বাবুনগরীকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: নির্দোষ কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২১, ১২:০৯ এএম
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ফাইল ছবি
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, লকডাউনে বন্ধ থাকা মাদ্রাসা খুলে দিতে এবং মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকদের গ্রেপ্তার না করতে সরকারকে অনুরোধ করেছেন হেফাজত আমির। তাকে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মাদ্রাসা খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আর নির্দোষ কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। সোমবার (৫ জুলাই) রাত ১১টার দিকে এ কথা বলেন তিনি।
এ দিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় এক টানা দুই ঘণ্টা বৈঠক করেছেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা। রাত সাড়ে আটটায় তারা মন্ত্রীর ধানমন্ডি সরকারি বাসভবনে ঢোকেন এবং সাড়ে দশটায় গাড়িতে করে বেরিয়ে যান। এসময় তারা গণমাধ্যমকর্মীদের এড়িয়ে চলেন। দীর্ঘ বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে সেই প্রসঙ্গে হেফাজতের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। এর আগে অনুষ্ঠিত দুই দফা বৈঠকে তারা বন্ধ কওমি মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার দাবি সহ নাশকতার অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি জানিয়েছিলেন এই মন্ত্রীর কাছে।
জানা গেছে, সোমবার রাতে বৈঠকটি পূর্বনির্ধারিত থাকায় চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে মন্ত্রীর বাসায় আসেন হেফাজতের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীসহ চারজন। এসময় হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী এবং খাদেম নাঈম জুনায়েদ এবং শফি আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
হেফাজতের একাধিক নেতা দাবি করেছেন, সোমবার রাতে বৈঠকে পুরানো দাবিগুলি তারা নতুন করে তুলেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে নাশকতার মামলাগুলোর তদন্তকারী সংস্থা এবং বিচারাধীন মামলা আদালতের বিষয় বলে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তবে বৈঠকে যোগদানের আগে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলামের ব্যক্তিগত সহকারী মোরশেদ বিন নূর জানান, মাদ্রাসা খোলা, নেতাদের মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।
বৈঠকে পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক পদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। হেফাজত নেতারা মন্ত্রীর বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তার গাড়ি সেখান থেকে বের হয়ে যেতে দেখা যায়।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৪ মে নুরুল ইসলাম জিহাদীর নেতৃত্বে হেফাজতের নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী সম্প্রতি শুধু ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। আগে বৈঠকে থেকে তাদের মুক্তি দাবি করেছিলেন। ছিল কওমি মাদ্রাসা খুলে দেয়ার দাবিও।
এর আগে ১৯ এপ্রিলও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন হেফাজতের নেতারা।স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলাম গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালায়। এরপর পুলিশ হেফাজতের নেতাদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মামলায় বাবুনগরীর ব্যক্তিগত সহকারী ইন’আমুল হাসান ফারুকীকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের দাবি, হেফাজত নেতারা নাশকতার বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলেন, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা দখল।
উল্লেখ্য, পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযানের মধ্যে হেফাজতের আগের কমিটি ভেঙে বিতর্কিত কয়েকজনকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। তাতেও বাবুনগরীই আমির পদে থাকেন।