×

জাতীয়

লকডাউনে পিষ্ট মধ্যবিত্ত : কেউ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন আবার অনেকে হচ্ছেন কর্মহীন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২১, ০৮:১৪ এএম

লকডাউনে পিষ্ট মধ্যবিত্ত : কেউ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন আবার অনেকে হচ্ছেন কর্মহীন

অদৃশ্য এক শত্রুর কারণে গোটা বিশ্ব কঠিন দুর্যোগের মধ্য দিয়ে পার করছে। এই মহামারি কবে নাগাদ পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে সেটিও অনিশ্চিত। একের পর এক চলছে লকডাউন-শাটডাউন। এ অবস্থায় চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। বাংলাদেশে করোনার থাবায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে মধ্যবিত্তরা। কেউ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন আবার অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। নিম্ন আয়ের মানুষ সরকারি-বেসরকারি সাহায্য-সহায়তা পেলেও মধ্যবিত্ত বা সীমিত আয়ের লোকদের বেলায় সেটাও মিলছে না। এতে করে এ শ্রেণির লোকজন না পারছে অভাব অনটনের কথা বলতে, না পারছে কোনো সহায়তা নিতে। যার ফলে লকডাউনের টাইমলাইন যত বাড়ছে মধ্যবিত্তের বোবা কান্না তত বাড়ছে।

করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত চলমান লকডাউনে সারাদেশের মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাটও জনশূন্য। থমকে দাঁড়িয়েছে মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রা ও আয় রোজগার। একদিকে বাড়ছে জীবনযাত্রার খরচ অন্যদিকে কারো চাকরি যাচ্ছে, কারো কমছে বেতন। অনেকের সংসার অচল হয়ে পড়লেও তারা কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারছেন না। তাদের নিয়ে কারো নেই কোনো ভাবনাও। এ পরিস্থিতিতে ৫ম বারের মতো কঠোর লকডাউনে সবচেয়ে বেশি অসহায়ত্ব বোধ করছে মধ্যবিত্তের মানুষ। ভয়াবহ অভাব অনটন দেখা দিয়েছে মধ্যবিত্ত মানুষের মাঝে।

লকডাউনে গরিব, অসহায়-দুস্থদের মাঝে সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয় কিন্তু মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের লোকদের কোনো সহায়তা করা হচ্ছে না। তাছাড়া এই শ্রেণির লোকজন কারো কাছে অভাব-অনটনের কথাও লজ্জায় মুখ ফুটে বলতে পারছে না। অন্যদিকে অভাব-অনটনের ঋণের বোঝা বাড়ছে, বাড়ছে ব্যাংক লোনের হিসাবের খাতা, এনজিওর কিস্তির চাপও বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রণোদনা সুবিধা পাচ্ছে উচ্চবিত্তরা, মধ্যবিত্তরা হচ্ছে আরো ধরাশায়ী। তবে হাঁটা-চলা কিংবা বেশভূষায় বুকের ভেতরে থাকা চাপা কষ্ট-যন্ত্রণার ছাপ নেই। চেহারায় ভেসে ওঠা কষ্টের চাপ যেন ঢাকা পড়ছে মাস্কের আড়ালে। মধ্যবিত্তের এখন একটাই চিন্তা। কী করবেন? কোথায় যাবেন? কিভাবে চলবে সংসার খরচ? উত্তর না পেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। কয়েকটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকের ঘরে এখন খাবার নেই, লজ্জায় বলতে পারছেন না কাউকে। ইউএনও এর কাছ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস থাকলেও আইডি কার্ড প্রদর্শন, ছবি তোলার হিড়িকে আত্মসম্মান বিসর্জনের ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবার কৃষক ও স্বল্প পুঁজির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাদের অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের এক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, কাপড়ের দোকানটি একেবারে বন্ধ রয়েছে, হাতে যা নগদ অর্থ ছিল তা সবই শেষ। দোকানের মাল রয়েছে কিন্তু টাকা নেই, কীভাবে সংসার চলবে বুঝতে পারছি না। পাশের আয়েশা মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, বউয়ের অপারেশন হয়েছে, বাবা স্ট্রোক করেছে, ছোট মেয়েটাও অসুস্থ, টাকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারছি না, রোগীদের ওষুধ কিনতে পারছি না, অন্যদিকে দোকানের স্বল্প পুঁজি তাও ভেঙে ভেঙে খাচ্ছি। ব্যাংকের সুদের টাকা আসলের চেয়ে বেড়ে হয়েছে তিন গুণ। জানি না ভাগ্যে কী আছে। কথা হয় যাত্রাবাড়ী এলাকার ইলেকট্রনিক দোকানদার হানিফের সঙ্গে। স্ত্রী-সন্তানসহ পাঁচ সদস্যের সংসারের অন্ন বস্ত্রের জোগানদাতা এই মানুষটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, নিম্ন বিত্তদের নিয়ে সবাই ভাবছে, তার উপরে চালাতে পারছে রিকশা, ভ্যান, পাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা। কিন্তু আমরা কোথায় যাই, কেউ কি ভাবছে আমাদের নিয়ে, নাকি সময় আছে কারো আমাদের নিয়ে ভাবার।

রাজধানীর মানিকনগর এলাকার বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মধ্যবিত্ত একজন ব্যক্তি জানান, তিনি একটি দোকানে চাকরি করতেন। মাসে ৭ হাজার টাকা বেতন পেতেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সব মার্কেট বন্ধ করে দেয়া হয়। এর ফলে তিনি এখন বেকার সময় পার করছেন। মাসের শেষের দিকে লকডাউন ঘোষণার ফলে পকেট প্রায় ফাঁকা। তাই ভীষণ বিপাকে পড়েছেন এই ব্যক্তি। এখন কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেন না। এলাকার মুদি দোকানে ঋণের বোঝা পাহাড় সমান হয়েছে। রায়েরবাগ এলাকার মালেক নামের এক চাকরিজীবী বলেন, আমি একটি দোকানে চাকরি করে মাসে ১০ হাজার টাকা উপার্জন করতাম। কিন্তু বারবার লকডাউনের কবলে পড়ে মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করায় বেকার হয়ে পড়েছি। আর অর্থকষ্টের কথা কাউকে বলতেও পারছি না। সরকারি সহায়তাও নিতে পারছি না। কারণ কখনো কারো কাছে হাত পাতিনি। তাই উভয় সংকটে পড়েছি। কাউকে বলতেও পারছি না এই সংকট মোকাবিলাও করতে পারছি না।

জানা গেছে, মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের ব্যক্তিরা উপার্জনের টাকা দিয়ে সংসার চালায়। এর মধ্যে অধিকাংশের পক্ষে কোনো সঞ্চয় করা সম্ভব হয় না। কোনো রকমে খেয়েপরে দিন কাটায় এই শ্রেণির ব্যক্তিরা। এর মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের খড়গ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App