×

জাতীয়

রূপগঞ্জে হতাহত বেড়েছে চার কারণে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২১, ০৮:২৫ এএম

রূপগঞ্জে হতাহত বেড়েছে চার কারণে

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কারখানাটি আগুনে পুড়ার দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

নির্গমন পথের কলাপসিবল গেট বন্ধ ছিল, বিকল্প সিঁড়ির ব্যবস্থা নেই, পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না, ভেতরে প্রচুর ছিল দাহ্য পদার্থ।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কারখানায় ২১ ঘণ্টা পর্যন্ত আগুনে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখছে একাধিক সংস্থা। এরই মধ্যে কারখানার ভেতরকার কলাপসিবল গেট বন্ধ, জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি না থাকা, কারখানার নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা এবং প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকাকে চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। আগুনে পুড়ে কয়লা হওয়ায় ৫২ মরদেহ চেনার সুযোগ নেই। ডিএনএ টেস্ট ছাড়া শনাক্ত করা যাবে না মৃতদেহ। সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড এন্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় নিহতদের ২৫ হাজার ও আহতদের ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারী।

রূপগঞ্জের ভুলতা কর্ণগোপ এলাকার কারখানাটিতে জুস, কোমল পানীয়, চকলেট, নসিলা, লিচু, সেমাই, চানাচুর ও বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবার তৈরি হতো। এর অনেক শ্রমিকের বয়স ১৮ বছরের নিচে। ঘটনার পর থেকে কারখানার সামনে এবং ঢাকা মেডিকেল মর্গে শ্রমিকদের স্বজনরা ভিড় করেন। এখনো অনেকে খুঁজে ফিরছেন তাদের প্রিয়মুখ। কারখানাটিতে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা অনিয়মিত ছিল। এনিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নামায় কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর নাখোশ ছিল। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামিম বেপারীকে প্রধান করে গঠন করেছে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি। তারা ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিবে।

ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার ভুলতার কর্ণগোপ এলাকায় হাসেম ফুড বেভারেজ কোম্পানির কার্টন কারখানায় আগুন লাগে। আগুন নেভাতে অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট কাজ শুরু করে। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে চারতলা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর মধ্যে পুড়ে কঙ্কাল ৫২ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক। হতাহতের খোঁজে ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলায় তল্লাশি চলানো হয়। অগ্নিকাণ্ডের পর স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে পুরো এলাকা। কারখানা থেকে লাশ বের করার সঙ্গে সঙ্গে কান্নার রোল পড়ে যায়। কেউ কাঁদেন সন্তানকে হারিয়ে, আবার কেউ আহাজারি করেন মা-বাবাকে হারিয়ে। বেঁচে নেই নিশ্চিত হয়েও শুধু প্রিয়জনের দেহাবশেষ ছুঁয়ে দেখতে বুক চাপড়ান কেউ কেউ।

অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বীরপ্রতীক গোলাম দস্তগীর গাজী।

ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপসহকারী পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন গতকাল বিকালে জানিয়েছেন, ওই ভবনের চারতলায় কলাপসিবল গেট বন্ধ ছিল। ফলে কেউ সেখান থেকে বেরোতে পারেননি। মরদেহ বেশির ভাগই পাওয়া গেছে চারতলায়। তিনি বলেন, ছয়তলা ভবনটির নিচতলায় ছিল কার্টন তৈরির কারখানা। সেখানেই প্রথমে আগুন লাগে। বের হতে অনেকেই গেটের কাছে গিয়ে তালাবদ্ধ দেখতে পান। এরপর শ্রমিকরা ভবনের উপরে উঠে যান। কিন্তু সেখানে গিয়েও ভবনের ছাদ তালাবদ্ধ দেখতে পান। ফ্লোর ও ছাদের কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ না থাকলে এত হতাহত হতো না।

দেবাশিষ বর্ধন জানান, হাসেম ফুডস কারখানার একটি সিঁড়ি বন্ধ না থাকলে অনেক প্রাণ বাঁচানো যেত। গাড়ির মই সেট করে ছাদ থেকে ২৫ জনকে উদ্ধার করা হয়। বাকিরা যদি ছাদে উঠতে পারত তাদের বাঁচানো যেত। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার তালা ভেঙে ২৫ শ্রমিক ছাদে উঠতে পারলেও দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার শ্রমিকরা আর বের হতে পারেননি। এ কারণে হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটেছে। কারখানার অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাও ছিল নাজুক। সজীব গ্রুপের এই কারখানায় জুস, বেভারেজসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরি হতো। ভবনের ছাদে ওঠার জন্য দুটি সিঁড়ি রয়েছে, যার একটির ছাদের দরজা বন্ধ ছিল।

