ষা করেও টিকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ, এক হাজার থেকে দু হাজার টাকা দিলে টিকা পাওয়া যায়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App