×

জাতীয়

করোনার দাপটে ডেঙ্গুর হানা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২১, ০৮:২০ এএম

করোনার দাপটে ডেঙ্গুর হানা

ফাইল ছবি

করোনার ছোবলে বিপর্যস্ত দেশ। প্রতিদিনই বাড়ছে করোনায় মৃত্যু ও রোগীর সংখ্যা। করোনা রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতেই হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এরই মধ্যে নতুন বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে পুরনো ডেঙ্গু। রাজধানীতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন ডেঙ্গু বিস্তারের মৌসুম। এই সময়ে সতর্ক না হলে করোনার বিপর্যয়ে তা নতুন মাত্র যোগ করবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন অবশ্য ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে তৎপর রয়েছে। কিন্তু মশক নিধনে নানা দুর্বলতা ও জনসচেতনতার অভাবে সুফল মিলছে কম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য তথ্য ইউনিটের (এমআইএস) সহকারী পরিচালক ও হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৮৪৪ জন। এর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬০৮ জন। আর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ২৩৬ জন। এর মধ্যে ২৩৫ জনই ঢাকায়। মাসভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯, মার্চে ১৩, এপ্রিলে ৩, মে মাসে ৪৩ এবং জুনে ২৭১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। জুলাইয়ে রোগীর সংখ্যা দেড় গুণ বেড়ে হয়েছে ৪৭৩ জন।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদিকে বর্ষা-পূর্ব মশার জরিপে রাজধানী ঢাকার চারটি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপের তথ্যমতে, নির্মাণাধীন ভবনের জমে থাকা পানি, প্লাস্টিকের ড্রাম, বালতি, পানির ট্যাংক, বাড়ি করার জন্য নির্মিত গর্ত, টব, বোতল ও লিফটের গর্তে এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। জরিপে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোড, লালমাটিয়া, সায়দাবাদ এবং উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকায় এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। জানা যায়, জরিপ যখন শুরু হয়, তখন লকডাউন চলে আসে। এতে ৯৮টি ওয়ার্ডে জরিপ করার কথা থাকলেও ৬৯টিতে করা সম্ভব হয়। একদিকে করোনা, অন্যদিকে ডেঙ্গুর হানাÑ সব মিলিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে রাজধানীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও যাতে ডেঙ্গু নিয়ে জনগণ অবহেলা না করে, সে বিষয়ে বারবারই পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আর তাই করোনা বুলেটিনেও থাকে ডেঙ্গুর প্রকোপ যাতে না বাড়ে, সে বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জরিপে উঠে আসা শুধু চারটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ওপর নির্ভর করা যাবে না। অন্যান্য এলাকায়ও ডেঙ্গুর আশঙ্কা রয়েছে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর- এই চার মাস দেশে এডিস মশার প্রকোপ বাড়ে। এ কারণে জুলাইয়ের পর থেকে ডেঙ্গু রোগীর প্রকোপও বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে বর্ষা শুরু হয়েছে। থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি, যা এডিস মশার বিস্তারে সহায়ক। সিটি করপোরেশনের উচিত হবে যেখানেই মশার প্রজননস্থল রয়েছে, সেগুলো ধ্বংস করে দেয়া। পাশপাশি নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। বাড়ির আশপাশ, ছাদ, বারান্দা ও আঙিনার টবের পানি বা ঘরের যে কোনো স্থানে জমে থাকা পানি একদিনের বেশি না রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র।

এদিকে সোমবার এক সভায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এ বছরও মন্ত্রণালয় থেকে পর্যাপ্ত লোকবল, কীটনাশক, ফগিং মেশিন এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাজিস্ট্রেট পদায়ন করা হবে, বলেছেন তিনি। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও তা নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, এখন ডেঙ্গুর মৌসুম। এ সময়টাতে বাংলাদেশে বৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকে। সেখানে এডিস মশা ডিম পাড়ে ও বংশবিস্তার করে। এডিস মশার কামড়েই ডেঙ্গু হয়। এডিস মশার বংশবিস্তারের জায়গা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মতো অপরিকল্পিত নগরায়ণে এডিস মশার বংশবিস্তারের জায়গার অভাব নেই। নানা রকমের পাত্রের ব্যবহারও হচ্ছে এখন। কোন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ, সে অনুযায়ী সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা নেবে। পানি জমে থাকলে তা নিষ্কাশন, লার্ভা পাওয়া গেলে ধ্বংস করা এবং পূর্ণাঙ্গ মশা ফগিংয়ের মাধ্যমে মেরে ফেলতে হবে। এই সব ব্যবস্থা নিয়ে যদি এডিস মশার ঘনত্ব কমিয়ে ফেলা যায়, তাহলে যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেড়ে যায়, সেখানে ডেঙ্গু বিস্তারের প্রবণতা কমে আসবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশারও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জোর দেন। তিনি বলেন, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে ডেঙ্গুর মৌসুম। এডিস মশাকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই মশক নিয়ন্ত্রণ অভিযান চালানো উচিত। কেননা এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ না করলে ডেঙ্গু বেড়ে যেতে পারে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখন থেকেই পদক্ষেপ নেয়া দরকার। সেক্ষেত্রে কীটনাশক ছিটানোর পাশাপাশি পানি জমা হয়, এমন স্থানগুলো পরিষ্কার করা উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App