×

জাতীয়

পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিতে সর্বত্র কৃষকের বাজার স্থাপনের আহ্বান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২১, ০৮:১৫ পিএম

পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিতে সর্বত্র কৃষকের বাজার স্থাপনের আহ্বান

‘কৃষকের বাজার এবং নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের সহজলভ্যতা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় আলোচকরা। ছবি: ভোরের কাগজ

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন হচ্ছে এবং দেশের জনগণের চাহিদা পূরণে সক্ষম হচ্ছে। কিন্তু সবজি ফলনের ভরা মৌসুমেও কৃষকগণ তাদের উৎপাদিত সবজির সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একটি যথাযথ বাজার ব্যবস্থার অভাব এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্মের কারণে কৃষকগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে ভোক্তারাও সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ সবজি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শুধু শাকসবজি নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৎস্য উপখাত এবং প্রাণীসম্পদ উপখাতেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

ঢাকা নগরবাসীর জন্য নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ‘ঢাকা ফুড সিস্টেম’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের আওতায় তারা কৃষকের বাজার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় মিরপুরের ৬ নং ওয়ার্ডের রূপনগর আবাসিক এলাকার ট-ব্লকে কৃষকের বাজার কার্যক্রমের তিনমাস মেয়াদী পরিক্ষামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট।

প্রতি শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে বিরুলিয়া থেকে ১০জন কৃষক তার কৃষিপণ্য এনে বিক্রয় করেন। যারা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যাচাইকৃত নিরাপদ সবজি উৎপাদনকারী কৃষক। এমতাবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার ‘কৃষকের বাজার এবং নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের সহজলভ্যতা’ শীর্ষক গণমাধ্যমের সাথে ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় আয়োজন করা হয়।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার জিয়াউর রহমান এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা নাঈমা আকতার।

তিনি তার উপস্থাপনায় বলেন, কৃষকের বাজার এমন একটি বাজার ব্যবস্থা, যেখানে কৃষক সরাসরি তার উৎপাদিত পণ্য ক্রেতার কাছে বিক্রি করেন। এ ধরণের বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষক ও ক্রেতা উভয় পক্ষই উপকৃত হন। এছাড়া স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখে। কৃষকের বাজার সাধারণত উন্মুক্তস্থানে আয়োজিত হয়। ফলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কাও কমে যায়।

ঢাকা শহরের জনগণের স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবারের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ‘ঢাকা ফুড সিস্টেম’ প্রকল্পের আওতায় কৃষকের বাজার কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ন্যাশনাল প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জয়নাল আবেদীন বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে পুষ্টিকর খাদ্যের যোগান প্রায় নেই বললেই চলে। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পুষ্টিকর, নিরাপদ ও সুলভ মূল্যে খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের আওতায় কৃষকের বাজারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় জনগণের খাদ্যের যোগান ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমাদের এ পরিক্ষমূলক বাজারের সাফল্যের উপর নির্ভর করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য এলাকায় আমরা এটি বিস্তৃত করতে চাই। পাশাপাশি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকাতেও আমরা কৃষকের বাজার স্থাপনের জন্য কাজ করছি।

হেলথব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডার আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন বলেন, কৃষকের বাজার মানুষকে সবজির উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে স্বচ্ছতা দেবে। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মও আমাদের দেশে কৃষকদের অবদান ও বিভিন্ন উৎপাদিত সবজি সম্পর্কে ধারণা পাবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে কৃষকের বাজার এতোটাই জনপ্রিয় যে, অনেকে কৃষকের বাজারে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে যান। এ বাজারগুলোতে কৃষি পণ্য বিক্রির পাশাপাশি বাগান করা শেখানো, রান্না করা শেখানো, স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম হয়।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সাসটেইনেবেল এগ্রিকালচার স্পেশালিস্ট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কৃষকের বাজারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এখানে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিত হবে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের হস্তক্ষেপ থাকবে না। আমরা যে শাকসবজি-ফলমূল খাই তাতে রাসায়নিক দ্রব্য/কীটনাশক ব্যবহার হয়। আবার পরিবহণ ও সংরক্ষণের জন্যও প্রচুর রাসায়নিক/কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কৃষকের বাজারের মাধ্যমে ঢাকার আশেপাশে উৎপাদিত কৃষি পণ্য সরাসরি ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করে ভোক্তার কাছে পৌছানো সম্ভব।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, আমরা জানি সুস্থ থাকতে হলে নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই এবং এক্ষেত্রে কৃষকের বাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা যদি ঢাকার আশেপাশের এলাকা থেকে ঢাকায় কৃষিপণ্য নিশ্চিত করতে পারি, পাশাপাশি প্রতিটি জেলায় কৃষকের বাজার গড়ে তুলতে পারি তাহলে পরিবহন খরচ এবং দূষণ উভয়ই কমে যাবে। ভোক্তার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহের পাশাপাশি কৃষকের বাজার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম।

আলোচনা সভায় আরো অংশগ্রহন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার নুসরাত আনোয়ার, সিটি কো-অর্ডিনেটর মো নজরুল ইসলাম, আনোয়ারুল ইসলাম, কালের কন্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, বাংলাভিশনের সাংবাদিক কাফায়েত শাকিল, ঢাকা ট্রিবিউনের সাংবাদিক সঞ্চিতা সেতু বিভিন্ন টিভি, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App