×

সাহিত্য

ত্রিশ হাজার যন্ত্রশিল্পী অনাহারে-অর্ধাহারে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২১, ০৮:৪২ এএম

ত্রিশ হাজার যন্ত্রশিল্পী অনাহারে-অর্ধাহারে

তবলা

যে যন্ত্র সুরের সুরভি ছড়ায় সে যন্ত্রে জমেছে ধুলো, কণ্ঠও হয়ে গেছে রুদ্ধ। করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই স্থবির হাতের ছোঁয়ায় অনুরণন। এরা শুধু প্রথম সারির শিল্পীরাই নন, নামি-অনামি-বেনামি অসংখ্য যন্ত্রশিল্পী থেকে আলোশিল্পী, শব্দশিল্পী থেকে তবলাশিল্পী, গিটার থেকে ভায়োলিন এবং অন্যান্য সহকারীরাও। ভেবেছিলেন বিষের ২০ সাল বিদায় নিলেই খুলে যাবে তাদের জীবন জীবিকার পথ। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তেই আবারো লকডাউন। ফলে দেড় বছর ধরে জীবন জীবিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনাহার অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন প্রায় ত্রিশ হাজারের অধিক যন্ত্রশিল্পী।

দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে বংশীবাদনের সঙ্গে যুক্ত মো. হাসান আলি ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা মেরে ফেলেছে। দেহটা কোনোভাবে টিকে আছে। মন মরে গেছে। খুব অভাবে পড়ে গেছি। এর থেকে মৃত্যু ভালো। প্রবীণ এই শিল্পী আরো বলেন, আমি একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে স্বাধীনবাংলা বেতারের শিল্পীদের সঙ্গে বাঁশি বাজিয়েছি এবং সে সময় বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাকেও বাঁশি বাজিয়ে শোনাতাম। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আমার নেই।

বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির এ গ্রেডের তালিকাভুক্ত এবং রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত বেহালাশিল্পী সুনীল চন্দ্র দাশ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে শুয়ে আছেন। এই শিল্পী মুঠোফোনে ভোরের কাগজকে বললেন, টিউশনিসহ সব অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ থাকায় জমানো টাকা ভেঙে এতদিন চলেছি। তাও শেষ হয়ে গেছে। তার ওপর অসুস্থতায় চরম বিপদে পড়ে গেলাম। চোখে অন্ধকার দেখছি। প্রিয় ঢোলটিতে ধুলার আস্তরণ জমে গেছে দেখে বুকটা হাহাকার করছে। তিন দশক ধরে ঢোলবাদনের সঙ্গে যুক্ত মো. স্বপন মিয়ার। এই শিল্পী হতাশ কণ্ঠে বললেন, খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। মানুষজনের কাছ থেকে ধার করতে করতে ৪০ হাজার টাকা দেনা হয়ে গেছে। করোনা চলে গেলে এই পেশা ছেড়ে দিয়ে মুদি দোকানদারি করব।

দোতারাবাদক অরূপ কুমার শীল প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করতেন। কিন্তু করোনা বন্ধ করে দিয়েছে এ শিল্পীর আয়ের পথ। তিনি বলেন, গত তিন দশক ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যুক্ত আছি। সবাই চেনে জানে। এমন পরিস্থিতিতে না পারছি রিকশা চালাতে, না পারছি হাত পাততে।

কি-বোর্ড বাদক ডালিম কুমার বড়–য়ার কণ্ঠেও ঝরে পড়ল একরাশ হতাশা। এই শিল্পী বলেন, গত দেড় বছরে কোথাও থেকে কেউ একবারের জন্য খোঁজও নিল না। কোথায় আছি, কেমন আছি। কষ্ট চেপে রাখতে রাখতে শিল্পী স্বত্বা মরে গেছে, চলে গেছে মনের শান্তি। জমানো টাকা ভেঙে চলতে চলতে সবই শেষ হয়ে গেছে। বিভিন্ন টিভি

ও চ্যানেলগুলোতে ঘুরে ফিরে ২/৩টি গ্রুপকে ডেকে কাজ দেয়া হচ্ছে। বাকিদের কোনো খোঁজ নেয়া হচ্ছে না। চার দশক ধরে তবলা বাদনের সঙ্গে যুক্ত স্যামসাং সরকার প্রতি মাসে সাতটি টিউশনি করতেন। দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সেই আয়ের পথটি। তার দিকে কেউ কোনো সহায়তার হাতও বাড়ায়নি। এই শিল্পী বলেন, না খেয়ে বাড়ি ভাড়া শোধ করতে হচ্ছে। আমরা যন্ত্রশিল্পীরা এমনিতেই অবহেলিত। তারওপর করোনার ছোবলে একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেলাম।

করোনা বিদায় হোক এমন আশায় দিন গুনছেন ফ্রিল্যান্স তবলা শিল্পী শিশির রহমান। তিনি বললেন, দেড় বছর ধরে ধারদেনা করে চলছি। কতদিন এভাবে চলতে পারব জানি না। মাসে মাসে বাড়ি ভাড়া জমছে। জানি না ঢাকায় আর থাকতে পারব কিনা। হয়তো প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে যেতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App