×

জাতীয়

কারখানার ফ্লোর তালাবদ্ধ থাকায় এতো প্রাণহানি (ভিডিও)

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২১, ০৩:৩৫ পিএম

কারখানার ফ্লোর তালাবদ্ধ থাকায় এতো প্রাণহানি (ভিডিও)

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কারখানায় আগুন নিহতদের মরদেহ বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স। ছবি: ভোরের কাগজ

কারখানার ফ্লোর তালাবদ্ধ থাকায় এতো প্রাণহানি (ভিডিও)

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কারখানায় আগুন নিহতদের মরদেহ বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স। ছবি: ভোরের কাগজ

কারখানার ফ্লোর তালাবদ্ধ থাকায় এতো প্রাণহানি (ভিডিও)

আগুন লাগার পর কারখানার দিকে তাকিয়ে আছেন অসহায় স্বজন ও এলাকাবাসী। ছবি: ভোরের কাগজ

কারখানার ফ্লোর তালাবদ্ধ থাকায় এতো প্রাণহানি (ভিডিও)

নিহতের এক স্বজনের আহাজারি। ছবি: ভোরের কাগজ

কারখানার ফ্লোর তালাবদ্ধ থাকায় এতো প্রাণহানি (ভিডিও)

এমন নির্মম ট্রাজেডিতে শোক বিহ্বল ও হাহাকার করে চলা নিহতের স্বজনকে সান্ত্বনার ভাষা নেই কারো। ছবি: ভোরের কাগজ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক তাজা প্রাণ চিরকালের মতো হারিয়ে গেছে। স্বজনের হাহাকারে সেখানকার পরিবেশ এখন বুকে পাথর চেপে থাকার মতো অসহনীয় ভার হয়ে আছে। এমন মর্মান্তিক ট্রাজেডির পেছনে কারণ হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে বলছেন, ছয়তলা ভবনটির মধ্যে চতুর্থতলার শ্রমিকরা কেউ বের হতে পারেননি। সিকিউরিটি ইনচার্জ চারতলার কেচি গেটটি তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। ফলে নেমে আসে এমন বিপর্যয়। একে একে প্রাণ ঝরে যায় আগুনের নিদারুণ ছোবলে ও তাপে।

ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী বলেন, লাশ চেনার কোনো উপায়ই নেই। শুধুমাত্র কিছু অংশ পাওয়া গেছে। বেশির ভাগই ছাই হয়ে গেছে। নিহতের সংখ্যাও বলা কঠিন। অনেক লাশই ছাই হয়ে গেছে। এদিকে আরও ট্রাজিক বিষয় হিসেবে বলা হচ্ছে, নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। এই কারখানায় কর্মরতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি ছিল বলে জানা যায়।

তিনি আরও বলেন, ছয় তলা ভবনের ছাদে ওঠার জন্য দুটি সিঁড়ি রয়েছে, যার একটির ছাদের দরজা বন্ধ ছিল। চতুর্থ তলায় যারা ছিলেন, সেখান থেকে ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি তালাবন্ধ ছিল। আর নিচের দিকে সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে ছিল ভয়াবহ আগুন। উনারা নিচের দিকেও আসতে পারেন নাই, তালাবন্ধ থাকায় উনারা ছাদেও যেতে পারেন নাই।

[caption id="attachment_295580" align="aligncenter" width="844"] নিহতের এক স্বজনের আহাজারি। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুর থেকে কারখানাটি থেকে একের পর এক মরদেহ বের করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫২ জনের মরদেহ বের করা হয়েছে। আগের দিন বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত ওই কারখানায় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার ২২ ঘণ্টা পার হলেও সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও প্রচণ্ড উত্তাপে উদ্ধারকাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

[caption id="attachment_295571" align="aligncenter" width="867"] আগুন লাগার পর কারখানার দিকে কাছের একটি ভবনের ছাদ থেকে তাকিয়ে অসহায় স্বজন ও এলাকাবাসী। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

ফায়ার সার্ভিসসূত্রে জানা তথ্যেও কারখানার ফ্লোর বন্ধ থাকার তথ্য সামনে আসে। সূত্র জানায়, বেশিরভাগ লাশগুলো সিঁড়িতে, জানালার কাছে পড়ে ছিল। হয়তো তারা ছাদে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এসময় অনেকেই হয়তো জ্ঞান হারান। বাইরে থেকে তালা থাকায় অনেকেই বের হতে পারেননি উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মী দেবাশীষ বর্ধণ জানান, তারা এখনো ৫ তলা এবং ৬ তলা পর্যন্ত যেতে পারছেন না। প্রচণ্ড তাপের মধ্যে অপারেশন করা খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে লাশগুলো বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তাই সংখ্যাটা বলা কঠিন। আরও অনেক লাশ পাওয়া যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

[caption id="attachment_295581" align="aligncenter" width="867"] এমন নির্মম ট্রাজেডিতে শোক বিহ্বল ও হাহাকার করে চলা নিহতের স্বজনকে সান্ত্বনার ভাষা নেই কারো। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

তিনি আরও জানান, নিহতের সংখ্যা কম হতে পারতো যদি ৪ তলায় যারা ছিল তারা বের হতে পারতো। এই তলাটি তালাবদ্ধ থাকায় নিচ তলার আগুনের উত্তাপে তারা অনেকেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসার আগেই মারা যান, পরে আগুনটি ছড়িয়ে পড়ে। তারা উপরে বা নিচে কোথাও যেতে পারেনি।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা আরও জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ছয়তলা ভবনের চতুর্থ তলা পর্যন্ত প্রবেশ করা গেছে। সেখান থেকেই এতোগুলো মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ছয়তলা কারখানা ভবনের উপরের দুই ফ্লোরে এখনো আগুন জ্বলছে। আগুন নেভানোর কাজ চলছে এখনো। ধ্বংসস্তূপে তল্লাশিও এখনো শেষ হয়নি।

এদিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভবনে আটকাপড়ে নিখোঁজ হওয়া শ্রমিকদের উদ্ধারে দেরি হওয়ায় পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। শুক্রবার বেলা ১১টার থেকে থেকে সাড়ে ১১টায় পর্যন্ত প্রায় আধা ঘণ্টা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের ওপর এলোপাতাড়ি ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ ধাওয়া-পাল্টার ঘটনা ঘটে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সংঘর্ষ চলাকালে কারখানার প্রধান ফটকের সামনে আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে তিনটি শর্টগান লুট করে। পরে দুটি উদ্ধার হলেও একটি এখনও উদ্ধার হয়নি।

https://youtu.be/kGmPQJm61qc

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App