×

সারাদেশ

গাইবান্ধার চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২১, ০২:৩৪ পিএম

গাইবান্ধার চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

শুক্রবার (১৬ জুলাই) আসামি মানিক মিয়াকে গাইবান্ধা থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব-১৩। ছবি: ভোরের কাগজ

গাইবান্ধার চাঞ্চল্যকর ফুলছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রকি(২৯) হত্যা মামলার এজাহার ভুক্ত দাদন ব্যবসায়ী আসামি মানিক মিয়া(৪৫)কে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৩, সিপিসি-৩ (গাইবান্ধা)ক্যাম্পের সদস্যরা। মানিক মিয়া গাইবান্ধা শহরের সরদারপাড়া এলাকার মৃত নবাব আলীর ছেলে।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) রাত ১০টায় প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে র‌্যাব-১৩, সিপিসি-৩ (গাইবান্ধা) ক্যাম্পের অধিনায়ক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট(মিডিয়া) মাহমুদ বশির আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। শুক্রবার (১৬ জুলাই) আসামি মানিক মিয়াকে গাইবান্ধা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মানিক মিয়াকে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার নবী নগর এলাকা থেকে র‌্যাব সদস্যরা গ্রেফতার করে। র‌্যাব সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী দাদন ব্যবসায়ী মানিক মিয়া ছাত্রলীগ নেতা হত্যাকান্ডের সাথে সংস্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে। তিনি আরও জানান, নিহত আশিকুর রহমান রকির(২৯) সাথে ধৃত আসামীর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য ও বিরোধ চলে আসছিলো।

নিহত এইচ এম আশিকুর রহমান রকি ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মধ্য কঞ্চিপাড়া গ্রামের মৃত সৈদার রহমানের ছেলে। আশিকুর রহমান ২০১৫ সাল থেকে ফুলছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছে। আশিকুর রহমান তার সহকর্মী প্লাবন ও সোহেল মিয়াকে নিয়ে রোববার ১১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের পুরাতন বাজার এলাকার ঔষধের দোকান থেকে অসুস্থ্য মায়ের ঔষধ ক্রয় করে মোটরসাইকেল যোগে নিজবাড়ি ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়ায় ফিরছিলেন। তারা গাইবান্ধা-বালাসী সড়কের পুর্বপাড়া হালিম বিড়ি ফ্যাক্টরির সামনে পৌছলে আগে থেকেই ওঁত পেতে থাকা কাঞ্চন, সোহাগ, ইমরান, মানিকসহ ৬ থেকে ৭ ব্যক্তি তাদের পথরোধ করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা ছাত্রলীগ নেতা রকি, প্লাবন ও সোহেল মিয়ার উপর অতর্কিত হামলা করে। তারা আশিকুর রহমান ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।

এ সময় তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসার আগেই কাঞ্চন, সোহাগ, ইমরান ও মানিকসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহতাবস্থায় তাদের উদ্ধার করে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রকিতে মৃত ঘোষণা করে। অন্যদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উক্ত ঘটনায় নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে বাদি হয়ে গত ১২ জুলাই কাঞ্চন, সোহাগ, ইমরান, মানিকসহ ৬ থেকে ৭ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গাইবান্ধা সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান রকি হত্যার কারণ বা নেপথ্যে এলাকা বাসির অভিযোগ কাঞ্চন, সোহাগ ও মানিক গাইবান্ধা শহরের সর্দারপাড়া এলাকার মৃত নবাব আলীর ছেলে এবং সহদর(তিন ভাই)। তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চড়া সুদে দাদন(সুদের) ব্যবসার পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের পূর্বপাড়া এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, তারা গড়ে তুলেছে কাঞ্চন বাহিনী নামে ১১/১২ জনের একটি ক্যাডার বাহিনী। তাদের রয়েছে নিজস্ব টর্চার সেল। দাদনের টাকা দিতে বিলম্ব হলে বা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ওইসব ঋণ গ্রহিতাদের ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে নিজস্ব টর্চার সেলে নিয়ে এসে নির্যাতন করতো এবং বাড়ি ভিটাসহ সর্বস্ব লিখে নিতো। তাদের অত্যাচার নির্যাতনে এলাকাবাসি অতিষ্ট। সুদারু কাঞ্চনের রয়েছে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া এলাকায় দাদন ব্যবসার শাখা অফিস। সেখান থেকে ওই এলাকার মানুষকে মাসে ২০% হারে চড়া সুদে ঋণ দিতো কাঞ্চন। সুদের টাকা প্রতিমাসে ব্যর্থ হলে ঋন গ্রহীতার উপর চলতো অত্যাচার নির্যাতন। এমনকি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে নেওয়া হতো সর্বস্ব।

এসব ঘটনার একাধিক শালিশে ঋণ গ্রহীতাদের নির্যাতণের প্রতিবাদ করতো ফুলছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রকি। যে কারণে কাঞ্চন, সোহাগ ও মানিকের পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায় আশিকুর রহমান রকি। কাঞ্চন বাহিনী পথের কাটা দুর করতেই আশিকুর রহমান রকি হত্যা করা পরিকল্পনা করে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন শৃংখলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়। তারই অংশ হিসেবে গত ১১ জুলাই রাতে পরিকল্পিতভাবে আশিকুর রহমান রকিকে হত্যা করা হয়।

গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাহফুজার রহমান জানান, ফুলছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রকি হত্যার আসামি মানিক মিয়াকে র‌্যাব-১৩ গ্রেফতার করে থানায় হস্তান্তর করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। এছাড়া অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App