×

সারাদেশ

চার দিনেও সন্ধান নেই নিখোঁজ ৯ জনের!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২১, ০৭:১৬ পিএম

নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে সেজান জুস ফেক্টরিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ভোলার চরফ্যাশনের ১০ যুবক মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসলেও ফিরেনি নিখোঁজ চরফ্যাশন ও তজুমুদ্দিন উপজেলার ৯ জন।

এসব নিখোঁজ ব্যক্তিদের বাড়িতে এখন নিরব-নিস্তব্দতা। তবে গত ৫দিনেও নিখোঁজদের কোনো সন্ধান মেলেনি। এ ৯জনই ঘটনার দিন ফেক্টরির সেমাই সেকশনে নাইট শিফটে কাজ করছিলেন বলে শ্রমিক পরিবারগুলো নিশ্চিত করেন।

নিখোঁজ ৯ পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নিখোঁজদের ভাগ্যে কি হয়েছে জানা নেই পরিবারের। নিখোঁজ ৯ জন হলেন, আসলামপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের গোলাম হোসেন মাঝি বাড়ির বাসিন্দা গোলাম হোসেনের ছেলে মহিউদ্দিন (২৫), আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ড কাদির মাঝি বাড়ির বাসিন্দা ফজলুর রহমানের ছেলে হাসনাইন (১৪), একই বাড়ির কবিরের ছেলে রাকিব (২০), এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুল মান্নানের ছেলে নোমান (২০), ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত হাফিজের ছেলে শাকিল (২৩), নজরুল নগর ইউনিয়নের চর নলুয়া ৯নং ওয়ার্ড ফখরুল হাওলাদার বাড়ির ফখরুলের ছেলে শামিম (১৮) ও মাদ্রাজ ইউনিয়নের তাজউদ্দিনের ছেলে মো. রাকিব। এছাড়াও তজুমদ্দিন উপজেলার মো. ইউছুফ, ইসমাইলের মেয়ে হাফিজা বেগম রয়েছে বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

এসব শ্রমিকরা ওই জুস ফেক্টরির সেমাই সেকশনে প্যাকেটজাতকরণ ও অন্যান্য দায়িত্বে ছিলেন বলে সূত্রে জানা গেছে। নিখোঁজদের শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছে সন্তানহারা মা বাবা ও বোন। দূর্ঘটনার আগ পর্যন্ত এসব শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের স্বজনদের যোগাযোগ ছিলো তবে অগ্নিকান্ডের পর থেকে তাদের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে বলেও এসব শ্রমিকদের পরিবার ও স্বজনরা দাবি করছেন। নিখোঁজ হাসনাইনের পিতা ফজলুর রহমান বলেন, আমার ছেলে ও রাকিব এক সঙ্গে ওই ফেক্টরির চতুর্থ তলায় কাজ করতো। দূর্ঘটনার সময় তারা ওই ফেক্টরিতেই কর্মরত ছিলো বলেও জানান হাসনাইনের পিতা।

নজরুল নগর ইউনিয়নের শামিমের মা সুলতানা বেগম বলেন, আমার ছেলে সেমাই সেকশনে কাজ করতো। বুধবার ছেলের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা হয়। তবে শুক্রবার ছেলের এক সহকর্মীর ভাই আমাদের ফোন দিয়ে জানান শামিমের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছেনা। নিখোঁজ শাকিলের শ্বশুর আবু তাহের বলেন, আমার জামাই শাকিল এতিম ছেলে তার বাবা মা বেঁচে নেই এবং তার কোনো ভাই বোনও নেই। গত ৩মাস পূর্বে আমার মেয়ে শিমা আকতারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কথা ছিলো কোরবানির ঈদে আনুষ্ঠানিকভাবে জামাই বরণ করবো। কিন্তু রুপগঞ্জ থেকে জামাইয়ের ফিরে আসা হয়নি।

আসলামপুর ইউনিয়নের মহিউদ্দিনের মা হজন নেছা প্রশ্ন করে বলেন, আমার সন্তানকে কেনো তালা মেরে রেখেছে জবাব চাই। আমার কলিজার টুকরা সন্তানকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিতে হবে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এ মা। এমন ঘটনায় অনেক স্বজনরা নিখোঁজদের সন্ধানে ঘটনাস্থলে ছুটে গেলেও ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের এতিম ছেলে শাকিলের সন্ধানে ঘটনাস্থলে কেউই যাননি বলে জনান ওই ইউনিয়নের এক জনপ্রতিনিধি।

এদিকে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ হাসেম ফ্যাক্টরীর সেমাই তৈরির সেক্টরে মোট ৪০ জন নাইট ও মর্নিং শিফটে কাজ করতেন বলে অগ্নিকান্ড থেকে ফিরে আসা শ্রমিকরা জানান। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন চরফ্যাশনের ১০ জন। এর মধ্যে চরফ্যাশন ও তজুমদ্দিনসহ জেলার ৩১ জন কাজ করতেন ফেক্টরির সেমাই সেকশনে। এর মধ্যে কতজন মারা গেছে তা এখনো বলতে পারছেন না ফিরে আসা সহকর্মীরা।

তবে ওই দিন সেমাই সেকশনের মর্নিং শিফটে কাজ শেষ করা চতুর্থতলার ৭ জন চরফ্যাশন উপজেলার হাজারিগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা। এরা হলেন, মো.আজাদ (৩০), রাসেল (২৮), রুবেল (১৬), জাহেদ (২২), সাগর (২৩) ও রাজিব। দ্বিতীয় শিফটে যারা কাজ করছিলেন, তাদের কেউ বের হতে পারেনি বলে জানান মো.আজাদ।

তিনি বলেন, ভোলা জেলার মোট ৩১ জনসহ আমরা সেমাই সেকশনে দুই শিফটে মোট ৪০ জন কাজ করি। আমরা কাজ শেষ করে বিকেলে বের হয়ে কারখানা সংলগ্ন মেসে গিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছি। এ সময় খবর পাই কারখানায় আগুন লেগেছে। দৌড়ে ঘটনাস্থলে যাই। আমাদের চরফ্যাশনের ৭জনসহ যারা চতুর্থতলায় কাজ করছিলো সেইসব সহকর্মীদের উদ্ধারের চেষ্টা করি। ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গিয়েছে ফেক্টরি। অনেকেই উদ্ধার হলেও আগুনের লেলিহানে খুঁজে পাওয়া যায়নি আমাদের অনেক সহকর্মীদের। আমাদের ৩১ জনের মধ্যে  অনেকেই পুড়ে মারা গেছে।

এছাড়াও নিশ্চিত মৃত্যু থেকে ফিরে আসা এওয়াজপুর ইউনিয়নের ইউসুফ, রাসেল ও ফয়সালকে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ওই ভবনের ছাদ থেকে উদ্ধার করেন বলেও জানান এওয়াজপুরের বাসিন্দা মো. ইউসুফ হোসেন ও বনফুল ফেক্টরির শ্রমিক জিন্নাগড় ইউনিয়নের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন।

ফিরে আসা আরেক শ্রমিক রাসেলের মা সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া আদায় করে বলেন, ছেলে ফিরে এসেছে আমরা খুশি বাকিরাও যেন বাবা মায়ের শুন্য বুকে ফিরে আসেন।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক ই লাহী চৌধুরী জানান, ইতিমধ্যে নিখোঁজ পরিবারের সঙ্গে যোগযোগ করে ওই ফ্যাক্টরিতে নিহতদের সনাক্ত করণে কাজ করা হচ্ছে।

পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, ডিএনএ টেস্ট করার জন্য স্বজনদের বলা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App