×

জাতীয়

মূল্যায়নেই এসএসসি-এইচএসসির ফলাফল, বাতিল হচ্ছে সংক্ষিপ্ত ক্লাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২১, ০৮:৪৬ পিএম

‘মূল্যায়নের মাধ্যমেই’চলতি বছরের এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আভাস দিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন। একই সঙ্গে সংক্ষিপ্ত ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা দুটো আয়োজনের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল তা থেকেও সরে আসছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পরীক্ষা দুটোর মূল্যায়নের রূপরেখা জানাতে সাংবাদিকদের সামনে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বুধবার (১৪ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি।

বিভিন্ন বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত চারটি বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে পরীক্ষাগুলোর ভবিষ্যৎ রূপরেখা আঁকছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই চারটি বিকল্প প্রস্তাবের সারাংশ হচ্ছে ‘মূল্যায়নেই ফলাফল’। অর্থাৎ পরীক্ষা একটা হবেই, কোনোভাবেই অটো পাস দেওয়া হবে না। প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের কারণে গত বছরের মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়েও এই সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানো যায়নি। ফলে মহামারিকালে কোনো পাবলিক পরীক্ষায়ও বসতে পারেনি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ায় গত ২৭ জুন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের কার্যক্রম স্থগিতও করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

গত বছর মহামারির আগে এসএসসি পরীক্ষা হয়ে গেলেও এইচএসসি পরীক্ষার আয়োজন করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ‘অটোপাস’দেওয়া হয়। এবার শুরু থেকেই ‘অটোপাস’না দেয়ার কথা বলে আসছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষা আয়োজনের পক্ষে থাকলেও ভারতে পাওয়া করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ধরন বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় সরকারকে এই বিষয়ে এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।

সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। পরীক্ষা নেওয়া না গেলে বিকল্প কী উপায়ে মূল্যায়ন করা যায়, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলার কথাও জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, এরইমধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসকে ধরে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপা হয়ে গেছে। এটাকে কেন্দ্র করে প্রথম প্রস্তাবটি হচ্ছে, বছরের শেষ দিকে এসে যদি পরীক্ষা হয় তাহলে প্রশ্নপত্রে ১০০ নম্বর উল্লেখ থাকলেও শুধু ৫০ নম্বর অথবা ৩০ নম্বরের উত্তর লিখলেই হবে। উত্তরপত্র মূল্যায়নে ১০০ নম্বর ধরে মূল্যায়ন করা হবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, এসএসসির ক্ষেত্রে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফলের ৫০ শতাংশ এবং অ্যাসাইনমেন্ট ও ক্লাস অ্যাকটিভিটিজের ওপর ৫০ শতাংশ ফলাফল নিয়ে ফল প্রস্তুত করা হতে পারে। এইচএসসির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর এসএসসির ফলের ৫০ শতাংশ, জেএসসির ২৫ শতাংশ এবং অ্যাসাইনমেন্টের ফলের ২৫ শতাংশ সমন্বয় করে ফল প্রকাশের জন্য প্রস্তুত করা হতে পারে।

এক্ষেত্রে মাধ্যমিকে আবশ্যিক বিষয়ের (বাংলা, ইংরেজি, গণিত, আইসিটি) পরীক্ষা না নিয়ে শুধু ঐচ্ছিক বিষয়ের নামমাত্র পরীক্ষা নেয়া হতে পারে বলে একটি মত রয়েছে। তৃতীয়টি হচ্ছে, রচনামূলক বা সৃজনশীল প্রশ্ন বাদ দিয়ে কেবল বহুনির্বাচনী প্রশ্নে (এমসিকিউ) পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ের দুই পত্র একীভূত করার ভাবনা রয়েছে। আবার শুধু অ্যাসাইনমেন্টের নম্বর বিবেচনায় পাবলিক পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়টিও চিন্তাভাবনায় আছে। তবে, সিদ্ধান্ত কি হচ্ছে তা সুস্পষ্টভাবে জানা যাবে শিক্ষামন্ত্রীর বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে।

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষাবোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নেহাল আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে আটকে থাকা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে আমরা এখন কিছুই বলছি না। যা বলার বৃহস্পতিবার আপনাদেরকে (সাংবাদিক) জানাবেন শিক্ষামন্ত্রী। মূল্যায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বহুজন বহু মতামত দেবেন। এরমধ্যে কোনো মত ঠিক হবে আবার কোনোটা ঠিক নাও হতে পারে। এর চেয়ে চুপচাপ থাকাই ভালো বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসএসসি ৬০ দিন ও এইচএসসি ৮৪ দিন সরাসরি ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নেয়ার যে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল তা থেকে সরে আসছে শিক্ষা প্রশাসন। এভাবে পরীক্ষা নিতে হলে কমপক্ষে আগস্টের শুরুতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। কারণ ৬০ দিন ক্লাস করোনার পর পরীক্ষার আগে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় দিতে হবে প্রস্তুতির জন্য। আবার পরীক্ষা নিতে কমপক্ষে ২৫ দিন সময় লাগবে। অন্যদিকে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ২০ থেকে ২৫ দিন বিরতি দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করতে হবে।

সে হিসেবে জুলাই মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে না পারলে কোনো অবস্থাতেই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে চলতি বছর পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে জুলাই মাস পুরোটাই ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের নীতি নির্ধারকরা বলেছেন, সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে না নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো ঝুঁকিতে তারা যাবে না।

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষাবোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নেহাল আহমেদ বলেছেন, এমন দায়িত্ব তো কেউ নিতে পারবে না। কাজেই আমার পরামর্শ বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবেই আমরা কাজ করব। সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রমা বিজয় পুরকায়স্থ বলেছেন, পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন শিক্ষামন্ত্রী। আমার কাছ থেকে জানতে চাইলে সেটা ভুল তথ্যও হতে পারে। এজন্য কোনো কিছু না বলা ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী মূল্যায়নের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন। আর এতে কোনো শিক্ষার্থী যাতে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে অনবরত কাজ করছে শিক্ষা প্রশাসন। তিনি বলেন, পরিস্থিতির কারণে ক্লাস করিয়ে যে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছিল মন্ত্রী হয়তো কাল সেই সংক্ষিপ্ত ক্লাস বাতিলের ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে বাকি তথ্যগুলোও জানাবেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি এবং এপ্রিল মাসে এইচএসসি পরীক্ষা হতো। কিন্তু করোনার কারণে গত বছর থেকে পুরো শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলো হয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ৩১ জুলাই পর্যন্ত ছুটি আছে। এই ছুটি আরো বাড়বে। এর ফলে আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা নিয়ে জটিলতা বাড়ছে।

এই সুযোগে একদল শিক্ষার্থী বহদিন ধরে দাবি করে আসছিলেন, আগেরবারের মতো তাদেরও অটো পাস দিতে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, ‘অটো পাস’না দিয়ে যে কোনো উপায়ে মূল্যায়নের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। শিক্ষা বোর্ডগুলোও একেবারে ‘অটো পাস’ দিতে চায় না। মূল্যায়নের কৌশল বের করতে এরইমধ্যে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের (বেডু) সদস্যরা রয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App