কোপা আমেরিকার প্রথম সেমিফাইনালে মঙ্গলবার ভোরে ব্রাজিলে বিপক্ষে মাঠে নামবে পেরু। ব্রাজিলিয়ার স্তাদিও ন্যাশনাল গারিনচা স্টেডিয়ামে আগামীকাল বুধবার সকাল ৭টায় দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা মোকাবিলা করবে কলম্বিয়া। কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে ইকুয়েডরকে ৩-০ গোলে হারিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। তবে ২০১৯ সালের সেমিতে ব্রাজিলের বিপক্ষে হেরে বিদায় নিতে হয় তাদের। এর আগে ২০১৫-১৬ আসরের ফাইনালেও খেলেছিল লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা। কিন্তু দুবারই চিলির বিপক্ষে হেরে রানার্সআপ হতে হয় সাদা-নীল জার্সিধারীদের।

অন্যদিকে মঙ্গলবার ভোর পাঁচটায় পেরুর বিপক্ষে খেলতে নামে ব্রাজিল। শক্তি ও আক্রমণের দিক দিয়ে ব্রাজিল এগিয়ে থাকায় পেরুর বিপক্ষে তারা ভালো ফলাফল করবে এমন বিশ্বাস ছিল সবার। এবারের কোপায় শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার ছিল ব্রাজিল। তারা প্রথম থেকেই বেশ ভালো খেলেছে। যদিও নেইমাররা কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে চিলির বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জয় তুলে নিতে পারেনি। কিন্তু গ্রুপপর্বে তারা আধিপত্য দেখিয়েছিল। অন্যদিকে আর্জেন্টিনাও প্রথম থেকেই বেশ ভালো খেলছে। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা দুদলই আলাদা আলাদাভাবে সেমিতে জায়গা করে নেয়ায় দর্শকদের সামনে কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল দেখার সুযোগ তৈরি হয়। দুদলই প্রথম থেকে ভালো খেলায় এবার আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মধ্যে শিরোপা নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে তা আগে বোঝা যাচ্ছিল। চির প্রতিদ্বন্দ্বি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা প্রায় সমান সমান খেলায় প্রশ্ন ওঠছে শেষ পর্যন্ত কোপায় রাজত্ব করবে কে? মানে শিরোপা জিতবে কে?।

এবারের কোপা আমেরিকা আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসির জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই আসরটি তার ক্যারিয়ারের শেষ কোপা আমেরিকা হতে পারে। মেসি ক্লাবের হয়ে অনেক কিছু অর্জন করলেও এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনার জার্সিতে কোনো শিরোপা জয় করতে পারেননি। তার কপালটা এতটাই খারাপ যে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ, ২০১৫-১৬ সালের কোপার ফাইনালে খেললেও প্রতিবার হতাশ হয়েছে তাকে। খুশি থাকতে হয়েছে রানার্সআপ হয়ে। এখন কাতারে হতে যাওয়া ২০২২ বিশ্বকাপের আগে জাতীয় দলের হয়ে শিরোপা জয়ের জন্য মেসির এটি সবচেয়ে বড় সুযোগ। মেসি নিজেও কোপায় এবার বেশ ভালো খেলছেন। তিনি এখন পর্যন্ত চারটি গোল করে শীর্ষে আছেন। আবার ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমারের জন্যও এবারের কোপা আমেরিকাটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তার দল সর্বশেষ কোপা আমেরিকার শিরোপা জয় করলেও তিনি ছিলেন না। ইনজুরির কারণে তাকে মাঠের বাইরে বসে দলের শিরোপা উৎসব দেখতে হয়েছে। ফলে নেইমারও যে এবার শিরোপা জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে আছেন তা সহজেই অনুমেয়। নেইমার দলের হয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত দুটি গোল করেছেন সঙ্গে সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছেনও।

কোপায় খেলা এবারে আর্জেন্টিনা দলটা এবার বেশ ভালো। লিওনেল মেসি, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া ও লওতারো মার্টিনেজরা বেশ ভালোই খেলছেন। ফলে এবার তাদের শিরোপা জয়ের বেশ বড় একটি সম্ভাবনা রয়েছে। আর আর্জেন্টিনা যদি এবার শিরোপা জয় করতে পারে তাহলে তারা উরুগুয়ের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ১৫ বার শিরোপা জয় করতে পারবে।

এখন পর্যন্ত কোপার ৪৬টি আসর হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ বার শিরোপা জয় করেছে উরুগুয়ে। ১৪ বার শিরোপা গেছে আর্জেন্টিনার ঘরে। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ নয় বার শিরোপা জয় করেছে ব্রাজিল। এখন মেসি চাইবেন নিজের ক্যারিয়ারে আর্জেন্টিনার জার্সিতে প্রথম শিরোপা জয় করতে এবং নিজের দেশকে শিখরে নিয়ে যেতে।

অন্যদিকে ব্রাজিল দলে নেইমার ছাড়াও ম্যাচ উইনার হিসেবে আছেন অধিনায়ক ক্যাসেমিরো, রিচার্লিসনের মতো খেলোয়াড়রা। ফলে যদি সত্যি সত্যি এবার দর্শকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল আর্জেন্টিনা ফাইনাল হয় তাহলে তা হবে এ বছরের সবচেয়ে সেরা ম্যাচ। এখন আর্জেন্টিনা ফাইনাল খেলবে কিনা সেটি নিশ্চিত হতে অপেক্ষা করতে হবে বুধবার সকাল পর্যন্ত।