×

জাতীয়

নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা যেন প্রতিহিংসায় না গড়ায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২১, ১০:৩৬ পিএম

নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা যেন প্রতিহিংসায় না গড়ায়
তৃণমূল থেকে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এই নির্দেশনা কীভাবে বাস্তবায়ন করছেন সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এ নিয়ে কথা বলেছেন সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।

ইউনিয়ন ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন নেত্রকোনার আহমদ হোসেন। ছিলেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। এরপর তারাকান্দা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরও সক্রিয় ছিলেন ছাত্ররাজনীতিতে। প্রথমে স্যার এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পরে ছাত্রলীগ জাতীয় পরিষদের সদস্য হন। এরপর পর্যায়ক্রমে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। কিছুদিনের জন্য ছিলেন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। পরে ছিলেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক। এরপর একাধিকবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য ও সহসম্পাদক ছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে টানা চতুর্থবার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে তিনি প্রথমে চট্টগ্রাম বিভাগ, এরপর অবিভক্ত ঢাকা বিভাগ, পরে সিলেট, চট্টগ্রাম হয়ে আবারো সিলেট বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন। সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

আহমেদ হোসেন বলেন, সিলেট জেলা ও মহানগর, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ- এই ৫টি জেলা ইউনিট নিয়ে সিলেট বিভাগ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। উপজেলার সংখ্যা ৪০টি। সদর পৌরসভাগুলো থানার মর্যাদা। এছাড়া বাকি পৌরসভাগুলো ইউনিয়ন মর্যাদার। এখানে ইউনিয়ন প্রায় সাড়ে ৩০০। একুশতম জাতীয় সম্মেলনের আগে আমি এই বিভাগের দায়িত্বেই ছিলাম। তখন সুনামগঞ্জ বাদে বাকি ৪টি জেলারই সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছিল। সুনামগঞ্জের মেয়াদ তখনো শেষ হয়নি। এখন মেয়াদ শেষ হয়েছে। গত দেড় বছর আমি চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে ছিলাম। এখন ৩ মাস ধরে আবার সিলেটে কাজ করছি। সুনামগঞ্জসহ যে কয়েকটি উপজেলা বাকি আছে সেগুলোতে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েছি। হবিগঞ্জের কয়েকটি বাদে প্রায় সব উপজেলায়ই সম্মেলন হয়েছে। কমিটিও পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই বাকি উপজেলাগুলোর সম্মেলন শুরু করব। দেড় বছরে অনেক কাজ হতো। বৈশ্বিক মহামারির কারণে হয়নি। এই মুহূর্তে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে বাঁচানোর ওপরই বেশি জোর দিচ্ছেন। আমাদের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।

সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সিলেট বিভাগে সাংগঠনিক তেমন সংকট নেই। সব সমস্যার সমাধান হয়েছে। তৃণমূলের প্রতিটি জায়গায় সংগঠন ভালো অবস্থায় আছে। মাঝেমাঝে কিছু সমস্যা হলে সেগুলো স্থানীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে প্রয়োজনে বসে সমাধান করি। এখন কাজ পার্টির কার্যক্রম সচল করা। এটি করতে হলে গণজমায়েত করতে হবে, কর্মিসভা করতে হবে। এখন সেটা সম্ভব নয়।

উপজেলা ও ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহজে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে চায় না, এরকম প্রবণতা আছে কী না- জবাবে তিনি বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে প্রথমে ওয়ার্ড কমিটি হয়। এরপর একই প্রক্রিয়ায় ইউনিয়ন কমিটি, উপজেলা কমিটি এবং জেলার সম্মেলন। সর্বশেষ হয় জাতীয় সম্মেলন। ২১তম সম্মেলনের পর দেড় বছর অতিক্রম হয়েছে। কমিটিতে ঢুকতে অনেকেই প্রতিযোগিতা করেন। এজন্য তৃণমূলের এসব ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের পুর্ণাঙ্গ কমিটি করতে একটু দেরিতে হয়। এই বিষয়গুলো জেলা ও উপজেলা কমিটিকে কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়ে থাকি, দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার। তারা সেগুলো করেন। আমরা সেগুলো মনিটরিং করি।

দলীয় কোন্দল সম্পর্কে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী অনেক বড় দল। এই দলে নেতাকর্মীর সংখ্যা অনেক। কর্মী থেকে নেতা হতে চায় অনেকেই। এজন্য প্রতিযোগিতা চলে। আর এই প্রতিযোগিতা প্রতিহিংসায় নিয়ে গেলে কিছুটা সমস্যা হয়। সিলেট বিভাগের এই ধরনের সাংগঠনিক কোনো সংকট নেই। সাংগঠনিক প্রতিযোগিতা আছে। প্রতিযোগিতা আর কোন্দল এক নয়। প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই নেতৃত্বের বিকাশ হয়। সুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব তৈরি হয়। এটা ভালো। এখানে কোন্দলের কিছু দেখছি না।

টানা তিন মেয়াদে দল ক্ষমতায় থাকায় কমিটির বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন দল থেকে ঠাঁই পেয়েছেন অর্থাৎ অনুপ্রবেশ ঘটেছে। অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে দলীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, সব জেলা কমিটি হয়ে গেছে। অনেক উপজেলাও হয়ে গেছে। এসব কমিটিতে পরীক্ষিত, ত্যাগী ও দুর্দিনের ছাত্রলীগ থেকে আসারা ঠাঁই পেয়েছেন। কমিটিতে কোনো অনুপ্রবেশকারী নাই। যাচাই-বাছাই করেই কমিটি করা হয়েছে। এসব কমিটি নিয়ে কোনো বিতর্কও নাই। যা শোনা যায়, সেগুলো কান কথা। আমরা কোনো কান কথা বিশ্বাস করি না।

তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য আহমদ হোসেন বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের ভিত্তি। তাদের শক্তিই এ দলের নির্ভরতা। নেতাকর্মীর প্রতি অনুরোধ জানাব, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে যে আহ্বান জানিয়েছেন তৃণমূল থেকে সংগঠনকে আবার নতুন করে ঢেলে সাজাতে। সেদিকে সবাই নজর দেবেন। কারণ তৃণমূলের শক্তির ওপর ভিত্তি করেই অন্যান্য ইউনিটগুলো গড়ে ওঠে। তৃণমূল দুর্বল হলে, সংগঠন শক্তি হারায়। সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে হবে, সুশৃঙ্খল করতে হবে। একইভাবে দেশের সমস্যা সমাধানে দলের কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App