×

সারাদেশ

মোরেলগঞ্জে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২১, ০৯:৫৯ পিএম

মোরেলগঞ্জে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা

পরিশ্রম ও বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করার পর এখন পশুর বাজার ও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা

করোনার সংক্রমণ বাড়ায় কোরবানির আগে লকডাউন শুরু হওয়ায় কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার খামার মালিকেরা। সারা বছর খামারে পরিশ্রম ও বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করার পর এখন পশুর বাজার ও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকার সারাদেশে কঠোর লকডাউন ঘোষনা করছে। লকডাউনের মেয়াদও বাড়ছে। এদিকে কোরবানির বাকি দুসপ্তাহ। খামারীরা বলছেন, গত বছরের মতোই এখন পর্যন্ত দেখা নেই ব্যাপারীদের। এই উপজেলায় এবার প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা এবং তাদের সঙ্গে মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।

মোরেলগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি গরুর খামার। এর মধ্যে উপজেলার বারইখালী, নিশানবাড়িয়া, জিউধারা, দৈবজ্ঞহাটি, খাউলিয়া সহ কয়েকটি ইউনিয়নে রয়েছে সবচেয়ে বেশি গরু মোটাতাজাকরণ খামার।

এছাড়াও বিশেষ করে যারা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সীমিত আকারে গরু পালন করেছেন তারা এ বছর উপযুক্ত দামে গরু বিক্রি নিয়ে সংশয়ে আছেন ।

এই উপজেলায় কোরবানিযোগ্য পশুপালনকারী খামারিদের প্রত্যাশা ছিল, ঈদের আগে হাটে পশু বিক্রি করে মুনাফা করবেন। কিন্তু তাদের জন্য ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে মহামারি করোনাভাইরাস। খামারিরা বলছেন, প্রতিবছর কোরবানির হাট শুরুর মাস খানেক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার গরুর ব্যাপারীরা এসে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে গরু কেনা শুরু করেন।

তবে করোনা পরিস্থিতিতে এবার গরু কেনায় তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না ব্যাপারীদের মধ্যে। তাদের দাবি, করোনার কারণে বিগত বছরের চেয়ে সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সে অনুযায়ী, গরু দামও বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে জেলার সব পশুহাট বন্ধ রয়েছে। ফলে গরু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

এদিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের দেয়া তথ্যমতে, এবারের কোরবানির জন্য মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার ৭৬৮ টি গবাদিপশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে গরু ২১৮৮ টি, মহিষ ৫০ টি, ছাগল ১,১৬৮ টি, ভেড়া ৫০ টি, বাজা গাভী ১,১৩৩ টি, বলদ ১,১৭৮ টি । এখনো এর ৭০ ভাগ গরু বিক্রয় বাকী রয়ে গেছে।

বারইখালী গ্রামের খামারি আবুল কালাম শেখ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে পশু বিক্রি করে ন্যায্যদাম পাওয়া নিয়ে চিন্তায় আছি। কারণ একটি গরুর জন্য দিনে ১৫০ -১৮০ টাকা খরচ হয়। প্রতিদিন গরুগুলোকে খৈল, ভুসি, কুড়ো ও কাঁচা ঘাস দিতে হয়।

তিনি আরও বলেন, এবার গরু বিক্রি করে লাভ করতে পারবো কি-না তা নিয়ে চিন্তায় আছি। কিন্তু পশু বিক্রি না করতে পারলে সাত-আটমাস ধরে খাটানো টাকার অনেকটাই লোকসানে যাবে। পরের কোরবানি পর্যন্ত এসব পশুপালনে অনেক টাকা খরচ হবে।

একই উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের গুয়াতলে গ্রামের একজন নারী খামারি মাসুমা বেগম বলেন, ছয়মাস আগে এক বস্তা গমের ভুসির দাম ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। আগে যে খৈলের দাম ছিল ৩০-৩২ টাকা কেজি। করোনাকালে তা কিনতে হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা দরে। শুধু ভুষি ও খৈলই নয়, সব গো-খাদ্যের দাম গড়ে ২০-২৫ ভাগ বাড়ছে।

পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের ভাইজোড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, সারা বছরই আমরা গরু কেনাবেচার মধ্যে থাকি। কোরবানির আগের কিছুদিন সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে গত দু’ মাস ধরে নিয়মিত হাট বসছে না। আর কোরবানির আগ মুহূর্তেও হাট বসার সম্ভাবনাও খুবই কম। এমতাবস্থায় কোনোভাবেই ভালো ব্যবসার আশা করা যাচ্ছে না।

উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নের পাইকারি গরু ব্যবসায়ী আব্দুল আলিমও প্রায় একই কথা বলেছেন। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিনটি গরু কিনে লালন-পালন করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রির আশঙ্কায় আছেন খাউলিয়ার হুমায়ুন কবির।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জি এম কুদ্দুস ভোরের কাগজকে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কোরবানি উপলক্ষে গরু পালন করে থাকেন খামারিরা। আমাদের পক্ষ থেকে পশু পালনকারীদের প্রাকৃতিকভাবে পশু মোটাতাজাকরণে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। খামারিরা সেভাবে পশুপালন করেছেন। প্রাকৃতিক উপায়ের তুলনায় রাসায়নিকভাবে মোটাতাজা করলে খরচ বেশি হয় এবং ঝুঁকিও কম থাকে। গ্রাম পর্যায়ে পশু পালনকারীরা এসব বুঝতে পেরেছেন। করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের কার্যক্রম একদিনের জন্যও থেমে থাকেনি।

করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির বাজার কিছুটা মন্দা হতে পারে বলে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্থাৎ যেসব জায়গায় বেশি পশু বিক্রি হয়, সেসব এলাকায় সামাজিক দূরত্ব মেনে পশুর হাট বসানোর চিন্তা রয়েছে।

এছাড়া অনলাইনেও পশু বিক্রির জন্য খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আমরা অনলাইনে কোরবানীর গরুর হাট নামে একটি ওয়েবসাইট ওপেন করেছি। কোরবানির আগ মুহূর্তে হাটের জন্য অপেক্ষা না করে খামারিদের অনলাইনে গবাদি পশু বিক্রির জন্য পরামর্শ দিয়েছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App