দেবাশিষ বর্ধন বলেন, চতুর্থ তলায় যারা ছিলেন, সেখান থেকে ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি তালাবন্ধ ছিল। আর নিচের দিকে সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে ছিল ভয়াবহ আগুন। শ্রমিকরা নিচের দিকেও আসতে পারেননি, তালাবন্ধ থাকায় তারা ছাদেও যেতে পারেননি। কারখানায় অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল কি না- জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, সেটা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। তদন্ত কমিটি বের করবে কী কারণে আগুন লাগল, কত টাকার ক্ষতি হলো, অগ্নি নির্বাপত্তার ব্যবস্থা ছিল কিনা। ভবনে প্লাস্টিক, ফয়েল, কাগজ, কার্টন, রেজিন, ঘিসহ খাদ্য তৈরির বিভিন্ন মালামাল ও প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন ভয়াবহ হয়ে ওঠে। এ কারণে আগুন দ্রুত অন্য ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন এক দফা নেভানোর পরও আবার জ্বলে ওঠে।

ভবন পরিদর্শন শেষে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ফায়ার সার্ভিস থেকে জানিয়েছে ভবনটির ছাদে ওঠার সিঁড়ি নেট দিয়ে বন্ধ ছিল। নেট থাকায় ছাদে উঠতে পারেননি শ্রমিকরা। যে কারণে মৃত্যু বেড়েছে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি হয়েছে। আমাদের দপ্তর থেকেই তদন্ত করা হবে।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রধান উপমহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া বলেন, ডিআইজি সেফটিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি হয়েছে। কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। উদ্ধারকাজে অংশ নেয়া ফায়ার সার্ভিসের মুস্তাফিজুর রহমান জানান, চারতলার সিঁড়ির মুখ থেকে ৪০টির বেশি মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে র‌্যাবের মহাপরিচালক আব্দুলাহ আল মামুন বলেছেন, এই অগ্নিকাণ্ড যাদের অবহেলায় হয়েছে, তাদের নাম তদন্তে বেরিয়ে আসবে। জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

সেজান জুস কারখানার এডমিন (ইনচার্জ) ইঞ্জিনিয়ার সালাউদ্দিন বলেন, ওই ভবনের প্রতিটি ফ্লোর ৩৫ হাজার স্কয়ার ফিট। কারখানায় ৭ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বৃহস্পতিবার চারতলায় প্রায় চারশ শ্রমিক কাজ করেন। বিকালে আগুনের কারণ ও সূত্রপাত সম্পর্কে তিনি ধারণা করতে পারছেন না। আগুন লাগার পর শ্রমিকরা ভয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে চারতলার কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয়া হয় বলেও জানান তিনি। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ, পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ নূসরাত জাহান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিকুল ইসলাম গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

কারখানার শ্রমিকরা জানান, প্রতি তলায় একটি করে সেকশন রয়েছে। সেখানে প্রবেশ ও বের হওয়ার গেট রয়েছে। তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা কাজ হয় কারখানায়। যখন শ্রমিকরা প্রবেশ করে এবং শিফট শেষে বের হয় তখন গেট খোলা হয়। নিচতলায় আগুন লাগলে সে খবর ওপরে দেয়াই হয়নি। এর মধ্যে আগুন দ্রুত গোটা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ এবং হতাহতের তালিকায় থাকা অনেকেরই বয়স ১৮ পার হয়নি। ইসরাত জাহান ফুলি (১৬), ফারজানা (১৪), শান্তা মনি (১৩), মৌমিতাসহ (১৬) অনেকের নাম যুক্ত হয়েছে নিখোঁজ ও হতাহতের তালিকায়। কম বেতনে শিশু-কিশোরদের কাজ করানো হতো ওই কারখানায়।

১২ বছর বয়সি শিশুশ্রমিক বিশাখা রানী ক্ষোভের স্বরে বলেন, বাবা-মাসহ তাদের ৫ বোনের সংসার। বেতন-ভাতা ও ওভার টাইম না পাওয়ায় না খেয়ে দিন কাটছিল। এ কারণে বৃহস্পতিবার শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। এই ক্ষোভে মালিক পক্ষ এই ভবনে আগুন লাগিয়ে স্বপ্না রানীসহ অন্য শ্রমিকদের হত্যা করেছে। তিনি এর বিচার দাবি করেন। নিখোঁজ শ্রমিক তাছলিমা আক্তারের বাবা আক্তার হোসেন বলেন, মালিক পক্ষের দোষে কারখানায় আগুন লাগে। তারা শ্রমিকদের চারতলায় আটকে রেখে হত্যা করেছে। নিখোঁজ শ্রমিক ওমৃতা আক্তার রানীর (১৭) বোন রোজিনা আক্তার জানান, তার বোন ওমৃতা আক্তার চারতলায় কাজ করছিল। ওমৃতা রানী বলেছিল মালিক পক্ষ তাদের আটকে রেখে জোর করে ১২ ঘণ্টা ডিউটি করায়। ঘটনার দিনও তারা কলাপসিবল গেট তালা দিয়ে রাখায় চারতলার কোনো শ্রমিক বের হতে পারেনি।

