×

সাহিত্য

দোজখের দরজা খুলে দেয়া হলো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২১, ০৮:৫৫ এএম

পরাধীন ব্রিটিশ-ভারত থেকে পাকিস্তানের কালো অধ্যায় পেরিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। এই মহান অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো নানা ঘটনা, যার কারিগর হিসেবে কেউ আখ্যায়িত হয়েছেন নায়কের অভিধায়; কেউবা আবিভূর্ত হয়েছেন খলনায়কের চরিত্রে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সেসব ঘটনা ও তার নায়ক-খলনায়কদের কার কি ভ‚মিকা, তাই নিয়েই অধ্যাপক আবু সাইয়িদের গ্রন্থ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’। সম্প্রতি ভোরের কাগজ প্রকাশন থেকে বের হয়েছে বইটি। এ বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে ভোরের কাগজের পাঠকদের জন্য।

পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যু ও প্রধানমন্ত্রী নওয়াবজাদা লিয়াকত আলী খানের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ‘অভিবাসী’ পাকিস্তানি নেতৃত্বের কর্তৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়ে। মেজর জেনারেল আকবর খান যিনি লিয়াকত আলী খানের হত্যাকাণ্ডের প্রকাশ্য ব্যক্তি তিনি কাশ্মীর যুদ্ধের পরপরই ক্যু সংঘটিত করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিলেন।

লিয়াকত আলী খানের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সামরিক জেনারেল ও বেসামরিক আমলাদের পাঞ্জাবি ক্লিক পাকিস্তানের রাজনীতিকে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক ধারার বিপরীতে টেনে নিয়ে যায়। প্রাসাদ চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র পাকিস্তানি রাজনীতিতে ক্ষমতা দখলের মৌলশক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। জনগণের ভূমিকা গৌণ হয়ে পড়ে। শাসকগোষ্ঠী ও সামরিক চক্র একদিকে, বিপরীতে নিপীড়িত শোষিত মানুষ মুখোমুখি অবস্থান গ্রহণ করে।

বস্তুত পাঞ্জাবি ক্লিক অতি সহজেই আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বলয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে আঁতাত করতে সক্ষম হয়। ভারতীয় আগ্রাসনের কাল্পনিক ভীতি ও দেশরক্ষার নামে সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা হয়। সেনাবাহিনীকে অস্ত্রসজ্জিত করতে আমেরিকা ব্যাপকভাবে সাহায্য প্রদান করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর চেপে বসে থাকা জেনারেলরা স্বাভাবিক কারণেই পাকিস্তানি রাজনীতির নেপথ্য নায়ক হয়ে দাঁড়ায়।

জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জার রাজনীতিতে আগমন সেনাবাহিনীর ক্ষমতা হস্তগত করার প্রাথমিক ব্লু প্রিন্ট। জেনারেল আইয়ুব খান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিচলানার ক্ষেত্রে বেসামরিক প্রশাসনের যে ফ্যাসাদটুকু ছিল তা ছিন্ন করে পাকিস্তানকে সামরিক রাজনীতির দৃঢ় শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে। রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। রাজনৈতিক নেতাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এবডো, প্রডো দিয়ে তাদের রাজনৈতিক অধিকার হরণ করা হয়।

রাজনীতিবিদদের ত্যাগ-তিতিক্ষাকে অপাংক্তেয় করে তোলার যাবতীয় উদ্যোগ গৃহীত হয়। বাঙালি জাতি ও বঙ্গবন্ধুসহ নেতাদের ওপর নেমে আসে নিষ্ঠুর নিপীড়ন। শাসন, শোষণ ও বৈষম্যের নিষ্ঠুর আগ্রাসনের মুখেও বাঙালি জাতি সংগ্রামের চড়াই-উৎরাইয়ের পথে ধাবমান। আইয়ুবের সামরিক স্বৈরশাসন ও পাঞ্জাবি কায়েমি স্বার্থান্বেষীদের দাপটে ক্ষুব্ধ বাঙালি জাতি বহু রক্ত, ত্যাগ ও আত্মদানের মাধ্যমে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানকে হটিয়ে দিলেও রাষ্ট্র ক্ষমতায় সেনাচক্রের ভ‚মিকা আরো প্রত্যক্ষভাবে আবিভূর্ত হয়। পাকিস্তানের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দখল করে এবং গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে পার্লামেন্টারি সিস্টেম ‘এক মাথা এক ভোট’ নীতিতে পাকিস্তানের ২৪ বছরের স্থায়িত্বকালে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।

নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার সমগ্র জীবনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি নিয়ে বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীই হলো বাঙালি জাতির প্রতিপক্ষ ও শক্তিশালী দুশমন। একথা মনে রেখেই বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করেন।

আগামীকাল প্রকাশিত হবে ‘ভুট্টো লাফিয়ে উঠলেন’ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এছাড়া সংগ্রহ করা যাবে bhorerkagojprokashan.com থেকেও।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App