×

জাতীয়

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই, সদরঘাটে ঘরেফেরা মানুষের বেসামাল ভিড়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২১, ০৮:৪০ পিএম

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই, সদরঘাটে ঘরেফেরা মানুষের বেসামাল ভিড়

বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটে যাত্রীদের ব্যাপক ভিড়। ছবি: শাহাদাত হাওলাদার

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই, সদরঘাটে ঘরেফেরা মানুষের বেসামাল ভিড়

স্বাস্থ বিধি না মেনে লঞ্চে অবস্থান করছে যাত্রীরা। ছবি: শাহাদাত হাওলাদার

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই, সদরঘাটে ঘরেফেরা মানুষের বেসামাল ভিড়

গাদাগাদি করে লঞ্চে প্রবেশ করছে যাত্রীরা। ছবি: শাহাদাত হাওলাদার

বিধিনিষেধ শিথিলের প্রথম দিন আজ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে দেশের প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটে যাত্রীদের ব্যাপক ভিড় পড়ে। সন্ধ্যার পর তা রীতিমতো বেসামাল অবস্থায় রূপ নেয়। কোথাও কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি রুটেই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলোকে যাত্রা করতে দেখা গেছে। সন্ধ্যায় বরিশালগামী গ্রিন লাইনের একটি লঞ্চকে ৩২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বিআইডব্লিউটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত।

যাত্রীরা জানিয়েছেন, ঈদের পর আবারও লকডাউন শুরু হবে। তাই ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই ঢাকা ছাড়ছেন তারা।

এদিকে, ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া দিয়ে গাদাগাদি করে লঞ্চে যেতে হওয়ায় এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। যদিও লঞ্চ মালিকরা বলছেন, তারা সরকারি নিয়েম মেনেই লঞ্চ চালাচ্ছেন। ঈদের আগে লঞ্চে ভিড় থাকাটা স্বাভাবিক বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

ভোরের কাগজের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রকি আহমেদ জানান, ভোর থেকেই সদরঘাটে ভিড় জমাতে থাকেন ঈদে ঘরেফেরা দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা। তাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে নিয়মিত ভাড়ার অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ। তবে লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানতে দেখা যায়নি কোথাও। যাত্রীদের মধ্যে নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রাখতে লঞ্চের ডেকে লাল দাগ দিয়ে চিহ্ন আঁকা স্থান থাকলেও তা-ও আমলে নেয়নি কেউ। গাদাগাদি করে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে অনেক লঞ্চকে বিভিন্ন গন্তব্যে রওনা দিতে দেখা যায়। এছাড়া বিকেল থেকে বরিশালগামী লঞ্চগুলো ছাড়লেও সকাল থেকেই ঘাটে ভিড় জমাতে থাকে যাত্রীরা। এতে সদরঘাট এলাকায় অতিরিক্ত যাত্রীদের চাপে স্বাস্থ্যবিধির নাজুক অবস্থা দেখা যায়।

[caption id="attachment_296963" align="aligncenter" width="687"] স্বাস্থ বিধি না মেনে লঞ্চে অবস্থান করছে যাত্রীরা। ছবি: শাহাদাত হাওলাদার[/caption]

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার (যাপ) সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের ভিড় থাকবেই। আমরা সরকারের সব নির্দেশনা মেনেই লঞ্চে যাত্রী নিচ্ছি।

পরিবার নিয়ে চাঁদপুরগামী যাত্রী মো. সোলাইমান বলেন, আমি কেরানীগঞ্জের একটি কারখানায় কাজ করি। ঈদের আগে ভাড়া কয়েকগুন বেশি হয়। জায়গাও পাওয়া যায় না। তাই কারখানায় ছুটি নিয়ে আগেভাগেই আমরা গ্রামে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হলো। কিন্তু গাদাগাদি করে যেতে হচ্ছে। অন্যদিকে চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় আসা লঞ্চগুলোতেও যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে।

বরিশাল থেকে ঢাকায় আসা হাসিবুল আহসান জানান, একটি কাজের জন্য ঢাকায় এসেছেন তিনি। লকডাউনে আটকে ছিলাম বলে এতোদিন ঢাকায় আসতে পারিনি। ঈদের পর আবার ১৪ দিন লকডাউন। তাই কাজ শেষ করে ঈদের আগেই আবার বাড়ি রওনা দিব।

ঘাটে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী না তুলতে বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে মাইকিং করতে দেখা গেছে। এছাড়া ঈদকে ঘিরে আরও কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে ঢাকা নদী বন্দরের নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার প্রথম দিনে যাত্রীদের ভিড় বেশি। ঈদকে সামনে রেখে আরও ভিড় বাড়বে। এ জন্য বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছি। ঘাটে আগে পন্টুন ছিল ১৮টি। ঈদের জন্য নতুন ৮টি যোগ করা হয়েছে। এছাড়া ঈদকে ঘিরে বাড়তি ৩০টি লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

[caption id="attachment_296964" align="aligncenter" width="687"] গাদাগাদি করে লঞ্চে প্রবেশ করছে যাত্রীরা। ছবি: শাহাদাত হাওলাদার[/caption]

সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা: লঞ্চ, বাস, ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন না করায় দেশে করোনার সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজীব বিজ্ঞানী ড. সরোয়ার হোসেন বলেন, লকডাউনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে করোনার বিস্তার ঠেকানো। মানুষের চলাচল সীমিত হলে একজনের কাছ থেকে অন্যজনে জীবানুটি ছড়াবে কম। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা গেছে, লকডাউনকে কেন্দ্র করে যে একটা অবস্থা হয়, তাতে সংক্রমণ গ্রামগঞ্চে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, আসলে এ ধরণের বিধিনিষেধ এখানে হিতে বিপরীত হয়ে আসে। মানুষকে ঘরে রাখার জন্য লকডাউন দেওয়া হল। কিন্তু মানুষ সেটা ছুটি মনে করে গ্রামে ছোটেন।

তিনি আরও বলেন, এটা আসলে সাধারণ মানুষের সমস্যা নয়। এ দেশে বেশিরভাগ মানুষের কাজকর্ম ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড়ো বড়ো শহরমুখী। লকডাউন দিলে মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। তাই টিকে থাকার প্রয়োজনে সবাই হুমড়ি খেয়ে গ্রামে ছোটেন। আর এটা করতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি উধাও হয়ে যায়। বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে, ফেরিতে গাদাগাদি করে চলতে গিয়ে অনেকেই আক্রান্ত হয়ে পড়েন। সে আক্রান্ত ব্যক্তিটি গ্রামের বাড়ি গিয়ে নিজের অজান্তেই অন্য লোকজনের মধ্যে জীবানু ছড়িয়ে দেন। তাই লকডাউনের চেয়ে টিকা দেওয়া, মাস্ক পড়া, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর সরকারের বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App