×

জাতীয়

মগবাজারে বিস্ফোরণের রহস্য উন্মোচন হলো না 

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২১, ০৮:৫০ এএম

মগবাজারে বিস্ফোরণের রহস্য উন্মোচন হলো না 

মগবাজারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা এখনো অজানা। ছবি: ভোরের কাগজ।

রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়ে ‘রাখি নীড়’ ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনো প্রকৃত কারণ বের করতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট, ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক পরিদপ্তর ও তিতাসের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে কেউ এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি গ্যাস থেকে বিস্ফোরণের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

তবে গ্যাসের উৎস জানায়নি সংস্থাটি। বিস্ফোরক পরিদপ্তর ভবনটিতে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতির কথা জানানোর পর মুখে কুলুপ আঁটলেও পুলিশের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই বলা হচ্ছে মিথেন গ্যাস জমে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। যদিও তিতাসের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ওই ভবনে তিতাস গ্যাসের কোনো সংযোগ ছিল না।

বিস্ফোরণের পরে গঠন করা কমিটিগুলোর এমন ভিন্ন মত ও উৎসের ঘটনা উল্লেখ না করে প্রতিবেদন দাখিল করার বিষয়টি প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে অন্তরায় হিসেবে কাজ করবে বলে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যদিও পুলিশের তদন্ত কমিটির একটি সূত্র দাবি করেছে, তিতাসের লাইনের গ্যাস জমেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ইতোমধ্যে বিষয়টির প্রমাণও পাওয়া গেছে। এরপরও অধিকতর তদন্তের জন্য বিদেশি সংস্থা জেক্সকোনের সহযোগিতা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া নাশকতার বিষয়টি আগেই উড়িয়ে দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

সিটিটিসির তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, ভবনটিতে তিতাস গ্যাসের লাইন ছিল। বিস্ফোরণের পরে গ্যাসের পাইপলাইনে মিথেন গ্যাসের অস্তিত্বও পাওয়া গেছে। মূলত ওই পাইপলাইনের গ্যাস ভবনটির নিচতলায় অবস্থিত বেঙ্গল মিট দোকানের মাংস সংরক্ষণের হিমায়িত কক্ষে গ্যাসের চেম্বার তৈরি হয়। পরে আগুনের সংস্পর্শে এসে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে।

তিতাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই বাসার গ্যাসের লাইনের সংযোগ অনেক আগে থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, তাহলে গ্যাস আসল কীভাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সূত্র জানায়, ভবনের সামনে প্রধান সড়কের নিচে সুয়ারেজ লাইনের পাশ দিয়ে তিতাসের গ্যাসের লাইন গিয়েছে। ওই লাইন থেকে বিস্ফোরণ ঘটা বাড়িটিতে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় সংযোগ লাইনের গোড়া থেকে করা হয়নি। ফলে ভবনটিতে যাওয়া পুরো পাইপে গ্যাসের সংযোগ ছিল। ওই পাইপের লিকেজ থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। ঘটনার পর ভবনটির সামনে যে জায়গা থেকে গ্যাস বের হচ্ছিল সেটিও তিতাসের। ফলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় তিতাসের গ্যাসেই ওই বিস্ফোরণ। সম্ভাব্য সব ধরনের পরীক্ষায় এর প্রমাণও পাওয়া গেছে।

অনেকে সুয়ারেজে জমে থাকা গ্যাসের কথা বলেছেন। এটি হলে মিথেন গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া যেত না। আর এটি স্পষ্ট যে, কোনো সংস্থার লাইনের গ্যাস ছাড়া এত বড় বিস্ফোরণ সম্ভব নয়। বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিদেশি একটি সংস্থার সহযোগিতা নেবে তিতাস কর্তৃপক্ষ।

পুলিশের তদন্ত কমিটির সভাপতি সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, বিস্ফোরণের পর ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সঠিক তদন্তের স্বার্থে আরো ১০ দিন সময় নেওয়া হয়েছে। আশা করি, এই সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া সম্ভব হবে।

এর আগে বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিটিটিসিপ্রধান বলেছিলেন, তারা তদন্ত করে মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েছেন। সেখানে মিথেন গ্যাসের উৎস হতে পারে তিতাসের পাইপলাইনের গ্যাস। যদি শরমা হাউজে রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজি হয় গ্যাসের উৎস, তবে সেখানে প্রোপেন বা বিউটেন পাওয়ার কথা।

এদিকে ‘জমে থাকা গ্যাসে আগুনের স্পার্ক থেকে’ ‘রাখি নীড়’ ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। তবে ‘গ্যাস কীভাবে ও কোথায় জমেছে’ সেই উৎসের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, এটি পরিষ্কার, গ্যাসের কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে। সেখানে তিতাস গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে ময়লা পানি বের হওয়ার জন্য ভবনের ভেতরে সুয়ারেজ লাইনের দুটি ‘পিট’ আছে, যেখানেও গ্যাস পাওয়া গেছে। এই দুটোর কোনো একটি থেকে গ্যাস বেরিয়ে জমে ছিল। সেখান থেকে বৈদ্যুতিক কোনো গোলযোগে এই বিস্ফোরণ ঘটে।

ফায়ার সার্ভিসের মতো গ্যাস থেকে বিস্ফোরণের কথা উল্লেখ করে তিতাস গ্যাস তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কিন্তু গ্যাসের উৎস নিশ্চিত করেনি তারা। এ বিষয়ে তিতাসের তদন্ত কমিটির প্রধান সংস্থাটির ভিজিল্যান্স ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঘটনার দুদিন পরেই আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আমরা সেখানে একটি পরিত্যক্ত লাইন পেয়েছি। সেটা বন্ধ ছিল।

এদিকে বিস্ফোরক পরিদপ্তর তদন্তে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি পেলেও তা মিথেন কিনা, তা নিশ্চিত করে বলেনি। জানতে চাইলে পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ ভোরের কাগজকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না। তদন্ত কমিটির সময় বাড়ানো হয়েছে। ঈদের পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া সম্ভব হবে। তদন্ত কমিটির প্রধান পরিদপ্তরের উপপ্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক ড. মো. আবদুল মান্নান ভোরের কাগজকে বলেন, বিষয়টি খুবই সেনসিটিভ। আমরা ঘটনার গভীরে গিয়ে তদন্ত করছি। ইতোমধ্যে তদন্তকাজ অনেকটা এগিয়েছে। আমাদের রিপোর্ট দেওয়ার পর কারো কোনো বিষয়ে আর সন্দেহ থাকবে না।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুন সন্ধ্যায় মগবাজার ওয়্যারলেস গেইটে তিনতলা ভবন রাখি নীড়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ১২ জন নিহত হয়, আহত হয় শতাধিক। বিস্ফোরণে ভবনটি ধ্বংস্তূপে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি রাস্তায় থাকা তিনটি বাস ও আশপাশের ১৪টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে এ ঘটনায় রমনা মডেল থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে অবহেলাজনিত প্রাণহানির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলাটি সিটিটিসিতে স্থানান্তর করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App