হাসেম ফুড লিমিটেড কারখানাটির যে ভবনটিতে আগুন লেগেছে সে ভবনটি বিল্ডিং কোড না মেনে করা হয়েছে। অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কারখানাটি পরিচালনা করায় এ অগ্নিকাণ্ডে সূত্রপাত হয়। শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ঠিকমতো পরিশোধ করেন না। বেতন চাইলে মালিক পক্ষ তাদের মারধরসহ ও চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেয়। কারখানায় দুটি গেট থাকলেও কর্তৃপক্ষ একটি বন্ধ করে রাখে।

উদ্ধারকাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মনির হোসেন ও পরিদর্শক ফখর উদ্দিন জানিয়েছেন, কারখানার ভেতরে প্রচুর ভোজ্যতেল পাওয়া গেছে। যার কারণে আগুন বেশি সময় ধরে জ্বলেছে। মনির হোসেন বলেন, চারতলার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একসঙ্গে অন্তত ২৫টি লাশ পাওয়া গেছে। ওই ফ্লোরে এক ধরনের নসিলা তৈরি হতো, যা তৈরিতে ভোজ্যতেল ব্যবহার করা হতো। ওই ভোজ্যতেলই মূলত জ্বালানি হিসেবে এতক্ষণ ধরে জ্বলছে। এছাড়া প্রচুর প্লাস্টিক ও কাগজের কার্টন সেখানে ছিল। তিনি বলেন, ভোজ্যতেল পাইপলাইনের মাধ্যমে পুরো ফ্লোরে বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই পাইপ ফেটে ভোজ্যতেল মেঝেতে পড়ে সাংঘাতিক পিচ্ছিল হয়ে রয়েছে।

মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে অঙ্গার হওয়া ৫২ জনের দেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। সবার ডিএনএ টেস্ট করা হবে। তবে মর্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল জানিয়েছেন, একটা মৃতদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করতে অন্তত দুই সপ্তাহ সময় প্রয়োজন। এই মর্গে ফ্রিজার ভালো আছে তিনটা। এসবে ১২টা মৃতদেহ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৫২টি মৃতদেহ যদি দুই সপ্তাহ ধরে মর্গে রাখা হয় তাহলে তা ফ্রিজারে রাখার জায়গা নেই। ফলে লাশগুলোতে পচন ধরবে। দুর্গন্ধ ছড়াবে।

গতকাল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। এ ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে নিহতদের স্বজনদের সহায়তা দেয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেসব শ্রমিক আহত হয়ে চিকিৎসাধীন তাদের শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হবে। অগ্নিকাণ্ডের পরপরই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের এ দুর্ঘটনায় হতাহতের খোঁজ এবং হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসার খোঁজ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগায় শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। গতকাল সকালে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর জেরে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে তিনটি শর্টগান লুট করে নিয়ে যায়। পরে নদী থেকে তা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সময় অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আনসারদের প্রশিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ নাছিমা বেগম বলেন, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আনসার ক্যাম্পে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় শ্রমিকরা ক্যাম্পের অস্ত্র সংরক্ষণাগারের তালা ভেঙে তিনটি শর্টগান লুট করে নেয়। এ হামলায় ৫ আনসার সদস্য আহত হন। অস্ত্র লুটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম সায়েদ বলেন, শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল ও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে র‌্যাব, ডিবি, শিল্প ও থানা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৬টার দিকে ওই কারখানার ৬ তলা ভবনের নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে ভবনটি থেকে লাফিয়ে পড়ে শ্রমিক স্বপ্না রানী (৪৫) ও মিনা আক্তার (৩৩) ঘটনাস্থলেই মারা যান। এরপর মোরসালিন (২৮) নামের একজন শ্রমিক প্রাণ বাঁচাতে ওই ভবনের তৃতীয় তলা থেকে লাফ দেন। মোরসালিনকে রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কারখানা থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫২ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App