×

জাতীয়

অক্সিজেন নিয়ে সংযোগের দিন-রাত ছুটে চলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২১, ০৯:৩৪ এএম

অক্সিজেন নিয়ে সংযোগের দিন-রাত ছুটে চলা

অক্সিজেন নিয়ে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি ছুটে চলছে ‘সংযোগ : কানেক্টিং পিপল’। ছবি: ভোরের কাগজ।

মুঠোফোনে কল এলেই দিন-রাত উপেক্ষা করে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে একদল তরুণ ছুটে যান নির্দিষ্ট গন্তব্যে। কারোর গন্তব্য উত্তরায়। কারোর মিরপুর। কেউ বা যান চট্টগ্রাম কিংবা সিলেট। ঢাকা, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, নওগাঁ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, শেরপুর, পঞ্চগড়, চাঁদপুরসহ দেশের প্রায় ৩৬টি জেলায় এই তরুণরা ছুটে চলেন অবিরাম। তাদের উদ্দেশ্য একটাই, করোনায় অসুস্থ মানুষের শ্বাসকষ্ট লাঘব করা। অক্সিজেনের খোঁজে রোগীর স্বজনদের দিগি¦দিক ছুটে চলার পরিবর্তে তারাই ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার। গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই এই মহৎ কাজটি করে যাচ্ছে ‘সংযোগ : কানেক্টিং পিপল’ নামের একটি সংগঠন। শুধু অক্সিজেন পৌঁছে দেয়াই নয়। সংযোগ সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ প্রাপ্ত স্বেচ্ছা রক্তদাতা সংগঠন সন্ধানীর সঙ্গে দেশজুড়ে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পরিচালনা করছে। পাশাপাশি নিঃসঙ্গ করোনাক্রান্ত রোগীদের কেয়ারগিভার সেবাও দিচ্ছে সংযোগ। কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের উদ্বেগ ও তাৎক্ষণিক পরামর্শ পেতে জরুরি ভিত্তিতে চালু করা হয়েছে সংযোগ মেডিকেল হেল্পলাইন ‘মেডিহেল্প’। নির্ধারিত কয়েকটি নম্বরে ফোন দিয়ে বিনামূল্যেই সেখান থেকে মিলবে চিকিৎসকের পরামর্শ।

সংযোগ : কানেক্টিং পিপল সংগঠনের যাত্রা শুরু ২০২০ সালের মার্চ মাসে। তখন চারদিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীর অপ্রতুলতা। মাস্ক, পিপিই নেই। দরিদ্র মানুষের ঘরে খাবার নেই। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়াতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশলী আহমেদ জাভেদ জামাল তৈরি করলেন ‘সংযোগ : কানেক্টিং পিপল’ নামের এক ফেসবুক গ্রুপ। সংযোগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে আরো কয়েকজন প্রকৌশলীসহ যুক্ত হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রতিষ্ঠার পরে করোনা বাস্তবতায় দেশের প্রায় ১০০ হাসপাতালে প্রায় ৪ হাজার মেডিকেল গাউন, ১০ হাজার মাস্ক ও ২ হাজার বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণের কাজ করে সংযোগ পরিবার। এর মধ্যে আঘাত হানে আম্ফান। আম্ফানে ভেঙে যাওয়া মানুষের ঘর, করোনায় না খেতে পাওয়া অসংখ্য মানুষের জন্য খাবার, লকডাউন আর করোনায় চাকরি হারানো মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়া, বেতন না পাওয়া নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়েও তাদের পাশে দাঁড়ায় সংযোগ।

সংযোগের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নাসিমূল আহসান ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা আক্রান্ত যে কোনো রোগী ০১৭১১৯-৩০৯৩৫, ০১৭১৭-৯০২১৬৩, ০১৮১৯-২১০৩৪৪ ও ০১৮১৭-০৪৯৯৯২ নম্বরে ফোন দিলেই আমরা রোগীর বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছি। তবে সিলিন্ডার প্রাপ্তির জন্য অবশ্যই সংযোগ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিতে হয় রোগীর পরিবারকে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংযোগের প্রায় ৬০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার ঘুরছে। সঙ্গে ২০টা অক্সিজেন কনসেনট্রেটর মেশিন। এ পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ মানুষ সংযোগের মাধ্যমে বাসায় বসে অক্সিজেন সেবা পেয়েছে। এছাড়া সিলেট ও খুলনার সরকারি হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা মেশিনও সরবরাহ করেছে সংগঠনটি। অসহায় মানুষ যাতে বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়, সেজন্য সংযোগ ‘সূবাহ জাহান-সংযোগ মেডিকেল সাপোর্ট ইনেশিয়েটিভ’ শুরু করেছে। যেখানে অসহায় রোগীদের অর্থসহায়তা জোগাড় করে দেয়ার মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেয়ার কাজটি চলমান আছে।

সংগঠনের অন্যান্য কার্যক্রম সম্পর্কে সংগঠনটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও মেডিকেল সাপোর্ট ইনিশিয়েটিভের প্রধান ডা. আসিফ জামান তুষার বলেন, করোনা রোগীদের জন্য কেয়ারগিভার সেবাও চালু করেছে সংযোগ। অনেকেই আছেন, যারা প্রবাসে থাকেন। বয়স্ক বাবা-মা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আবার অনেকেই আছেন যাদের সেবা দেয়ার কেউ নেই। তাদের কেয়ারগিভার সেবাও দিয়ে যাচ্ছে সংযোগের কেয়ারগিভার টিম। এ পর্যন্ত শতাধিক করোনা রোগী আমাদের কেয়ারগিভার সেবার আওতায় এসেছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পঞ্চাশেরও বেশি অসহায় নারী ও বেকার তরুণকে সেলাই মেশিন ও ‘সংযোগ শপ’ নামের মুদি দোকান চালু করার মধ্যে দিয়ে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা হয়েছে।

সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে সংযোগের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদ জামাল বলেন, দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবচেয়ে ভালো সময় এখন। মানুষ কষ্টে আছে। আমরা সংযোগের মাধ্যমে মানুষের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করছি। বুয়েটের সহপাঠী-বড়ভাই, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, ডাক্তার, অন্যান্য পেশাজীবী ও অসংখ্য সংযোগ স্বেচ্ছাসেবীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সংযোগ এগিয়ে যাচ্ছে। আর আছে সংযোগের ফেসবুক গ্রুপের প্রায় ৭৭ হাজার অন্তঃপ্রাণ সংযোগ বন্ধু। এই প্ল্যাটফর্মে যেহেতু নানা পেশাজীবী যুক্ত হচ্ছেন তাই ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে দেশের কল্যাণে কাজ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী এই মহৎপ্রাণ মানুষটি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App